কাজিরবাজার ডেস্ক :
আন্দামান সাগরে আজ শুক্রবার সৃষ্টি হতে পারে সম্ভাব্য লঘুচাপ। আর এই লঘুচাপের ফলে সৃষ্টি হতে পারে বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’। বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস ধারণা করছে, এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় পূর্ব প্রস্তুতি বিষয়ে সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, উত্তর-পূর্বদিকে ভারতের ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে সাতক্ষীরা জেলায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’। আমরা জানতে পেরেছি ভারত মহাসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছে একটি সাইক্লোনিক সিস্টেম ডেভেলপ করেছে। যেটা ৯ মের মধ্যে হয়ত লঘুচাপে রূপান্তরিত হবে, যেটাকে আমরা ‘লো প্রেসার’ বলি। এরপর ধীরে ধীরে এটা সুস্পষ্ট লঘুচাপ বা লো প্রেসারের রূপ ধারণ করবে। এরপর ১১ মের দিকে নিম্নচাপে রূপান্তরিত হয়ে নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তর হওয়ার আশঙ্কা করা যাচ্ছে। যদি ঘূর্ণিঝড় হয় তাহলে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হবে অশনি। এটার ল্যান্ডফলটা এখন পর্যন্ত ক্যালকুলেশন হয়নি। নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পর বিস্তারিত জানাতে পারব।
আবহাওয়াবিদ মোঃ ওমর ফারুখ বলেন, ‘দক্ষিণ আন্দামান সাগরের সম্ভাব্য লঘুচাপটি আজ শুক্রবার সৃষ্টি হতে পারে। এখন পর্যন্ত সৃষ্টি হতে যাওয়া লঘুচাপটি পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িমা ও বাংলাদেশের দিকে মুখ করে আছে। তবে এর গতিপথ একেক সময় একেক দিকে দেখাচ্ছে। এজন্য বলা মুশকিল, এটি তৈরি হলেও আসলে কোন দিকে যাবে। তবে আমাদের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী এটি পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও বাংলাদেশে আসবে।
বাংলাদেশে প্রবেশ করলে ঘূর্ণিঝড়টি কোন দিকে আঘাত হানতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনও সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না, এটি কোন দিকে আঘাত হানবে। যেকোন দিকে আঘাত হানতে পারে।’ ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের পশ্চিম অঞ্চলে যেতে পারে আবার পূর্বাঞ্চলেও যেতে পারে। এটি আগামী ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলেও জানান তিনি।
ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ একটি ঘূর্ণিঝড় প্রবণ দেশ। আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে, ঝড়ে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যার জন্য আমরা আজকে প্রাথমিক সভা ডেকেছি। এখানে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আলোচনা করেছি। কবে লঘুচাপ, কবে নিম্নচাপ সৃষ্টি হবে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিটা স্টেপে আমাদের প্রস্তুতি কি, কাদের সংযুক্ত করব, কাদের দায়িত্ব দেব, কোথায় কিভাবে নির্দেশনা দেব সেগুলো আমরা আজ ঠিক করেছি। পরবর্তীতে যদি সতর্ক সঙ্কেত দেয়া হয় তাহলে আমরা একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে নির্দেশনাগুলো মাঠ পর্যায়ে দিয়ে দেব।
এদিকে, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে নদীবন্দরগুলোতে সতর্কতা সঙ্কেত বাড়ানো হয়েছে। বুধবার ছিল ১ নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত। বৃহস্পতিবার তা বেড়ে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এর অর্থ হচ্ছে, যেকোন সময় বন্দর এলাকায় ঘণ্টায় ৬১ কিলোমিটার বা তার চেয়েও বেশি শক্তির কালবৈশাখী বয়ে যেতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টা দেশের আবহাওয়ার পরিস্থিতি কেমন থাকবে জানতে চাইলে ওমর ফারুখ বলেন, ‘দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে, উত্তরাঞ্চলের রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি হবে।’