এক হাজার হজ্বযাত্রীর হজ্বে যাওয়া অনিশ্চিত!

52

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রতারণার শিকার হওয়া ১২৫ হজ্বযাত্রীকে বিশেষ ব্যবস্থায় হজ্বে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে হাব। তবে বৃহস্পতিবার ভিসা প্রদানের সর্বশেষ দিনেও ভিসা পাননি ৬৭৮ হজ্বযাত্রী। এদিকে বিমানের ১৬টি ফ্লাইট বাতিল হওয়ার পরও অবিক্রিত রয়ে গেছে বেশ কিছু টিকিট। এসব কারণে শেষের দিকে হাজারখানেক হজ্বযাত্রীর হজ্বে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সৌদি আরব যদি পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী অতিরিক্ত স্লট না দেয়- তাহলে বিমানের কিছু সংখ্যক যাত্রী অন্য এয়ারলাইন্সে পাঠাতে হবে। শুক্রবার পর্যন্ত হজ্বে গিয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৮০।
এ সব বিষয়ে শুক্রবার আশকোনা হজ্ব অফিসে গিয়ে জানা যায়, ৬৭৮ জনের ভিসা না হওয়ায় পরস্পরবিরোধী দোষারোপ চলছে। সংসদীয় কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুণ বলেছেন, এজেন্সির প্রতারণা নাকি অন্য কোন কারণে তাদের ভিসা হয়নি সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। অন্যদিকে হাব মহাসচিব শাহাদত হোসেন তসলিম বলেছেন, ‘তারা স্বেচছায় হজ্বে যেতে চায়নি বলেই ভিসা হয়নি। তারপরও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে দায়ী এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে ১২৫ হজ্বযাত্রীর কাছ থেকে হজ্বের টাকা নিয়ে পালিয়েছে প্রতারক মিনার ট্যুর এ্যান্ড ট্রাভেলস (লাইসেন্স নং-১০৩৩)। ১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে মালিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রতিষ্ঠানটির ই-হজ্ব সিস্টেমের ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড পাওয়া না যাওয়ায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয় হাব। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হলে হাব মহাসচিব সৌদি আরবে দেনদরবার চালিয়ে শেষ দিনে এদের বিপরীতে বারকোড আনতে সক্ষম হন। তারপর ঢাকায় শাহাদত হোসেন তসলিম ওই এজেন্সির পলাতক মালিককে তলব করে এনে ভিসার আবেদন জমা দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এবং বৃহস্পতিবার তাদেরকেই সর্বশেষ ভিসা দেয়া হয়। এরপর টিকিটেরও ব্যবস্থা করা হয়। এ বিষয়ে হাব মহাসচিব শাহাদত হোসেন তসলিম শুক্রবার আশকোনা হজ্ব অফিসে বলেন, তাদেরকে বিশেষ ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ গুরত্ব দিয়ে হজে পাঠানো হচ্ছে। কারণ অনেকে সারা জীবনের আয়ের একটি অংশ রাখেন হজ্বে যাওয়ার নিয়তে। অল্প অল্প করে জমান টাকা। এই টাকার প্রতি মায়া একটু আলাদাই। তাই ভুক্তভোগী হজ্বযাত্রীদের যে কোন মূল্যে হজে পাঠানো হচ্ছে। সরকারের ভাবমূর্তির কথা ভেবে আমরা সেটা করেছি। হাবের পক্ষ থেকে প্রতারক এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। গত কদিন ধরে এ নিয়ে চরম পেরেশানিতে কেটেছে। তবে শেষ মুহূর্তে হলেও তাদের সঙ্কট কেটেছে।
