স্বপ্ন ছোঁয়ার কাছে ক্রোয়েশিয়া

41

স্পোর্টস ডেস্ক :
সেমিফাইনালের লড়াইও শেষ। তিনদিনের বিরতি শেষে আগামী ১৫ জুলাই রবিবার রাশিয়ার মস্কোয় অনুষ্ঠিত হবে ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনাল। স্বপ্নের শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়া।
১৯৯৮ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অংশ নেয় ক্রোয়েশিয়া। সেই আসরেই ফুটবল দুনিয়াকে রীতিমতো চমকে দেয় তারা। অভিষেক বিশ্বকাপেই সেমিফাইনাল খেলেছিল ক্রোয়েটরা। এর পরের সময়টাতে বিশ্ব ফুটবলে আর তেমন কোন সাফল্য নেই ক্রোয়েশিয়ার। তবে রাশিয়া বিশ্বকাপেই বাজিমাত করেছে তারা। বুধবার সেমিফাইনালে রোমাঞ্চকর ফুটবল উপহার দিয়ে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করে ক্রোয়েশিয়া।
তবে এবারের আসর শুরুর আগে থেকেই ফেবারিটের তকমাটা গায়ে মাখানো ছিল ক্রোয়েশিয়ার। মডরিচ-মানজুকিচ-রাকিটিচরা টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পুরো টুর্নামেন্টেই অসাধারণ ফুটবল খেলেছে ক্রোয়েটরা। বুধবার শেষ চারের কঠিন লড়াইয়েও ফেবারিট হয়ে আসা ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে। আর তাতেই ইংলিশদের দুঃখ বাড়িয়ে দিয়ে নিজেদের অতীত সাফল্যের সীমানাকেও ছাড়িয়ে যায় জøাতকো দালিচের শিষ্যরা। মডরিচ-মানজুকিচরা গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচের সবকটিতেই জয় পায়। যেখানে তারা নাইজিরিয়া, আর্জেন্টিনা এবং আইসল্যান্ডকে পরাজয়ের স্বাদ উপহার দিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোর টিকেট কাটে। তবে নকআউট পর্বের দুই ম্যাচেই জয় পেতে ঘাম ঝরেছে ক্রোয়েটদের। জিতেছে ঠিকই তবে রোমাঞ্চকর আর নাটকীয় টাইব্রেকারে প্রতিপক্ষকে বিদায় করেছে তারা। শেষ ষোলোতে ডেনমার্ক আর কোয়ার্টার ফাইনালে বিশ্বকাপের আয়োজক রাশিয়াকে পরাজিত করে সেমিফাইনালে ওঠেছিল ক্রোয়েশিয়া। বুধবার থ্রি-লায়ন্সদের হারিয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় সাফল্যের দেখা পায় তারা।
ক্রোয়েশিয়ার স্বপ্ন এখন ট্রফিটাকে ছোঁয়ে দেখার। সে জন্য ফ্রান্সকেও হারাতে চায় তারা। শুধু তাই নয়, ২০ বছর আগে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারের প্রতিশোধ নিতেও মরিয়া ক্রোয়েটরা। এ প্রসঙ্গে দলের কোচ দালিচ বলেন, ‘১৯৯৮ সালে গ্রুপের প্রথম তিন ম্যাচে আমি সমর্থক হিসেবে ফ্রান্সে ছিলাম। প্রাক-মৌসুম পরিস্থিতিতে আমাকে শেষ ম্যাচের আগেই ফিরে যেতে হয়েছিল। অবশ্যই ক্রোয়েশিয়ার প্রত্যেকে সেটি মনে রেখেছে। ২-১ ফল ছিল। এটা গত ২০ বছর ধরে আলোচনা হয়েছে। হয়তো এই খেলাটির একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য আছে। সুযোগ এখন সেটার জ্বালা জুড়ানোর। উভয় দলই তাদের সেরাটা প্রমাণ করেছে এবং ফাইনালে খেলার দাবি রাখে। তবে এটা ফুটবল। ফাইনালে টুর্নামেন্টের সেরা খেলাটা খেলতে নিজেদের তৈরির জন্য এখন আমাদের নজর দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে তাদের মধ্যে পূর্ণ বিশ্বাস বা আস্থা ছিল না। কিন্তু টুর্নামেন্ট গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। তারা মানসিকভাবে এবং শক্তির দিক থেকে দৃঢ় হয়ে উঠেছে।’
ফরাসী ফুটবল ইতিহাস আর ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির রয়েছে তাদের। শুধু তাই নয়, ২০০৬ সালেও স্বপ্নের এই ট্রফি উঁচিয়ে ধরার সুযোগ এসেছিল অঁরি-জিদানদের। কিন্তু সেবার তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান করে দেয় ইউরোপেরই আরেক জায়ান্ট ইতালি। সেই ধাক্কা সামলিয়ে একযুগ পর আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্স। তবে এবার রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই সবচেয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে বিবেচিত হয় ফ্রান্স। দলীয় শক্তি কিংবা ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সের বিচারেও দুর্দান্ত দিদিয়ের দেশমের দল। গ্রুপপর্ব থেকে শুরু করে শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল কিংবা শেষ চারÑ সর্বত্রই ফরাসী সৌরভ ছড়িয়েছেন গ্রিজম্যান-এমবাপেরা।
সেমিফাইনাল থেকে ফ্রান্স বিদায় করেছে টুর্নামেন্টের আরেক ফেবারিট বেলজিয়ামকে। তার আগে উরুগুয়েকে হারিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। শেষ ষোলোতেও বড় চমক দেখিয়েছে জিদান-অঁরির উত্তরসূরিরা। যেখানে তারা বিধ্বস্ত করেছিল মেসি-এ্যাগুয়েরোর শক্তিশালী আর্জেন্টিনাকেও। গ্রুপ পর্বের চ্যাম্পিয়ন হওয়া ফ্রান্স বিশ্বকাপের একুশতম আসরের মিশন শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে। দ্বিতীয় ম্যাচে পেরুকেও হারিয়ে টানা দুই জয় তুলে নেয় তারা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ডেনমার্কের সঙ্গে ড্র করেছিল দেশমের দল। এছাড়া বাকি সবগুলো ম্যাচ জিতেই একযুগ পর আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকেট কাটে ফ্রান্স। দীর্ঘ দুই যুগ পর আবারও তাদের সামনে এখন ট্রফি জয়ের হাতছানি। ভারানে-পগবা-জিরুডরা কি পারবেন শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে? ফুটবলপ্রেমীদের অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার।
আগামী রবিবার রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনাল। অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটতে থাকা ফরাসীদের থামিয়ে ক্রোয়েশিয়া কী প্রথম ট্রফি জয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে? নাকি ক্রোয়েটদের স্বপ্ন ভেঙ্গে দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের উল্লাস করবে ফ্রান্স? ভক্ত-অনুরাগীদের অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার।