॥ আবু মালিহা ॥
(পূর্ব প্রকাশের পর)
আর ক’দিন বাদেই শিশিরের বার্ষিক পরীক্ষা। তাই পড়াশুনায় মনোযোগ দিতে হবে। ক্লাসের স্যারদের খুব ইচ্ছে, সে ভালো রেজাল্ট করবে। তাই সে ও মনোযোগের সাথে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের রেজাল্ট ভালো হওয়ায় এবার তার উৎসাহ আরো বেড়ে গেলো। কিন্তু পড়ার ফাঁকে কেনো জানি তার মনটা উড়ো উড়ো হয়ে যায়। কোনো এক ভালো লাগার আবেগ আর অনুভূতি তাকে নাড়া দিয়ে যায়। গত রেজাল্টের আগে তার সেই খালাতো বোনের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে সেই ভালো লাগাটা আরো উদ্দীপনা পেলো। মনের গভীরে তারই ছবি আঁকতে লাগলো দিগন্ত নীল আকাশের মত।
একদিন খালার বাড়ীর আঙ্গিনায় সে ঘুরে ঘুরে আশপাশ দেখছিল। হঠাৎ করে তার চোখে পড়লো দূরে কে যেন আসছে। ঠাহর করতে পারছিলো না, কে সে …। যতই কাছে আসছিল ততই তার মনের জানালা খুলে গেলো। সে দেখছিলো আর দেখছিলো, এইতো সেই মনিরা। যাকে সে দু’বছর আগে পরীক্ষা শেষে এসে দেখে গিয়েছিল আর এরই মধ্যে দু’বছরে বেশ ডাঙ্গর হয়ে গেলো। সুমিষ্ট চেহারা, দীঘল কালো চোখ, কুচকুচে কালো লম্বা কেশ, হাসির ঝলক যেন বিদ্যুৎ চমকের মতো। রূপের বাহার যেন উছলে উঠেছে। বাড়ন্ত চেহারার এ জৌলুস তার মনকে যেন প্রবোধ মানাতে পারছিলো না… উন্মনা মন তার ভালোবাসার দিগন্তে উড়ে গেলো উড়ন্ত বলাকার ডানা মেলে। সে আর নিজেকে সামলে নিতে পারছেনা।
তাই পড়ার টেবিলে মন আর পড়ায় থাকলো না। বারে বারে ফিরে যায় তার খালার বাড়ীর আঙ্গিনায়। কী যেন অপরূপ প্রেয়সীর মতো তার দিকে নজর রাখছিলো। শত হোক উঠতি বয়সের আবেগ আর উচ্ছ্বাস এমনই হয়ে থাকে। কবির কল্পনা এখানেই দুমড়ে মুচড়ে যায়। ভাবনার অতল তলে খেই হারিয়ে ফেলে ভালোবাসার ঢেউয়ের তালে। তরঙ্গে উদ্বেলিত হয়ে মাঝ দরিয়ার ডিঙ্গি নায়ের মতো। যেন এ হৃদয় দোলা শান্ত হতে চায়না। রূপ নগরের কন্যার মত সেও এলোকেশে জড়িয়ে যায় শিহরনের আঁচল উড়িয়ে। নাহ… ভাবনাগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে!
একটু পরে মা এসে তার পিঠে হাত রাখতেই সে চমকিত হয়ে মা’য়ের দিকে তাকালো। বললো… মা’ কি … কিছু বলবে। না বাবা, তুই দেখছি একদম চুপচাপ বসে আছিস! কী… মন খারাপ। কী হয়েছে, একদম গম্ভীর হয়ে বসে আছিস। শিশির বলল, না- মা, এমনিতেই ভাবছিলাম। পড়া তৈরী করছি। মায়ের মন, কিছুটা হলেও বুঝতে পারছেন, ছেলের হৃদয়ের কথা, কিছু না বলেই তিনি তার কাজে চলে গেলেন। এবং তিনি সে দিকটা একটু ভাবছেন…।
দেখতে দেখতে শিশির এবার এসএসসি’র রেজাল্ট খুব ভালো করেছে। তাকে নিয়ে স্কুলে বেশ সাড়া পড়ে গেলো। সেই একমাত্র এ প্লাস পেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে। বাকী সাতজনের মধ্যে সবাই ‘এ’ পেয়েছে। তাই তাকে নিয়ে একটু বেশীই সবার আলোচনা। প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রী সবাই তার রেজাল্টে প্রশংসা করছে। কেননা তার রেজাল্টের সাথে যে স্কুলের সুনাম জড়িত। স্কুল কমিটিও ঘোষণা করলো ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা দিবে। স্কুলের গৌরবময় ফলাফলে সবাই খুশি। এবং স্কুলের উন্নতির ব্যাপারেও প্রশাসনের একটা ভালো বরাদ্দ পাবে বলে আশা করছে। কারণ গত বছর স্কুল পরিদর্শন শেষে জেলা কর্মকর্তা এসে আশ^াস দিয়ে গিয়েছিলেন যদি স্কুল ভালো ফলাফল করতে পারে। তাই এবার সবাই সে আশাতেই আছেন।
ওদিকে মনিরার বাবাও বসে নেই মেয়ের পড়াশুনা এবং ভালো রেজাল্ট করানোর ব্যাপারে খুবই যতœবান। মেয়েও পড়াশুনায় খারাপ নয়। তবে অংকের মাথা দুর্বল বলেই সে আশাও করতে একটু দমে যায়। তবে একটু গাইড পেলে আবার তা কাটিয়ে উঠতে পারবে। তবে তার স্কুলে এমন ভাল অংকের স্যার নেই যে তাকে তার মতো করে বুঝাতে পারে। সে দিক থেকে একজনই আছে। আর সে হচ্ছে শিশির। এসএসসি’র অংকে সে ৯৮ পেয়েছিল এবং স্কুলের সেরা। মাঝে মধ্যে তার অংক স্যারও তার থেকে বুঝে নিতেন। যাই হোক। এ ব্যাপারে মনিরার মা কিন্তু জানতেন অংকে শিশিরের মাথা আছে। তাই মেয়ের ভালো রেজাল্টের জন্য একদিন মনিরার বাবাকে বললো, শিশির তো এসএসসি ভালো রেজাল্ট করেছে এবং অংকে সবার চাইতে বেশী নম্বর পেয়েছে। এখন তো আর তার স্কুল নেই বরং কলেজে ভর্তি হবে তাও দু’মাস বাকী। এ সময়টুকু যদি মনিরাকে একটু পড়াশুনা দেখাতো তবে সে আর অংকে কাঁচা থাকবে না। মনিরার বাবার কথাটি মনে ধরলো। বললো বেশ তো তাকে বেড়াতে আসতে বলতেই পারো। যে কয়দিন থাকবে, তাকে একটু দেখাতে পারবে। মেয়েও আমার বুঝে নিতে পারবে। তাই তুমি তাকে বলো, ক’টা দিন ঘুরে যেতে। আর এ সময়টুকু ভালোও লাগবে তার। এদিকে মনিরাও তার খালার বাড়িতে গত দু’বছরের মধ্যে যায়নি। তাই মাও তাকে সাথে নিয়ে তার খালার বাড়িতে চলে এলো বেড়াতে। উদ্দেশ্য বোনকে বলে ছেলেটাকে তাদের বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া। আর সেই ফাঁকে মনিরার পড়াশুনা একটু দেখা। (অসমাপ্ত)