হজ্ব অফিস সূত্রে জানা যায়, মিনার ট্যুর এ্যান্ড ট্রাভেলস নামে এজেন্সি এ বছর কত জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, কতজনকে হজ্বে পাঠিয়েছে কতজন প্রতারিত হতে যাচ্ছেন-প্রাথমিক তদন্তে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। হজ্ব অফিসে গিয়ে মিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন- ভুক্তভোগী- মোঃ শরিফ উদ্দিন খান, দেওয়ান আব্দুল বাকী, দেওয়ান আফিফা বেগম, সাদিক মিয়া, মোঃ মিলন মিয়া, মিজানুর রহমান, আাসিফ রেজা, আরশাদ আলী, হাফিজা খানম। এ বিষয়ে একজন কর্মকর্তা জানান, মিনার ট্যুর এ্যান্ড ট্রাভেলস এ বছর সবমিলে ২২৫ জন হজ্বযাত্রীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। হজ্ব ফ্লাইট শুরুর প্রথম কয়েক দিনে ৯২ হজযাত্রীকে ফ্লাইট দেয়া হয়েছিল। এরপর থেকে তাদের ফকিরাপুলের অফিস বন্ধ রাখে। প্রতিষ্ঠানের মালিক জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী পারভীন আক্তার আত্মগোপনে আছেন। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালে প্রতারণার দায়ে শাস্তি পাওয়া সাউথ এশিয়ান ওভারসিজ নেটওয়ার্কের মালিক মাহফুজ বিন সিরাজ ভুক্তভোগীদের মোনাজ্জেম। সাউথ এশিয়ান ছাড়াও রহমানিয়া ও জামালপুর ট্রাভেলস নামে তিনটি বিতর্কিত ও বন্ধ প্রতিষ্ঠান মিনার ট্যুর এ্যান্ড ট্রাভেলসের মাধ্যমে এ বছর হজ্বযাত্রী পাঠানোর চুক্তি করে।
জানা গেছে, শেষের দিকে বিমান হাজারখানেক যাত্রী নিয়ে বিপাকে পড়তে পারে। আগামী ১৬ আগষ্ট বিমানের শেষ হজ্বফ্লাইট হলেও এখনো বেশ কিছু টিকিট অবিক্রিত রয়ে গেছে। পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ায় এরই মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১৬ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। আরও কমপক্ষে আটটি ফ্লাইটের টিকিট অবিক্রিত রয়েছে এয়ারলাইন্সটির। এসব ফ্লাইটের টিকিট যথাসময়ে বিক্রি না হলে ঝুঁকিতে পড়বেন কমপক্ষে ১ হাজার হজ্ব গমনেচ্ছু।
হজ্ব এজেন্সিগুলো হজযাত্রীদের সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া ও ভিসা জটিলতায় এ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। বিমানের কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর সৌদি সরকার অতিরিক্ত হজ ফ্লাইটের অনুমোদন দেবে না। ফলে এখনও নির্ধারিত যেসব ফ্লাইটের টিকিট অবিক্রিত রয়েছে, সেগুলো বিক্রি না হলে অনিশ্চতা বাড়বে।
হজ্ব অফিস জানিয়েছে, ১০ আগষ্ট সকাল নয়টা পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে সৌদি আরব পৌঁছেছেন ৫৩ হাজার ২৮৪ জন, সৌদি এয়ারলাইন্সে পৌঁছেছেন ৫০ হাজার ৬৭৮।
হাব মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন-এ বছর যারা হজ্বে যাওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন সবাই যেতে পারবেন। কেউ বাদ পড়বেন না। শঙ্কার কোন কারণ নেই। বিমানের যদি কোন টিকিট অবিক্রিত থাকে সেটি তাদের তাদের সমস্যা, এজন্য হজ্বযাত্রায় কোন সমস্যা হবে না।
ভিসা না পাওয়ার বিষয়ে বজলুল হক হারুণ বলেছেন, ১ লাখ ২৭ হাজার হজ্বযাত্রীর মধ্যে সাড়ে ৬শ’ জনের ভিসা হয়নি। এটা তো খুবই স্বাভাবিক। পাসপোর্টের জটিলতা, অসুস্থতা ও স্বেচ্ছায় কেউ যদি হজ্বে না যায় তা হলে সরকার জোর করে পাঠাবে? তারপরও খতিয়ে দেখা হবে যেতে চেয়েও কেউ বাদ পড়েছেন কিনা।