আল-হেলাল সুনামগঞ্জ থেকে :
বিশিষ্ট লেখক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও জনপ্রিয় লেখক ড.জাফর ইকবালের উপর শনিবার ৫টা ৪০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যলয় ক্যাম্পাসে ছুরিকাঘাত করা হয়। এর পরেই হামলাকারী ফয়জুল হাসান এর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পর সারা দেশের মত ফয়জুলের নিজ গ্রাম সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায় কালিয়ার কাপন গ্রামে চলছে তুমুল আলোচনা সমালোচনার ঝড়। ফয়জুল রহমানের এমন ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দার পাশাপাশি তার শাস্তির দাবী জানিয়েছে জেলার কালিয়ার কাপন গ্রাম ও দিরাই উপজেলাবাসী। অনেকেই তার ও তার পরিবারের আপন চাচাদের বিষয়েও জানাচ্ছেন নানা অজানা কথা।
এছাড়াও জাফর ইকবালের উপর হামলাকারী ফয়জুলের নিজ গ্রামে কালিয়াকাপন সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে এলাকাবাসী ফয়জুলকে কালিয়ারকাপন, দিরাইবাসী নয় সমগ্র বাংলাদেশের কলংক বলে আখ্যায়িত করে তীব্র ঘৃনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেই সাথে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান সবাই। এদিকে ফয়জুরকে রবিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে র্যাবের ৯ এর একটি দল সিলেট কোতোয়ালী থানা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহাকারী কমিশনার (এসি,কোতোয়ালী) সাদেক কাওসার দস্তগীর ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গৌছুল হোসেন এর কাছে হস্তান্তর করেছেন।
স্কুল জীবনে ফয়জুল হাসান শৈশবেই ছিল মেধাবী। শুরুতেই কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে শুরু করে তার শিক্ষা জীবন। সে দিরাই উপজেলায় তারাপাশা মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পরে ভর্তি হয় ধল দাখিল মাদ্রাসায়। এরপর ২০১১ সালে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হয় জেডিনি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৭৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এরপর ২০১৪ সালে দাখিল পরীক্ষায় ৪.৫৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। দাখিল পাস করার পর কেউ তার শিক্ষা জীবন নিয়ে জানতে পারেনি।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় কালিয়ার কাপন গ্রামের একবারে দক্ষিণ দিকে লম্বা দুটি দালান বিশিষ্ট বসতঘরের আলাদা বাড়িতে পরিবারের লোকজন নেই সবকটি ঘর তালাবদ্ধ। পাশের বাড়িতে রয়েছে ফয়জুরের ফুফু রেহানা বেগম। তিনি কান্নাকাটি করছেন। ফয়জুল হাসান ফয়জুলের পিতা হাফিজ মাওলানা আতিকুর রহমান পরিবার নিয়ে সিলেট থাকেন। এলাকায় পরিচিতি রয়েছে তার কুরেশ আলী নামে। ৩ ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। ফয়জুল হাসান তাদের মধ্যে ৩য়। ফয়জুলের বড় ভাই এনামুল হাসান ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করে। মেঝ ভাই আবুল হাসান কুয়েত প্রবাসী। কিছু দিন পূর্বে ফয়জুল হাসানের বাবা সিলেট শহরের কুমারগাঁও এলাকায় শেখ পাড়ায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিজস্ব বাসা তৈরী করে বসবাস করছেন। এখানে ফয়জুলও বসবাস করছিল। সিলেটে বসবাস করায় গ্রামের বাড়ি কালিয়ারকাপনে একবারেই কম যোগাযোগ ছিল। ফয়জুল মাঝে মাঝে শহরের ফেরী করে কাপড় বিক্রি করত। ফয়জুলের দাদা একজন খুবই ভাল মানুষ হলেও তার সন্তান (ফয়জুলের চাচা) জাহার মিয়া ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফতোয়াবাজীর অভিযোগে ও এলাকায় মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় তাকে এলাকা থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর আর গ্রামে আসেননি। তিনি বর্তমানে কুয়েত প্রবাসী। ফয়জুলের চাচা জাহার মিয়া ও আব্দুল কাহার আহলে হাদিস ধারার অনুসারী। তারা দীর্ঘদিন ধরেই কুয়েতে থাকেন।
ফয়জুল হাসান সম্পর্কে কালিয়ার কাপন গ্রামের স্থানীয় এলাকাবাসী জানান,গত কয়েক বছর ধরেই ফয়জুল মাঝে মাঝে এলাকায় এসে ফেরী করে কাপড় বিক্রি করত। এছাড়াও আনুমানিক ৫ বছর পূর্বে মাজহাব বিরোধী মতাদর্শ নিয়ে কথাবার্তা বলতে গিয়ে স্থানীয় মুসল্লিদের বাধায় মসজিদ থেকে বের কওে দেয়া হয় তাকে। এরপর আর ফয়জুল গ্রামে ফিরে যায়নি।
গ্রামের বাসিন্দা যুবলীগ নেতা লুৎফুর রহমান চৌধুরী জানান, ফয়জুল তার চাচা জাহারের পথ ধরেই তার মতাদর্শ গ্রামের লোকজনের মাঝে মসজিদের প্রচারনা চালায়। গ্রামের কিছু কিছু মানুষ লক্ষ্য করেন তারা (চাচা জাহার ও ভাতিজা ফয়জুল) স্বাভাবিক ভাবে সবাই নামাজ পড়লেও তারা সে নিয়মে নামাজ পড়ে নি। এনিয়ে গ্রামের মুসল্লিদের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়। এক প্রর্যায়ে তাদের মসজিদে নামাজ আদায় করতে বাধা দেওয়া হয়। এক সময় তাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করাও হয়। এরপর তারা এলাকা ছেড়ে চলে যায়। মাঝে মাঝে ফয়জুল হাসান লুঙ্গি,গামছা বিক্রি করার জন্য এলাকায় আসত।
কালিয়াকাপন গ্রামের জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ হাবিবুর রহমান জানান, আমি ৩-৪ বছর ধরে এই এলাকার মসজিদে ইমামতি করছি। লোক মুখে শুনেছি ফয়জুল ও তার দু চাচা মাজহাববিরোধী প্রচারনা চালালে সুন্নি মতাবলম্বী মুসল্লিরা তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করেন। এরপর তারা আর মসজিদে নামাজ পড়তে আসত না।