স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর উত্তর কাজীরবাজার পুলিশের উপর ব্যাপক ইট পাটকেল ও মুহুর্মুহু ককটেল নিক্ষেপ করেছে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও ফাঁকাগুলিবর্ষণ করেছে। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে ১৭ ছাত্রদল নেতাকর্মীকে। গতকাল শনিবার বিকেল ৩ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদল নেতাকর্মীরা উত্তর কাজিরবাজারে বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ট খন্দকার মুক্তাদিরের বাসায় জড়ো হতে থাকেন। বিকেল ৩ টার দিকে তারা মিছিল বের করতে চাইলে কোতোয়ালী থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মিছিলে বাধা প্রদান করে। এ সময় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে পুলিশের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছিল। এর কিছুক্ষণেল মধ্যেই তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ব্যাপক ইট পাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করতে থাকে। প্রায় অর্ধ ঘন্টাব্যাপী এ অবস্থা চলাকালে পুলিশ এক পর্যায়ে এ্যাকশনে যায়। তারা লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল ও ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। পুলিশের উপর হামলাকারী ছাত্রদলের বেশ কিছু নেতাকর্মীকে খন্দকার মুক্তাদিরের বাসার বিভিন্ন কক্ষ থেকেও আটক করা হয় বলে জানা গেছে।
আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন- সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী মোহাম্মদ সুহেল, জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আফসর খান, সাবেক ছাত্রদল নেতা আনোয়ার হোসেন মানিক, রাহিয়ান চৌধুরী রাহি, ফেঞ্চুগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ ছাত্রদল নেতা তপু আহমদ খান। অপর আটককৃতদের নাম ঠিকানা জানা যায়নি। আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ডিউটি অফিসার এসআই আনোয়ারা বেগম ও এসআই অনুপ কুমার চৌধুরী।
বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন বলেন, আমাদের নেত্রীর মুক্তির দাবিতে আমরা মিছিলের ডাক দিয়েছিলাম। বিভিন্ন জায়গা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল করতে জড়ো হয়েছিলেন। উত্তর কাজিরবাজার এলাকায় নেতাকর্মীদের সবচেয়ে বড় জমায়েত ছিল। সেখানে পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে তারা আমাদের লক্ষ্য করে শতাধিক গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়ে। আমাদের নেতাকর্মীদেরও আটক করে তারা।
ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ খান জামাল জানান, পুলিশ উত্তর কাজিরবাজার এলাকায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের বাড়ি লক্ষ্য করেও ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।
কোতোয়ালীর থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সাদেক কাউছার দস্তগীর জানান, প্রাথমিক ভাবে ঘটনাস্থল থেকে ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এখন এদেরকে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব বলেন, পুলিশ ৪০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। ছাত্রদলের ১২/১৩ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
জেলা ও মহানগর বিএনপির নিন্দা : নগরীতে ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর প্রাক্কালে পুলিশের হামলা, নির্বিচারে গুলি বর্ষণ ও ২০ জনেরও বেশী নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি নেতৃবৃন্দ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীকে এই ধরনের প্রতিহিংসামুলক কর্মকান্ড পরিহার এবং আটক নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানান তারা।
গতকাল শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম এবং জেলা সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন- শনিবার বিকেলে তিন বারের সাবেক সফল প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল বের করার প্রস্তুতি চলছিল। মিছিল শুরুর প্রাক্কালে নগরীর কাজিরবাজার এলাকায় কোন উস্কানী ছাড়াই ছাত্রদলের উপর হামলা চালায় পুলিশ। এ সময় নিরীহ ছাত্রনেতাদের উপর টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করা হয়। শুধু তাই নয়, আহত নেতাকর্মীদের গনহারে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কতিপয় অতিউৎসাহী কর্মকর্তাদের এমন বর্বর আচরণে সিলেটবাসী বিস্মিত। পুলিশের কাছ থেকে মানুষ এমন সন্ত্রাসী মারমুখি আচরণ আশা করেনা।