৫ জানুয়ারিকে ঘিরে প্রস্তুত আওয়ামীলীগ-বিএনপি ॥ “ঢাকা যার ক্ষমতা তার” জিরো টলারেন্সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

51

bnp -al_47558_0কাজিরবাজার ডেস্ক :
‘এবারের সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকার রাজপথ খালি থাকবে না’ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদার এমন বক্তব্যে নতুন করে নড়েচড়ে বসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি জোটকে মাঠে কোনো সুযোগ দেবে না শাসক দল। পাঁচ জানুয়ারিকে ঘিরে বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে দু/এক দিনের মধ্যেই। দিবস ভিত্তিক কর্মসূচি ছাড়াও থাকবে মাসব্যাপি আনন্দর‌্যালি, সমাবেশ ও শোভাযাত্রাও। কর্মসূচি চূড়ান্ত ও তা সফল পাশাপাশি রাজপথ দখলে রাখতে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে দলের অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে।
এছাড়া সরকারবিরোধী যে কোনো তৎপরতা নস্যাৎ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীকে জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন মনোভাব পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ‘ঢাকা যার ক্ষমতা তার’। যে কারণে আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতকে কোনোভাবেই মাঠে নামতে দেয়া হবে না। ভেতরে ভেতরে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার সব আয়োজন পাকা করা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “৫ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে জনমনে অনেক সংশয় ছিল। কিন্তু সব বাধা-বিপত্তি ও সংশয় উপেক্ষা করে নির্বাচন হয়েছে, দেশে শান্তি ফিরে এসেছে। তাই এ দিনটিকে আমরা গণতন্ত্রের বিজয় দিবস হিসেবে পালন করব। এ দিন রাজপথে অশুভ কোনো শক্তির ঠাঁই হবে না। এছাড়া ১০ জানুয়ারি জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউনও করা হবে। এসব কর্মসূচি সফল করতে মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করা হচ্ছে।”
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জানুয়ারি মাসটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ৫ জানুয়ারি সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি। ক্ষমতাসীন জোট এই দিনটিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ আর বিরোধী জোট ‘গণতন্ত্রের কালো দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছে। জানুয়ারিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। বিএনপির পক্ষ  থেকে এই মাসেই ঢাকা অচল করে সরকারকে বড় ধরণের ধাক্কা দিতে চাইছে।
আওয়ামী লীগের সূূত্রে জানা গেছে, ঢাকা অচলে খালেদা জিয়ার আগাম ঘোষণার কারণে এবার আগেভাগেই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের পাশপাশি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরও রাজপথে সক্রিয় রাখতে চায়। তাই ধারাবাহিকভাবে নগর কমিটি, ঢাকার সংসদ সদস্য, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, যুব মহিলা লীগ ও ছাত্রলীগের সাথে মতবিনিময় করা হচ্ছে। আর বিভিন্ন সভায় দল সমর্থিত পেশাজীবী সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গেও কথা বলছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
জানুয়ারিতে সরকারের বর্ষপূর্তিতে এক বছরের সাফল্যগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি ১ জানুয়ারি থেকে নানান কর্মসূচি নিয়ে ক্ষমতাসীনরা মাঠে থাকবে। এ সপ্তাহেই ঘোষণা করা হবে মাসব্যাপী কর্মসূচি। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন ছাড়াও ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও এতে অংশ নেবেন।
এরই অংশ হিসেবে আগামী ১৫ থেকে ২২ জানুয়ারি মহানগর, জেলা ও উপজেলায় সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীনরা। ৫ জানুয়ারি ঢাকায়ও মহাসমাবেশ করা হবে। ১৪ দলের এক জরুরি বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়াও সরকারের এক বছরের সাফল্য জনগণের সামনে তুলে ধরতে নেয়া হবে সংসদীয় আসনভিত্তিক সিরিজ কর্মসূচি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, “৫ জানুয়ারি নির্বাচন না হলে এ দেশে মার্শাল ‘ল’ হতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৪ দলকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করেছেন। তাই বিএনপি জামায়াতকে এ দেশের নৈরাজ্য ও তান্ডব চালানোর আার সুযোগ দেয়া হবে না। জানুয়ারি মাস থেকে ১৪ দল মাঠে থাকবে।”
আওয়ামী লীগ মনে করছে, রাজধানীর রাজপথ দখলে থাকলে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন সফল হবে না। তাই উজ্জীবিত রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী প্রতিটি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের। তাদের প্রস্তুত রাখতে নেয়া হচ্ছে নানামুখী পদক্ষেপ। দফায় দফায় বৈঠক করা হচ্ছে। ঢাকায় বিএনপি-জামায়াত যাতে কোনো ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য দেয়া হচ্ছে সব ধরনের নির্দেশনা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ বলেন, “জামায়াত-বিএনপির নৈরাজ্য কঠোর হাতে দমন করার জন্য কেন্দ্র থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে নেতাদের সতর্ক করেছি।”
অন্যদিকে দলীয় কর্মসূচি ও তৎপরতার পাশাপাশি প্রশাসনিক ভাবেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। জানুয়ারি মাস ঘিরে সরকারের তরফেও নেয়া হচ্ছে সর্বেচ্চ প্রস্তুতি। তারই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ বুধবার আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও কর্মকর্তাদের সরকারের কড়া অবস্থানের কর্থা জানিয়ে দেয়া হয়। সরকারবিরোধী যে কোনো তৎপরতা নস্যাৎ করতে জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়
বৈঠকে অংশ নেয়া কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলেন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চলতি মাস ডিসেম্বর ও আগামী জানুয়ারি মাস অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত নির্বাচনে দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের সম্ভাব্য আন্দোলন মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ রাজপথে থাকবে। প্রশাসন আন্দোলন দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেবে। তার পাশাপাশি রাজপথ সরকারের দখলে থাকলে তাদের আন্দোলন অতীতের মতোই ব্যর্থ হবে। এবিষয়টি বৈঠকে গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়েছে।