বিয়ানীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রায় দেড় হাজার পরিবার এখনো বিদ্যুৎবঞ্চিত। এ জনগোষ্ঠী শুধু বিদ্যুৎ বঞ্চিত নয়, প্রতারণারও শিকার। বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার নামে প্রবাসী অধ্যুষিত এ এলাকা থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে লাখ লাখ টাকা। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রচেষ্টায় বঞ্চিত এসব পরিবারে বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে উপজেলায় মোট ৪৮ হাজার ৬৭টি বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। বিয়ানীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষের দাবি, নতুন বছরের মধ্যে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
এখানকার কোনো গ্রামই এখন বিদ্যুতায়নের বাইরে নয়। সব গ্রামে বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি। এদের কেউ নতুন বাড়ি করে অন্যত্র সরে গেছেন, কেউবা আবার একান্নবর্তী পরিবার থেকে পৃথক হয়েছেন। সব মিলিয়ে এখনো উপজেলায় প্রায় দেড় হাজার পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত থাকতে পারে বলে জানান স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) অভিলাস পাল।
উপজেলা পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্যানুযায়ী, মোট ২১৫টি গ্রামের মধ্যে সব গ্রামেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। তবে যেসব গ্রামে ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে, সেসব গ্রামেও শতভাগ পরিবারে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়নি। সে হিসেবে আংশিক এবং পুরো গ্রাম মিলিয়ে এখনো প্রায় দেড় হাজার পরিবার বিদ্যুতের আওতায় আসেনি।
যদিও গত কয়েক মাসে উপজেলার গজুঁকাটা, গয়লাপুর, হাজরাপাড়া, উলুউরি, গুড়েরটেকা, কোনা শালেস্বর, খলাগ্রামসহ আরো অন্তত ৩টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। দুবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম জানান, তার ইউনিয়নের একাধিক গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে শিক্ষামন্ত্রী অনেক পরিশ্রম করেছেন। তবে এখনো পর্যন্ত যেসব পরিবার বিদ্যুৎ পায়নি তাদের সংযোগ দেয়ার চেষ্টা চলছে।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে খুঁটিতে তার টানানো হলেও লোকজনের ঘরে এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। কবে উপজেলার সব পরিবার বিদ্যুৎ পাবে তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারেননি। বিয়ানীবাজার পল্লী বিদুৎ অফিসের পরিচালক মো. শফিউল হক জানান, ‘বিয়ানীবাজারের ৫২ কিলোমিটার এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে কিলোমিটারের দিক দিয়ে অনেক বেশি হলেও এ হিসাব বিচ্ছিন্ন।’ বিয়ানীবাজার পৌর এলাকার চালিকোনা, কদুগঞ্জ, লাসাইতলা, কালাইউরা, চন্দগ্রাম, ফুলমলিক, কাদিমলিক এলাকার অনেক বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। তাদের জনজীবন প্রায় অচল।
চারখাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী জানান-তার ইউনিয়নের ঘোলাঘাট, বিলওয়া, পানচক, আদিনাবাদকোনা, দক্ষিণ হাজরাপাড়ায় এখনও বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। শেওলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আখতার হোসেন খান জাহেদ বলেন, তার ইউনিয়নের পশ্চিম শালেশ্বর, দাউদপুর ও খাসদত্ত গ্রামের উত্তরাংশে বিদ্যুৎ নেই।
বিয়ানীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) অভিলাস পাল এবং এলাকা পরিচালক শফিউল হক বলেন-যেসব পরিবারে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি, সেসব গ্রামে চলতি বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
তারা জানান, বিদ্যুৎ বঞ্চিত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিরোধ, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির উপর দিয়ে লাইন টানতে নিষেধ এবং নতুন বাসাবাড়ি নির্মাণের কারণে অনেক পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।