মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সাতগাঁও বাজারে বৈধকাগজপত্র না দেখে চা ব্যবসায়ীর দোকান ও গুদামে অভিযান চালিয়ে ৩২০ বস্তা চা আটক করে নিয়ে যায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
চা পাতা আটকের পর ব্যবসায়ীর রোষানলে পড়ে বিজিবি। পরে ৩২০ বস্তা চা পাতা বিজিবি ফেরত দিয়ে খালি হাতে ক্যাম্পে ফিরে যেতে হয়।
শ্রীমঙ্গল সেক্টরের অধীনস্থ ৫৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের লে: কর্ণেল মঈনের নেতৃত্বে ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশেকুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও বাজারে এ অভিযান চালানো হয়।
৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় শ্রীমঙ্গল সাতগাঁও বাজারে বিজিবির শুরু হওয়া এ অভিযান চলে রাত ৯ টা পর্যন্ত। এ সময় শরীফ টি হাউস, লিটন টি হাউস, বিসমিল্লাহ টি হাউস, শিমুল চা ঘর এর চারটি চা পাতা গুদামের তালা ভেঙ্গে মোট ৩৪৮ বস্তা চাপাতা নিয়ে যায় বিজিবি।
বিজিবি-৫৫ ব্যাটালিয়নের লে: কর্ণেল মঈন জানান, গোপন সূত্রে বিজিবি জানতে পারে সাতগাঁও বাজারে অবৈধ চা পাতা ব্যবসা হচ্ছে। সে অনুযায়ী বাজারে কয়েকটি চা পাতার দোকান ও গুদামে অভিযান চালায়।
তবে বিজিবির উদ্ভুত পরিস্থিতি দেখে শ্রীমঙ্গল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশেকুল হক ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তিনি বলেন, বিজিবি তার কোন কমান্ড না মানায় তিনি চলে আসেন। এমনকি থানা পুলিশের কোন কথাই শুনতে নারাজ ছিল বিজিবি।
এদিকে সাতগাঁও বাজারের ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে। খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সম্পাদক এম ইদ্রিস আলীসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং বিজিবি আটককৃত মালামাল ফেরত দিবে বলে ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। রাত সাড়ে ১২টায় সাবেক চীফ হইপ ও স্থানীয় সাংসদ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি’র নির্দেশে শ্রীমঙ্গলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবাশশেরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। রাত দেড়টায় আটককৃত মালামাল বিজিবি বুঝিয়ে দিয়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের সহকারী পুলিশ সুপার খন্দকার আশরাফুল ইসলাম, ওসি কেএম নজরুল ইসলাম, ভূনবীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান চেরাগ আলী,সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়,কালাপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. হারুন মিয়া, শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এএসএম ইয়াইয়া ও সম্পাদক মো. কামাল হোসেন প্রমুখ।
শ্রীমঙ্গল সাতগাঁও বাজারের চা পাতা ব্যবসায়ী ও সাতগাঁও ব্যবসায়ী সম্পাদক আলমগীর মিয়া জানান, ‘বিজিবি একটি টিম ৪টি চা পাতার গুদামে তালা ভেঙ্গে মালামাল গাড়ীতে উঠাতে থাকে। আমরা বলি আমরা যে কয়জন চা ব্যবসায়ী আছি প্রত্যেকের চা পাতার লাইসেন্স আছে। আর যে চা পাতা ক্রয় করছি আমাদের এ্যাকশনের কাগজ পত্র আছে। বিজিবি আমাদের কাগজপত্র দেখতে চায় না। উল্টো বলে যে, কেউ কথা বললে গুলি করে দিব। তাদের আচরণে আমরা শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতিকে বিষয়টি অবগত করি। তারা ঘটনাস্থলে এসে বিজিবির সাথে কথা বলতে চাইলে তারা কোন জবাব দিব না বলে জানায়। কারো কোন কাগজপত্র থাকে বা কোন কিছু বলার থাকে তাহলে ক্যাম্পে এসে কথা বলতে। পরে ব্যবসায়ী সমাজ উত্তপ্ত হয়ে উঠে ও দেকানপাট বন্ধ করে রাস্তায় অবস্থান করে।’
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি কেএম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘৩২০বস্তা চা পাতা একটি গুদামে রাখা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে কাগজপত্র দেখে মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হবে।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবাশশেরুল ইসলাম বলেন, ‘বিজিবি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। আমি ক্ষমা নিয়ে নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীর হিসাব মতো ৩৪৮ বস্তা। ছোটবড় বস্তা থাকায় বিজিবি নেয়ার সুবিধার্থে একবস্তা ৪টি বস্তা রাখা হয়েছে। মূলত সবমালা অর্থাৎ ৩২০ বস্তা চা পাতা ফেরত দিয়েছে। পুলিশ কাগজপত্র যাচাই করে প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হবে।’