নিজাম নুর জামালগঞ্জ থেকে :
সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওরের আভ্যন্তরীণ জলাবদ্ধতায় ৭ হাজার হেক্টর বোরো চাষ এবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা জলাবদ্ধতা হাওরে তীব্র আকার ধারণ করেছে। বছর বছর জলাবদ্ধতা বাড়তে থাকায় পানির নিচে পতিত হচ্ছে বোরো জমি। কৃষকদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন বোরো জমি বছরের পর বছর পানিতে তলিয়ে থাকায় বিকল্প কর্মসংস্থানের খুঁজে এলাকা ছেড়েছেন সহস্রাধিক কৃষক পরিবার। জলাবদ্ধতা নিরসন না হওয়ায় শংকিত হয়ে পড়েছেন কৃষকগণ। গেল বছর ফসল হারিয়ে কৃষকগণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সরকার হাওর উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও পাগনার হাওরের আভ্যন্তরীষণ জলাবদ্ধতা নিরসনে কোন ফলপ্রসূ উদ্বেগ গ্রহণ করা হয়নি। উপজেলার পাগনার হাওর অন্তর্ভুক্ত সদর ইউনিয়ন, ভীমখালী ইউনিয়ন ও ফেনারবাক ইউনিয়নের পূর্বাংশের হাওরগুলোর জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত ৭ হাজার হেক্টর জমির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র রাস্তা কানাইখালি নদী। ফেনারবাক ইউনিয়নের প্রবাহমান কানাইখালি নদী লক্ষ্মীপুর, শান্তিপুর হয়ে ভুতিয়ারপুরে নালা দিয়ে সুরমা নদীতে পানি নিষ্কাশন হত। অপর দিকে কানাইখালি নদীর আরও একটি নালা শান্তিপুর গ্রামের কালীবাড়ী হয়ে পাগনার বিল হয়ে গাজারিয়া স্লুইস গেইট ও ডালিয়ার স্লুইস গেইট দিয়ে পানি নিষ্কাশন হত। কালের বিবর্তনে পলি মাঠি পড়ে ভুতিয়ারপুর ও গজারিয়া স্লুইস গেইটের উভয় দিক ভরাট হয়ে যায়। একমাত্র ডালিয়ার স্লুইস গেইট দিয়েই পুরো পাগনার হাওরের পানি নিষ্কাশন চলমান রয়েছে। বর্তমানে জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত এরিয়ার পানি কানাইখালি নদী থেকে পাগনা বিল হয়ে ডালিয়া স্ল্ুইস গেইট পর্যন্ত যেতে লক্ষ্মীপুর গ্রামের পাশের বাঁধ মইশাকুড়ি বাধ ও কানাইখালি নদীর শাখা শান্তিপুর কালীবাড়ীর নালাটি অপেক্ষাকৃত ছোট ও ভরাট থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এই বাঁধটিকে গিরে স্থানীয় কৃষক ও জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত কৃষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত কৃষকদের অভিযোগ পাগনা বিল অর্ন্তভুক্ত হাওরের লক্ষ্মীপুর, ফেনারবাক শান্তিপুর গ্রামের কৃষকরা তাদের কৃষি কাজে সুবিধার্থে উপরের অর্থাৎ জলাবদ্ধ এরিয়ার পানি আটকে রাখেন। অপর দিকে উপরোক্ত ৩ গ্রামের কৃষক লক্ষ্মীপুর মইশাকুড়ি বাঁধ কেটে পানি চলাচলের করলে ফসল ফলাতে আমাদের দেরী হয়ে যায়। উপরের পানি আমাদের ফসলের ক্ষতি করে। শান্তিপুর কালীবাড়ী নালা দিয়ে পানি নিষ্কাশন করতে তাদের কোন আপত্তি নেই বলে জানান। উপরোক্ত বিষয় বিশ্লেষণ ও বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে জানা যায়, কানাইখালি নদীর শান্তিপুর কালীবাড়ীর নালাটি খনন করে বাইপাস গজারিয়া স্লুইস গেইট দিয়ে সুরমা নদীতে পানি নিষ্কাশন হলে কারো কোন সমস্যা হবে না। উপরের জলাবদ্ধতা স্থায়ী ভাবে নিরশন হবে। পাগনা বিল অন্তর্ভুক্ত কৃষকদের উপরের পানি দ্বারা ফসলের কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকবে না। চলতি বোরো মৌসুমে চাষাবাদের জন্য ভুতিয়াপুর কানাইখালি নদীতে পল্টন বসিয়ে পানি নিষ্কাশন করার আবেদন জানান।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আল ইমরান বলেন, স্থানীয় কৃষকদের সাথে মতবিনিময় করেছি সমস্যার জায়গাগুলো চিহ্ন করে পানি নিষ্কাশনের কাজ চলছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।