স্টাফ রিপোর্টার :
অবৈধ ফুটপাত দখলদার ও তাদের আশ্রয়দাতা ২৫ ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী নগরীতে দাপটের সাথে প্রকাশ্যে ঘুরেফেরা করছে। এর মধ্যে ১৭ দিন পর সিলেট মহানগর হকার্স কল্যাণ সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি মো: মোখলেছুর রহমান মোখলেছকে (৫৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত সোমবার রাত ১১ টার দিকে নগরীর বন্দরবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ গ্রেফতারকৃত মোখলেছুর রহমানকে ওয়ারেন্ট মুলে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। পরে আদালতের বিচারক মো: সাইফুজ্জামান হিরো তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। গ্রেফতারকৃত মোখলেছুর রহমান নগরীর শিবগঞ্জ এলাকার আগপাড়া ১০৪ নং বাসার মৃত হারুনুর রশিদের পুত্র। তার মুল বাড়ী হবিগঞ্জে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত প্রধান আসামী ও নগরীতে অবৈধ ফুটপাত দখলদার আশ্রয়দাতার মুল হোতা সিলেট মহানগর হর্কাস কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি রকিব আলীকে আওয়ামীলীগের মিছিলে দেখা গেছে। কিন্তু পুলিশ রহস্যজনক কারণে আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকা স্বত্ত্বেও তাকে গ্রেফতার করতে পারছে না। অনেক সময় রকিব আলী আদালত পাড়া এলাকায় তার দলবল নিয়ে ঘুরাফেরা করতেও দেখা যায়।
গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌছুল হোসেন জানান, সোমবার রাতে পুলিশ ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী মোখলেছুর রহমান মোখলেছকে গ্রেফতার করে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মোখলেছুর রহমান ছাড়া অপর গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত ২৫ আসামীরা হচ্ছে- সিলেট মহানগর হকার্স কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি রকিব আলী, সহ-সভাপতি আতিয়ার রহমান, শফিক আহমদ, মো: আব্দুল বাশার, রুহুল আমিন রুবেল, মো: আব্দুল আহাদ, সাধারণ সম্পাদক খোকন ইসলাম, জিন্দাবাজার মুক্তিযোদ্ধা/ কোর্ট পয়েন্ট অটোরিকশা ষ্ট্যান্ডের আহবায়ক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুমন আহমদ, আহবায়ক কামরুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক মো: ইসলাম উদ্দিন, শফিক উদ্দিন, মধুবন পয়েন্ট ইমা/ লেগুনা ষ্ট্যান্ডের সদস্য সচিব ইউসুফ আলী, সভাপতি সোহাগ মিয়া, সহ-সভাপতি মো: আদিল, সাধারণ সম্পাদক মো: কবির মিয়া, রংমহল টাওয়ার অটোরিক্সা/ সিএনজি ষ্ট্যান্ডের অর্থ সম্পাদক মো: বাবুল মিয়া, সভাপতি মো: আজমল হোসেন, তামাবিল (ধোপাদীঘিরপার) ইমা/ লেগুনা ষ্ট্যান্ডের সহ-সভাপতি মো: মুরাদ হোসেন, সভাপতি মো: সাহাব উদ্দিন সাবু, সহ-সভাপতি ফয়জুল মিয়া, কার্যকরী সভাপতি মো: নাজিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মো: বদরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আ: নুর হিরন, কোষাধ্যক্ষ মো: আব্দুর রশিদ এবং অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন আম্বরখানা-সালুটিকর শাখার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য তেরা মিয়া।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ মে ফুটপাত দখলকারীদের তালিকা প্রস্তুত করে প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে মেয়রকে নির্দেশ দেন সিলেটের চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো: সাইফুজ্জামান হিরো। এ ক্ষেত্রে মেয়রকে সহযোগিতার জন্য কোতোয়ালি থানার ওসিকেও নির্দেশ দেন আদালত। এর প্রেক্ষিতে গত ১৬ অক্টোবর তারা প্রতিবেদন দাখিল করেন ওই আদালতে। দাখিলকৃত তালিকায় যাদের নাম আছে, তাদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা ছিল না। ফলে আদালত ফুটপাত দখলদারদের পূর্ণাঙ্গ নাম ও পরিচয় দাখিল করতে কোতোয়ালী থানার ওসি গৌছুল হোসেনকে নির্দেশ দেন। উল্লেখিত প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অর্থাৎ নগরীতে অবৈধভাবে ফুটপাত, রাস্তা স্থাপনা দখল বিষয়ে ইতিমধ্যে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকের কয়েকটি পত্রিকায় একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সিলেট সিটি কপোরেশনের মেয়র ও কোতোয়ালী থানার ওসির দাখিলী প্রতিবেদন পর্যালোচনায় ইহা সুস্পষ্টভাবে আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে যে, কয়েকটি হর্কাস সমিতির নামে কিছু অবৈধ দখলকারী ব্যক্তিবর্গ দীর্ঘদিন যাবৎ পুলিশ প্রশাসনকে কোররূপ তোয়াক্কা না করে বা তাদের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে জনসাধারণের ব্যবহার্য সরকারী সড়কে নানা ধরনের দোকানপাট বাসিয়ে এবং উক্ত দোকানপাট বিভিন্ন লোকজনের কাছে ভাড়া দিয়ে ভাড়ার নামে অবৈধভাবে চাঁদা তুলে লাভবান হয়ে আসছিল। বিভিন্ন হর্কাস সমিতির ব্যানারে অবৈধভাবে সরকারি রাস্তা, স্থাপনা, ফুটপাত দখল করে দখলকারীরা জনসাধারণের স্বাভাবিক যাতাযাতে চরমভাবে বাধা বিঘœ সৃষ্টিসহ সরকারী সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করে আসছিল আসামীরা। গত ১৯ অক্টোবর চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আদালতে ওই ২৬ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ বাদী হয়ে সিআর-১৪০৬ নং ফৌজদারী কার্যবিধি আইনে একটি মামলা রেজিষ্ট্রিভুক্ত করা হয়।
আদালতের আদেশ থেকে জানা যায়, অবৈধ দখলদারদের এহেন বেআইনী কার্যক্রম দন্ডবিধির ২৮৩/৪৩১/৪৩২/৩৮৫/৩৫৩ ধারায় গুরুতর আমলযোগ্য অপরাধ বিধায় অবৈধ দখলকারী ২৬ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৯০ এর সি ধারার ক্ষমতা বলে অপরাধটি আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। ৫ নভেম্বর গ্রেফতারী পরোয়ানা ফেরতের দিন ধার্য করেন আদালত। কিন্তু পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করলেও অপর অভিযুক্ত ২৫ ফুটপাত দখলদার ও আশ্রয়দাতাদেরকে রহস্যজনক কারণে গ্রেফতার করতে পারছে না।