স্টাফ রিপোর্টার :
জনপ্রিয় লেখক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর হামলাকারী ফয়জুল হককে (২৪) ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার আদালতের মধ্যমে ফয়জুরকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডকৃত ফয়জুল হক সুনামগঞ্জের দিরাই থানার কালিয়ারকাপন গ্রামের আতিকুর রহমানের পুত্র। বর্তমানে সে জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া আব্দুল মতলিব কাচামঞ্জিলের বাসিন্দা।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১ টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সিলেট ওসমানী হাসপাতাল থেকে ফয়জুল হককে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৪র্থ আদালতে তাকে হাজির করে পুলিশ।
সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমূল্য কুমার চৌধুরী বলেন, আদালতে হাজির করে ফয়জুরের ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুর রহমান। আদালতের বিচারক হরিদাস কুমার আসামী ফয়জুলের ১০ দিনেরই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গতকাল থেকেই ফয়জুরকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, রিমান্ড মঞ্জুরের পরই পুলিশ শাহজালাল উপশহরস্থ গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) অফিসে ফয়জুলকে নিয়ে যায়। পরে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট।
আদালতে উপস্থিত সিলেট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট রুহুল আমিন বলেন, আদালতে কেউ ফয়জুরের জামিন আবেদন করেননি। তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। সিলেটের কোনো আইনজীবী ফয়জুলের পক্ষে লড়বেন না।
উল্লেখ্য, গত ৩ মার্চ শনিবার বিকেলে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হামলার শিকার হন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। পরে অধ্যাপক জাফর ইকবালকে প্রথমে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ও পরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সিএমএইচে চিকিৎসাধীন এই শিক্ষাবিদ এখন অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গত বুধবার তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে ফয়জুলকে হাতে-নাতে আটক করে গণপিটুনি দেয় শাবি শিক্ষার্থীরা। ওইদিনই র্যাব শাবি ক্যাম্পাস থেকে ফয়জুলকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে যায়। পরদিন রবিবার র্যাব ফয়জুলকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর থেকেই ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলো ফয়জুল। আটকের ৬ দিনের মাথায় গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হয় হামলাকারী আসামী ফয়জুলকে। এদিকে, হামলার পর দিন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে ফয়জুলকে আসামী করে জালালাবাদ থানায় মামলা দায়ের করেন। যার নং-৩ (০৩-০৩-১৮)। পুলিশ ও র্যাব মিলে ফয়জুলের বাবা-মা, মামা-চাচাকে আটক করে। এর মধ্যে মামা ও চাচাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
‘দাওয়াহ ইলাল্লাহ’ ফোরামের নির্দেশনায় হামলা: দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরাম‘দাওয়াহ ইলাল্লাহ’ নামে একটি উগ্রবাদী ফোরামের নির্দেশনায় লেখক ও অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে হামলাকারী ফয়জুল। ওই গ্র“পে জাফর ইকবালকে হত্যা করা নিয়ে নিয়মিত আলোচনাও হতো বলে জানিয়েছে সে। নির্দেশনা পাওয়ার পর ফয়জুল সিলেটের মদিনা মার্কেটের একটি জিমে শারীরিক প্রশিক্ষণের জন্যও ভর্তি হয়েছিল। কীভাবে হামলা করতে হবে এবং কোথায় আঘাত করলে দ্রুত মৃত্যু হতে পারে, দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরামে সেসব কৌশল নিয়েও আলোচনা করা হয়েছিল। এদিকে হামলার চূড়ান্ত নির্দেশনা পাওয়ার পর সিলেটের জিন্দাবাজারের আল-হামরা মার্কেটের একটি দোকান থেকে কমান্ডো নাইফটি (চাকু) কেনে ফয়জুল। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।