কাজিরবাজার ডেস্ক :
নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরকে ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর বাবা-মা।
দিয়া খানম মীম-এর বাবা জাহাঙ্গীর আলম এবং আবদুল করীম রাজীবের মা মনোয়ারা বেগম বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে সরকার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই আহ্বান জানিয়েছেন।
বেলা ১২টার দিকে মিম ও রাজীবের স্বজনরা যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। আর সেখানে গণমাধ্যমের মাধ্যমে তাদের বাবা মা এই আহ্বান জানান। তারা জানান, প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে সান্ত্বনার পাশাপাশি ও দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দিয়েছেন আর এতে তারা সন্তুষ্ট।
ছাত্রদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আন্দোলনরত ছাত্রদের আমি বলবে, ‘বাবারা তোমরা যারা রাস্তায় কষ্ট করছ, তোমরা ঘরে ফিরে যাও।’
অভিভাবকদের প্রতি মিমের বাবা বলেন, ‘সবার কাছে আমার অনুরোধ, আমাদের যার যার সন্তান, তাদের সবাইকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাসায় নিয়ে যাই।’
‘আমরা শক্ত বিচার পামু আশা করি, প্রধানমন্ত্রী নিজের কথা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেও আমার বাসায় গেছে, সেও বলছে, কেউ এটা চাপায়ে রাখতে পারবে না। সত্য একটা এটার বিচার হবে আশা করি। বিচারটা হয়ে গেলে দেশের মানুষ শান্তি পারে।’
রাজীবের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘সবাই আমার সন্তানের জন্য রাস্তায় নেমেছে। সবই হয়ে গেছে। এখন তোমরা যে যার ঘরে উঠে যাও। তোমাদের সবার কাছে অনুরোধ, তোমরা ঘরে ফিরে যাও।’
এর আগের দিন মিমের বাবা বলেছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তার চালক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার বিষয়ে পরামর্শ দিতে পান।
আর বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি গাড়ি এসে মিমের মা রোকসানা বেগম, বাবা জাহাঙ্গীর আলম, বড় বোন রোকেয়া খানম রিয়া ও ছোট ভাই পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়াদুল ইসলাম আরাফাতকে নিয়ে যায়।
একই সঙ্গে আনা হয় নিহত রাজীবের মা মনোয়ানা বেগম ও বোনকে। এই তরুণের বাবা বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন।
এ সময় মহিমা বেগমের পাশে থাকা করিমের বোন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাদের সান্ত্বনা দিয়েছেন। আমরা স্যাটিসফাই হয়েছি। তোমরাও স্যাটিসফাই হও।’
‘আমরা দোয়া করি, তোমরাও দোয়া কর তোমাদের বন্ধুদের জন্য। সবাই ঘরে ফিরে যাও।’
প্রধানমন্ত্রী দুই পরিবারকে সান্ত্বনা দেন এবং প্রত্যেক পরিবারকে ২০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র অনুদান দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও।
২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের চালকের পাল্লার পর শিক্ষার্থীদের পিষে ফেলে একটি বাস। নিহত হন মিম ও রাজীব। গুরুতর আহত হয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি কর হয় আরও ছয় জনকে।
এই ঘটনায় ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকশ বাস ভাঙচুর করে। আর পরদিন সড়ক অবরোধ করে বাস চালকের শাস্তিসহ নয় দফা দাবি জানায়।
এর পরদিন থেকে ছাত্রদের এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা শহরে। রাজধানীর পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরেও ছড়িয়েছে তা।
ছাত্রদের অবস্থানের কারণে গত চারদিন ধরে রাজধানী কার্যত অচল হয়ে রয়েছে। কারণ, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অবস্থান নিয়ে আছে ছাত্ররা।
বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাত্রদের সব দাবি মেনে নেয়ার কথা জানিয়ে রাস্তা থেকে ওঠে যাওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু পরদিন শিক্ষার্থীরা আবার মাঠে নামে। তারা বলে, কথায় আশ্বস্ত হবেন না তারা, কিছু করে দেখাতে হবে।
এর মধ্যে অবশ্য পাল্লাপাল্লিতে থাকা তিন বাসের চালক ও দুই জন সহকারীকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। রিমান্ডে গেছেন চাপা দেয়া বাসের মালিকও।
পাশাপাশি জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের নিবন্ধনও বাতিল করেছে বাংলাদেশ সঢ়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।