১৫ বছর পর রায় ঘোষণা ॥ ওসমানীনগরে রাজমিস্ত্রি হায়দার হত্যা মামলায় ৪ জনের যাবজ্জীবন

39

স্টাফ রিপোর্টার :
১৫ বছর পর ওসমানীনগরে নৃংশসভাবে খুন হওয়া রাজমিস্ত্রি হায়দার আলী হত্যা মামলায় ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ২ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। রবিবার সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক এ. এম. জুলফিকার হায়াত চাঞ্চল্যকর এ রায় ঘোষণা করেন।
দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছে- ওসমানীনগর থানার প্রথমপাশা গ্রামের রইছ উল্ল্যাহর পুত্র কয়ছর (৩৮), তার বড় ভাই বাবুল মিয়া (৪৩), একই এলাকার মৃত ইন্তাজ উল্ল্যাহর পুত্র মবশি^র (৪২) ও হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার চান্দমারাবস্তি দেদন্দী চা বাগানের মৃত পাথর মুন্ডার পুত্র মাইটু মুন্ডা রাজু (৩৬) এবং খালাসপ্রাপ্তরা হচ্ছে- ওসমানীনগর থানার প্রথমপাশা গ্রামের সাজ্জাদ মিয়া ও তারিফ উল্ল্যা। রায় ঘোষনার সময় দন্ডপ্রাপ্ত ৪ আসামী আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলো।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, ওসমানীনগর থানার প্রথমপাশা গ্রামের আজমত মেম্বারের বাড়িতে একই গ্রামের বাসিন্দা হায়দার আলী (১৭) ও তার পিতা মো: উস্তার আলী রাজমিস্ত্রির কাজ করে আসছিল। ওই বাড়িতে গৃহস্থের কাজ করত: মাইটু মুন্ডা রাজু। রাজমিস্ত্রি কাজ করার সুবাধে প্রতিদিন আসা যাওয়ার পথে আজমত মেম্বারের পাশের বাড়ির এক মেয়ের সাথে হায়দার আলীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ওই মেয়ের ভাই কয়ছর বিষয়টি জানতে পেরে মাইটু মুন্ডা রাজুসহ কয়েকজন মিলে হায়দার আলীকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে।
এই পরিকল্পনা মোতাবেক ২০০৩ সালের ২৮ ফেব্র“য়ারী সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে কয়ছর মাইটু মুন্ডা রাজুকে টাকা-পয়সার লোভ দেখিয়ে হায়দার আলীকে বাড়ি থেকে ডেকে আনে। এক পর্যায়ে কয়ছর, মাইটু মুন্ডা রাজু, বাবুল মিয়া ও মবশি^রসহ আরো কয়েকজন মিলে ওসমানীনগর থানার বুরুঙ্গা ইউনিয়নের নিরাইয়ার হাওরে হায়দার আলীকে নিয়ে যায়। সেখানে দৃর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি সারা শরীরের কুপিয়ে তার দু’চোখ উপড়ে ফেলে এবং কয়ছর এক পর্যায়ে হায়দার আলীকে গলা কেটে নৃংশসভাবে হত্যা করে লাশ হওয়ারে ফেলে আসে। এদিকে হায়দার আলী বাড়ি ফিরতে না দেখে তার পরিবার খোঁজাখুঁজি করে এক পর্যায়ে ১ মার্চ রাত ১০ টার দিকে নিরাইয়ার হাওরে তার লাশের সন্ধান পান। পরে খবর পেয়ে পুলিশ নিহত হায়দার আলীর লাশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় নিহত হায়দার আলীর পিতা মো: উস্তার আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে ওসমানীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং- ১ (০২-০৩-২০০৩)। পরে পুলিশ এ ঘটনায় মাইটু মুন্ডা রাজুসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। এবং মাইটু মুন্ডা রাজু হত্যার দায় স্বীকার করে সিলেট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৪ সালের ২৬ জুন সিলেট সদর দক্ষিণ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম ৬ আসামীকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন এবং ২০০৭ সালের ১০ মে থেকে আদালতে এ মামলার বিচারকার্য শুরু হয়।
দীর্ঘ শুনানী ও ২৩ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আসামী কয়ছর, মাইটু মুন্ডা রাজু, বাবুল মিয়া ও মবশি^রকে দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদেরকে উল্লেখিত দন্ডাদেশ এবং আদালতে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামী সাজ্জাদ মিয়া ও তারিফ উল্ল্যাকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে এপিপি এডভোকেট ফখরুল ইসলাম ও আসামীপক্ষে এডভোকেট নুরুল হক মামলাটি পরিচালনা করেন।