কমলগঞ্জে বাবলী বিরল রোগে আক্রান্ত

93

পিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ থেকে :
নাম বাবলী আক্তার। বয়স মাত্র ৭ বছর। দুই বছর বয়স থেকে বিরল এই রোগে আক্রান্ত। মায়ের পেটে থাকতেই বাবা নিখোঁজ। জন্মের পর বাবাকে দেখেনি সে। বিরল দুরারোগ্য ব্যাধিতে মৃত্যু পথযাত্রী ফুটফুটে শিশুটি। বাবলীর পিতা সরফ মিয়া। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নড়তেও পারে না। পায়খানা প্র¯্রাবসহ প্রতিটা কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার মা খাতুন বেগম। দীর্ঘ ৫ বছর যাবৎ শিশুটি এই ভয়ংকর রোগের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার ছতিয়া গ্রামে। অসহায় হতদরিদ্র খাতুন বেগমের কন্যা বাবলি আক্তার (৭) আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও অজ্ঞতার কারণে অসহায় খাতুন বেগম (৩৫) কোনো সুচিকিৎসা করাতে পারছেননা শিশুটির। ভাল কোনো ডাক্তারও দেখাতে পারেননি। একদিকে জটিল রোগের যন্ত্রনা আর অন্য দিকে টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ থাকায় বাবলী দিন দিন মৃত্যূর দিকে ধাবিত হচ্ছে। পরিবারটি সরকারী সহযোগীতা কামনা করেছে। জানা যায়, উপজেলার ছতিয়া গ্রামের খাতুন বেগমের পরিবারের ৪ সন্তানের মধ্যে বাবলী আক্তার সবার ছোট। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বড় ভাই জসিম মিয়া (২০)। দিন মজুরের কাজ করেন । আগে মা খাতুন বেগম মানুষের বাড়িতে কাজ করে ও পাহাড়ে জ্বালানী সংগ্রহ করে তা বাজারে বিক্রি করে কিছু উপার্জন করতেন কিন্তু বর্তমানে বাবলির দেখাশুনা করার জন্য বাড়ির বাইরে যেতে পারেন না তিনি। অভাবের কারণে বাবলীর বড় বোন লাভলী বেগমের লেখাপড়া বন্ধ। সবার বড় লাকী বেগম ঢাকায় গার্মেন্টেসে কাজ করে সেখান থেকে পরিবারে টাকা পাঠাতেন। কিন্তু তার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সেটাও এখন বন্ধ। ২ বছর বয়স থেকে বিরল এই রোগে আক্রান্ত বাবলী। দিন দিন ডানপা ফুলতে থাকে। মেয়ের এ অবস্থা দেখে মা খাতুন বেগম প্রথমে তাকে গ্রাম্য কবিরাজের কাছে নিয়ে যান। অন্ধবিশ্বাসের কারনে ক্রমাগত রোগটি বাড়তে থাকে। প্রথমে তার ডানে পায়ে একটি ক্ষতচিহ্ন ছিল। পরে আক্রান্ত স্থান স্ফীত হয়ে ডান পা’টি অস্বাভাবিক বড় হয়ে যায়। তখন স্থানীয় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তারা রোগটি সনাক্ত করতে পারেনি। ততক্ষনে শিশুর আক্রান্ত স্থান বড় হয়ে মারাত্মক আকার ধারন করে। এলাকাবাসীর পরার্মশে এক পর্যায়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ডাক্তাররা রোগ সনাক্ত করতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে আক্রান্ত স্থানের কিছু অংশ (নমুনা) কেটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেওয়া হয় রোগ সনাক্ত করার জন্য। কবে আসবে ফলাফল ডাক্তাররা জানেন না বিধায় রোগাক্রান্ত শিশুকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন মা খাতুন বেগম। এ বিষয়ে শিশুর মা কে জিজ্ঞেস করলে তিনি অসহায়ের মত কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মেয়ের চিকিৎসার প্রধান সমস্যা অর্থনৈতিক বাধা। নিজের চোঁখের সামনে মেয়ের চিৎকার আর্তনাদ এখন দেখে যাওয়া ছাড়া তার আর কিছু করার নেই। মেয়েটিকে নিয়ে নিদারুন কষ্টে রয়েছেন মা। উন্নত চিকিৎসা করাতে দরকার প্রচুর টাকা। সরকার বা সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে আসলেই হয়তো নতুন জীবন ফিরে পেতে পারে শিশু বাবলী আক্তার।