মো. শাহজাহান মিয়া জগন্নাথপুর থেকে :
জগন্নাথপুরে বৈষ্ণব কবি রাধারমণ কমপ্লেক্স আজও হয়নি। রাধারমণ কমপ্লেক্স না থাকায় দূর দূরান্ত থেকে আসা রাধারমণ ভক্তদের পড়তে হয় বিপাকে।
জানা গেছে, ১৮৩৩ ইং সালে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার জগন্নাথপুর পৌর শহরের কেশবপুর গ্রামের জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন মরমী বৈষ্ণব কবি রাধারমণ দত্ত পুরকায়স্থ। রাধারমণের বাবার নাম রাধামাধব দত্ত ও মাতার নাম সুবর্ণা দেবী। রাধারমণের দাদার নাম ছিল জমিদার কেশব দত্ত। জমিদার কেশব দত্তের নামানুসারে গ্রামের নাম রাখা হয় কেশবপুর। এক সময় রাধারমণ দত্ত জমিদারী ছেড়ে সাধনায় মগ্ন হয়ে পড়েন। সাধনায় সিদ্ধি লাভ করেন এবং জারী, সারি, ভাটিয়ালী, বাউল, বিচ্ছেদ, ধামাইলসহ প্রায় ৩ হাজার গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় গান রচনা করেন। এর মধ্যে ধামাইল গানের জনক তিনি। এশিয়া মহা দেশের মধ্যে ধামাইল গানের ব্যাপক কদর রয়েছে। অবশেষে ১৯১৬ ইং সালে সকল ভক্তকে কাদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান রাধারমণ দত্ত। রাধারমণের মৃত্যুর পর এলাকার কিছু ভক্ত রাধারমণের স্মৃতি ধরে রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বর্তমানে রাধারমণের জমিদার বাড়ি নেই। সব কিছু বেদখল হয়ে গেছে। এ নিয়ে অনেক মামলা-মোকদ্দমা হয়েছে। কেশবপুর গ্রাম, কেশবপুর বাজার ও জগন্নাথপুর ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় জমিদার রাধারমণ দত্তের জমিতে। অবশেষে অবশিষ্ট প্রায় ১৯ একর সম্পত্তি সরকার নিয়ে গেছে।
৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সরজমিনে দেখা যায়, এখন দেখার মতো আছে শুধু রাধারমণের সাধের কুঞ্জঘর ও সমাধিস্থান। সমাধি স্থানটি অযতœ অবহেলায় পড়ে আছে। সমাধি স্থানের পাশে রয়েছে রাধামণ কমপ্লেক্স এর নির্ধারিত স্থান। ২০১৫ ইং সালে কেশবপুর বাজার এলাকায় রাধারমণ কমপ্লেক্স এর স্থান নির্ধারণ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। দীর্ঘ ২ বছর অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত রাধারমণ কমপ্লেক্স নির্মাণ হয়নি। এতে রাধারমণ ভক্তদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এছাড়া ২০০৩ ইং সালে স্থানীয় রাধারমণ ভক্তদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় “রাধারমণ সমাজ কল্যাণ সাংস্কৃতিক পরিষদ” নামের একটি সামাজিক সংগঠন। বর্তমানে এ সংগঠনের উদ্যোগে রাধারমণের মৃত্যু বার্ষিকী সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন হয়ে আসছে। এ ব্যাপারে রাধারমণ সমাজ কল্যাণ সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি জিলু মিয়া, সহ-সভাপতি আছকির আলী, সাধারণ সম্পাদক পৌর কাউন্সিলর তাজিবুর রহমান ও যুগ্ম-সম্পাদক বাউল রমজান আলী বলেন, রাধারমণের সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে আমাদেরকে অনেক মামলা-মোকদ্দমা মোকাবেলা করতে হয়েছে। রাধারমণ কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি কমপ্লেক্সটি হয়ে যাবে। তবে রাধারমণের কমপ্লেক্সটি হয়ে গেলে দুর-দুরান্ত থেকে রাধারমণ ভক্তরা আসবেন এবং এক পর্যায়ে রাধারমণ কমপ্লেক্স সহ রাধারমণের স্মৃতিকে চিহৃকে ঘিরে কেশবপুর বাজার এলাকা পর্যটকদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠবে।