কাজিরবাজার ডেস্ক :
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে জামায়াতকে অনুরোধ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে টেলিফোনে তিনি জোটের শরিক দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে জামায়াত অটল। তারা নির্বাচন করবেই। তারেক রহমানের পর জোটের শরিক দলের নেতাদের অনুরোধেও তারা ভোট থেকে সরে আসতে নারাজ।
অবশ্য রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জোটের একক প্রার্থী দেয়া হবে-ঘোষণা এসেছে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খানের কাছ থেকে।
তবে জামায়াতের মনোভাব বিবেচনায় নিলে জোটের একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে হলে সিলেটে মেয়র পদে ভোট থেকে বিএনপিকেই সরে দাঁড়াতে হবে।
সেটি বিএনপি করবে কি না, সেই প্রশ্নের জবাব অবশ্য দেননি নজরুল ইসলাম খান। বলেছেন, এখনও সময় আছে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের।
বুধবার বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আগামী ৩০ জুলাই তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে বৈঠক হয় ২০ দলের নেতাদের মধ্যে।
তিনটি মহানগরেই ২০১৩ সালে বিএনপির প্রার্থী জিতেছিল। আর রাজশাহী ও সিলেটের বর্তমান মেয়র যথাক্রমে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবং আরিফুল হক চৌধুরীকে প্রার্থী করেছে বিএনপি। আর বরিশালে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে মজিবর রহমান সরোয়ারকে।
এর মধ্যে জামায়াত সিলেটে এহসান মাহবুব জুবায়েরকে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে। আর তিনি যেন ভোট থেকে সরে দাঁড়ান সেই অনুরোধই করেন বিএনপি নেতরা।
কিন্তু জোটের বৈঠকে জামায়াত আবারও জানিয়ে দিয়েছে তারা সিলেটে ভোট থেকে সরে দাঁড়াবে না।
বৈঠকের নেতারা জানান, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য ছাড়াও জোটের অন্য শরিক দলের নেতারা জামায়াতের প্রতিনিধি আবদুল হালিমকে সিলেটের প্রার্থী প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। তবে তিনি আমলে না নিয়ে নিজেদের প্রার্থী রাখার ব্যাপারে নানা যুক্তি তুলে ধরেন।
জামায়াতকে প্রার্থী প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘সিলেটের সদ্য বিদায়ী মেয়র বিএনপির। তা ছাড়া বিএনপি বড় দল, জোটের প্রধান দল। সেখানে বিএনপির প্রার্থী থাকলে জয়ের সম্ভাবনা বেশি। সে হিসেবে জামায়াত তাদের প্রার্থী সরিয়ে নিলে ভালো হবে।’
পরে চাপাচাপির মধ্যে হালিম বলেন, দলের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করে সিলেটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবেন তারা।
বৈঠকে ছিলেন জোটের এমন একজন নেতা বলেন, ‘সবার অনুরোধের পর জামায়াত নেতা বলেন আমরা ১২টির মধ্যে একটা সিটিতে মেয়র পেতে পারি না? আর আমরা তো এটা অনেক আগে থেকেই বলে এসেছি। সেখানে আমাদের প্রার্থী অনেক ভালো। সে ভালো করবে।’
শরিক দলগুলোর মধ্যে একাধিক নেতাও অবশ্য জামায়াতের পক্ষে কথা বলেন। তারা বলেন, বড় দল হিসেবে বিএনপি ছাড় দিলে সেটি জোটের জন্য ভালো হবে।
সদ্য সমাপ্ত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং এর আগে স্থগিত হয়ে যাওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছিল জামায়াত। দলটির সূত্র বলছে, সিলেট নিয়ে চাপ দিতেই এই কাজ করেছিল জামায়াত।
গাজীপুরে জামায়াতের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের অনুরোধ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকেই জামায়াত সিলেটের বিষয়টি জানিয়ে রাখে। তখন বিএনপি এ বিষয়টি নিয়ে বিবেচনার আশ্বাসও দিয়েছিল।
জোটের বৈঠকেও মির্জা ফখরুল জানান, জামায়াত সিলেটে প্রার্থী দেবে সেটা আগেই তাদেরকে জানানো হয়েছিল।
বৈঠকে জামায়াতকে নিয়ে সন্দেহের বিষয়ে উঠা গুঞ্জন নিয়ে কথা বলেন জোট নেতারা। এ বিষয়ে আবদুল হালিম বলেন, ‘আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আমরাও জোটের ভালো চাই। কিন্তু সেখানে আমাদের নিয়ে কেন সন্দেহ করা হবে?’
তবে সিলেট নিয়ে টানাপড়েনের জন্য বিএনপিকে দায়ী করছেন জোটের একটি দলের শরিক দলের নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘জোটের বৈঠকের আগেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সিলেটে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। একটু বিলম্ব করলে কি সমস্যা হতো? এটা অপরিপক্ক কাজ হয়েছে।’
জোটের বৈঠক শেষে শরিক দলের নেতাদের নিয়ে কার্যালয়ের নীচতলায় সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন না জামায়াত নেতা হালিম, জাতীয় পার্টির মোস্তফা জামাল হায়দার ও বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ।
জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, জরুরি কাজ থাকায় চলে গেছেন।
খেলাফত মসলিস সরে দাঁড়াবে : জামায়াত সিলেট নিয়ে অনড় থাকলেও জোটের আরেক শরিক খেলাফত মজলিস বরিশালে মেয়র নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে বলে জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।
দক্ষিণের এই মহানগরে প্রার্থী হয়েছিলেন খেলাফত মজলিসের কে এম মাহবুব আলম।