কাজিরবাজার ডেস্ক :
জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ডিভিশন দেয়া হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন।
রবিবার সন্ধ্যায় এ কথা জানান তিনি।
কারা অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, খালেদা জিয়াকে কারাগারে ডিভিশন দেয়ার জন্য কোর্টের আদেশের কপি তাদের কাছে পৌঁছেছে। সেই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এখন থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে খালেদা জিয়াকে।
এর আগে দুপুরে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে আইজি প্রিজন জানিয়েছিলেন, তখন পর্যন্ত আদালতের কোনো আদেশ তারা পাননি। তাই কারাবিধি অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে সাধারণ বন্দির মতো রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়াকে কারাগারে ডিভিশন না দেয়ার বিষয়ে বিএনপির অভিযোগের পর রবিবার কারা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান আইজি প্রিজন।
শনিবার বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, কারাগারে খালেদা জিয়াকে প্রথম শ্রেণির বন্দীর মর্যাদা দেয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষিতে ব্রিফিংয়ে আইজি প্রিজন বলেন, কারাগারে প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা (ডিভিশন) পাওয়ার যে দুটি ক্রাইটেরিয়া দেওয়া রয়েছে, তার কোনোটিতেই খালেদা জিয়া পড়েন না।
‘কারাবিধির ৬১৭ উপবিধিতে বলা হয়েছে শুধু সাবেক রাষ্ট্রপতির কথা, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কথা সেখানে নেই।’
কারাবিধি অনুযায়ী সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলের সংসদ সদস্য, দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পাবেন। তবে বিএনপি সংসদে প্রতিনিধিত্ব না করায় খালেদা জিয়াকে সেভাবেও বিবেচনা করা হয়নি বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
ইফতেখার উদ্দীন বলেন, ‘যেহেতু ৮ তারিখের রায়ের সাথে রেকমেন্ডেশন আসেনি, তাই তাকে জেল কোড অনুযায়ী যেটা আছে, আপাতত সে অনুযায়ী সাধারণ বন্দি হিসেবেই রাখা হয়েছে।’
আজ রবিবার বিএনপি নেত্রীর আইনজীবীদের পক্ষ থেকে এক আবেদনের পর আদালতে খালেদা জিয়াকে ডিভিশন দেয়ার আদেশ দিয়েছে।
এ ব্যাপারে আইজি প্রিজন বলেন, ‘টিভিতে দেখেছি একটা অর্ডার হয়েছে কোর্ট থেকে। সেটা হাতে পেলে তখন বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
গত বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত। সেখান থেকে তাকে নেয়া হয় নাজিমউদ্দিন রোডে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে।
এদিকে দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের রায়ের সার্টিফাইড কপি না পাওয়ায় রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আর জামিনের আবেদন করা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রায়ের পরপর বিএনপি নেত্রীর আইনজীবীরা রবিবারের মধ্যে আপিল করার কথা জানিয়েছিলেন। আর এ জন্য বৃহস্পতিবারই রায়ের অনুলিপি অথবা ফটোকপি পাওয়ার জন্য আবেদন করেন তারা।
বৃহস্পতিবার রায়ের পর থেকেই খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। আর তৃতীয় দিনে রবিবার আদালতের আদেশে তাকে প্রথম শ্রেণির বন্দির মর্যাদা বা ডিভিশন দেয়া হয়।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আশায় ছিলেন আজকের মধ্যে আপিল করে জামিন আবেদন করতে পারলে দ্রুত তাকে জামিনে মুক্ত করা যাবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করে জামিন আবেদন করলে তিনি জামিনে মুক্তি পাবেন বলেই আশা করছে তার আইনজীবীরা। কিন্তু আপিল ও জামিনের আবেদন করতে না পারায় বন্দী জীবন কিছুটা দীর্ঘায়িত হলো।
বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী জাকির হোসেন ভুইয়া বলেন, ‘রায়ের কপি আজও আমরা পাইনি। এখনো প্রস্তুত হয়নি বলে ওই আদালতের পেসকার আমাদেরকে জানিয়েছেন। আশা করি কাল পেতে পারি।’
সার্টিফাইড কপি না পেলেও আপিলের কিছু কাজ এগিয়ে রাখছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। কিছু যুক্তি তারা নির্দিষ্ট করেছেন। তবে সার্টিফাইড কপি না পেলে সব কিছু চূড়ান্ত করা সম্ভব নয়।
আইনজীবীরা জানান, সার্টিফাইড কপি রবিবার যোগাড় হলে কোন কোন যুক্তিতে আবেদন করা হবে, সেটি সুনির্দিষ্ট হতে হবে। পূর্ণাঙ্গ রায়টি ৬৩২ পৃষ্ঠার। এটির খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করতে হবে। এ জন্যই কিছু সময় লাগবে।
১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসার পর এতিমদের কল্যাণে বিদেশ থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা অস্তিত্বহীন ট্রাস্টের নামে বরাদ্দ করার অভিযোগে করা মামলায় মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান।
এ মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তারা হলেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমদ। এদের মধ্যে এর মধ্যে তারেক রহমান, কামাল সিদ্দিকি ও মমিনুর রহমান পলাতক। আর সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন কারাগারে।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলার শুনানি শেষ পর্যায়ে। ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় এখন যুক্তি উপস্থাপন চলছে। আগামী ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় যুক্তি উপস্থাপনের দিন নির্দিষ্ট আছে।
এই দুইটি মামলাসহ বিএনপি প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মোট মামলা পাঁচটি। আর আন্দোলনের সময় নাশকতা, ভুয়া জন্মদিন পালন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিকৃত তথ্য দেয়া, মানহানিসহ মোট ৩৬টি মামলা আছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে।