কাজিরবাজার ডেস্ক :
চলতি মৌসুমে সিলেটের চার জেলায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে পাকা ধান কাটা। ফলে ব্যস্ততা বেড়েছে গ্রামের কৃষাণ-কৃষাণির। কয়েক দিন জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ‘গত দু’বছরের তুলনায় এ বছর আমনের ফলন ভালো হয়েছে। ধানে চিটাও কম। এ কারণে বেশ ভালো ধান উঠবে।’
তারা জানান, এ বছর আমন মৌসুমের শুরুর দিকে হঠাৎ বন্যায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দুই বার বীজতলা তৈরি করতে হয়েছে। তবে পরবর্তীতে আবহাওয়া অনুকূল হওয়াতে ধানে ক্ষতি হয়নি। এক্ষেত্রে যারা বিলম্বে আমন রোপন করেছেন তাদের ভালো ফলন হয়েছে। বিশেষ করে, নিম্নাঞ্চলের তুলনায় উঁচু এলাকাগুলোতে বেশি ধান হয়েছে বলেও জানান কৃষকরা।
এদিকে গ্রামের কৃষকরা ধান কাটার প্রস্তুতি হিসেবে খোলা মাঠে তৈরি করেছেন খলাও। চলতি সপ্তাহ থেকে ধান কাটা শুরু হওয়া খলায় উঠছে নতুন ধান। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির উঠোনও ভরে যাচ্ছে ধানের গোছায়। আবার অনেক জায়গায় ধান মাড়াইয়ের পর তা রোদে শুকাতে দেখা গেছে।
আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৭১ হাজার ৫৬৪ হেক্টর জমিতে। এর চেয়েও বেশি জমিতে ফসল ফলিয়েছেন চাষিরা। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৯ লাখ ৫২ হাজার ৮১২ মেট্রিকটন এবং তা সহসাই পূরণ হচ্ছে- মন্তব্য সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদের।
তিনি বলেন, ‘সিলেট জেলায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৪৪৩ মেট্রিকটন, মৌলভীবাজারে ৯৯ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪০ মেট্রিকটন, হবিগঞ্জে ৭৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৬৯৩ মেট্রিকটন এবং সুনামগঞ্জে ৬১ হাজার ৬৯৪ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৩৬ মেট্রিকটন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে মাঠে নেমেছিলাম। কৃষকদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে’।
হাওর অ্যাডভোকেসি প্লাটফর্মের তথ্য অনুসারে, বন্যায় বোরো আবাদের ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে সিলেটে ৪৫০ কোটি টাকা, সুনামগঞ্জে ১ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা, হবিগঞ্জে ৬৬১ কোটি টাকা ও মৌলভীবাজারে ২৪৬ কোটি টাকা।
ফসলের মাঠের এ হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে পড়েছে চাষিদের ঘরে ঘরেও। ব্যাপক এ ক্ষয়-ক্ষতির পর সব হারানো কৃষকেরা রোপা আমন আবাদে মনোযোগী হন। আশানুরূপ ফলনে সে ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নপূরণের আনন্দে ভাসছেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. আলতাবুর রহমান আরো জানান, ‘শতভাগ ধান কাটা শেষ হলে চলতি আমন মৌসুমে সিলেটে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ধান উৎপাদন হবে। পুরোপুরি ধানকাটা শেষ হতে নভেম্বর চলে যাবে বলেও জানান তিনি।’
তিনি আরো জানান, ‘বোরো মৌসুমে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেই ক্ষতি পুষিয়ে তুলতে আমন মৌসুমে সরকার কৃষকদের বিভিন্ন ধরণের প্রণোদনা দিয়েছিল। তাছাড়া সরকার থেকে বীজ ও সার সহায়তা দেয়ায় তারা উপকৃত হয়েছেন। পাশাপাশি অনুকূল আবহাওয়া এবং রোগ-বালাই না থাকায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।’