জনশক্তি রপ্তানি খাতের ব্যবসায়ীদের অসাধুতার কারণে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ১০টি এজেন্সির মাধ্যমে যে প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি চলছিল, তা স্থগিত করেছে সে দেশের সরকার। প্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে একটি মানবপাচার চক্র মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগসাজশ করে এসব এজেন্সি নিয়ে সিন্ডিকেট করে শ্রমিকদের কাছ থেকে বছরে অন্তত ২০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠার পর দেশটির সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই চক্রের বিষয়ে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে দুই হাজার রিঙ্গিত খরচ হওয়ার কথা, সেখানে এসব এজেন্সি ২০ হাজার রিঙ্গিত আদায় করেছে। এই প্রক্রিয়ায় ২০১৬ সাল থেকে এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক মালয়েশিয়ায় গেছে। অপেক্ষায় আছে আরো এক লাখ।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি। মালয়েশিয়া সরকারের এই সিদ্ধান্তে জনশক্তি রপ্তানিতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বাংলাদেশ। এর নেতিবাচক ধাক্কা লাগবে আমাদের অর্থনীতিতে। এমনিতেই পুরনো অনেক শ্রমবাজার বন্ধ হচ্ছে। নতুন শ্রমবাজারে কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় বাজার মধ্যপ্রাচ্য গুটিয়ে যেতে থাকলেও নতুন বাজার সৃষ্টিতে কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না দীর্ঘদিন। বছর চারেক আগে প্রচলিত শ্রমবাজারের বাইরে প্রায় ২৬টি দেশকে সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু এসব দেশে জনশক্তি রপ্তানির তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক বাজারে জনশক্তি রপ্তানির আগে গবেষণা করে চাহিদা অনুযায়ী জনশক্তি গড়ে তোলার প্রাথমিক কাজটিও বাংলাদেশে উপেক্ষিত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কূটনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা। নতুন বাজার খুঁজে বের করা ও বন্ধ হয়ে যাওয়া বাজার চালু করার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ সেভাবে দৃশ্যমান নয়। দীর্ঘদিন পর খুলেছিল মালয়েশিয়ার বন্ধ দরজা।
কয়েক বছর আগেও অবৈধ পথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে গিয়ে নৌকাডুবিতে বহু মানুষের প্রাণ গেছে। তখন মিয়ানমার, থাইল্যান্ডের কারাগারেও স্থান হয় বহু মানুষের। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া দালালচক্র নানা মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে, ফুঁসলিয়ে ভাগ্যান্বেষী মানুষকে আকৃষ্ট করত সর্বনাশা পথে। একসময় মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে ধস নামে। সরকারের ঐকান্তিক চেষ্টায় সেসব দিনের অবসান ঘটে। কর্মী রপ্তানির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে মালয়েশিয়া। বাংলাদেশ থেকে এখন মালয়েশিয়ায় কর্মী রপ্তানি হয় জিটুজি পদ্ধতিতে, যা অত্যন্ত নিরাপদ। কিন্তু দেশের ১০টি এজেন্সিকে কাজ দেওয়ার পর নতুন বিপর্যয়ের শুরু। আমরা আশা করব, সরকার এ বিষয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে নতুন করে ভাববে।