সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র প্রতিষ্ঠান দিরাই হাসপাতালটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ এলাকার সাধারণ মানুষ। হাসপাতালের কর্তা ব্যক্তিরা বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িত হওয়ায় অধিনস্তরা চলছে যার যার মতে। ফলে প্রশাসনিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান স্বপন ও মেডিক্যাল অফিসার সুমন কুমার রায়ের ইচ্ছে অনুযায়ী চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। হাসপতালে ভর্তি রোগিদের স্যালাইন আর ইনজেকশন দেওয়ার জন্য আয়া ঝাড়–দাররাই ভরসা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে জনবল সংকট, স্যানিট্রেশন, পানির জন্য চরম দুর্ভোগ, অকেজো এক্স-রে মেশিন, চরম অব্যবস্থাপনার কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। কর্মরত ডাক্তার প্রাইভেট চিকিৎসা নিয়েই ব্যস্ত এতে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে হাওরপারের প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ। হাসপাতালটি ৩০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও তার সুফল পাচ্ছে না রোগীরা। নতুন ভবন উদ্বোধন করা হলেও কাজ চলছে সেই ৩০ শয্যায়।
জানা যায়, সরকারী হাসপাতালে আউটডোরে রোগীদের কাছ থেকে ৩টাকা, জরুরী বিভাগে ৮টাকা ও ভর্তির জন্য ১০ টাকা নেওয়ার বিধান থাকলেও দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তা মানা হচ্ছে না। একাধিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান স্বপন ও মেডিক্যাল অফিসার সুমন কুমার রায় নিয়ম করে দিয়েছেন, আউটডোরে রোগীদের কাছ থেকে ১০ টাকা, জরুরী বিভাগে ২০ টাকা ও ভর্তির জন্য ২০ টাকা করে করে নেওয়ার ফলে হাওরপারের গরীব মানুষ সরকারী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
হাসপাতালের ৪৬৫০ নং রেজিষ্ট্রেশনে ভর্তি হয়েছেন কাজুয়াবাদ গ্রামের সরলা বিবি (৫৫) ও ৪৬৫৭ নং রেজিষ্ট্রেশনের আনোয়ারপুর গ্রামের হিরা বেগম (৩৫) তারা জানিয়েছেন রেজিষ্ট্রেশন ফি নেওয়া হয়েছে ২০ টাকা করে।
অভিযোগ রয়েছে সামান্য অসুস্থ হলেই রোগীদের সিলেট প্রেরণ করা হয়। ভুক্তভুগী উপজেলার জালালপুর গ্রামের রিফু মিয়া জানান, ২ আগষ্ট তার ছেলে সাফোয়ানকে ভর্তি করা হয় দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। শিশু ডায়রীয়া চিকিৎসা হিসেবে সাফোয়ানকে মুখের স্যালাইন দেওয়া হয়। বৃহস্পতি ও শুক্রবার হাসপাতালে থাকলেও কোন ডাক্তারের দেখা পাওয়া যায়নি। শনিবারে জানানো হয় সিলেট যেতে হবে। শনিবারে সিলেট উইমেন্স মেডিকেলে ভর্তি করা হলে সাফোয়ানের অবস্থার অবনতি হতে থাকে পরে রাতে রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজে তার মৃত্যু হয়।
চিকিৎসা নিতে আসা আনোয়রপুরের রমিজ আলী জানান, হাসপাতালে প্যারাসিটামল ছাড়া কোন ঔষধ দেওয়া হয় না। ডাক্তারে রোগী না দেখেই একটি কাগজ লিখে দেন বাহিরের ফার্মেসী থেকে ঔষধ কিনতে হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেডিক্যাল অফিসাররা তাদের বাসায় সকাল থেকেই রোগী দেখেন, বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা ডাক্তারের বাসায় ভীড় করছেন। জরুরী বিভাগে ডাক্তারের প্রয়োজন হলে পিয়নরা বাসা থেকে ডাক্তারদের ডেকে আনে। নতুবা আয়া পিয়নরাই রোগীদের ভরসা।
এ বিষয়ে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্মা মাহবুবুর রহমানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার অফিসে আসেন চা খাইতে খাইতে কথা বলা যাবে। এসব বিষয়ে ফোনে কথা বলা যাবে না।