স্টাফ রিপোর্টার :
সাজাপ্রাপ্ত আসামী শিল্পপতি রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন সুপ্রীম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ থেকে তারাপুর চা বাগানের ভূমি বন্দোবস্তের নামে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি মামলায় তারা জামিন লাভ করেন। রাগীব আলীর আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম কাফি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, এ মামলায় ইতোপূর্বে হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করেন রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাই। কিন্তু, রাষ্ট্রপক্ষের আপীলের প্রেক্ষিতে সুপ্রীম কোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ তার জামিন স্থগিত করে দেন। এরপর আসামীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রীম কোর্টের ফুল বেঞ্চে শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। শুনানী শেষে উচ্চ আদালত হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। এর আগে তারাপুর চা বাগানের দেবোত্তর সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত এবং দৈনিক সিলেটের ডাক প্রকাশনা সংক্রান্ত একটি মামলায় উচ্চ আদালতের জামিন লাভ করেন তারা। তিন মামলায় জামিন লাভের পর রাগীব আলীর কারামুক্তিতে আর কোন বাধা নেই বলে জানান ব্যারিস্টার কাফি।
রাগীব আলীর পক্ষে শুনানীতে অংশ নেন ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস, ব্যারিস্টার মেহেদী হাসান, ব্যারিস্টার মনসুরুল হক ও ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম কাফি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল দিলুরুজ্জামান।
গত ২৯ আগষ্ট হাইকোর্টের অবকাশকালীন একটি দ্বৈত বেঞ্চ শুনানি নিয়ে রাগীব আলী ও আবদুল হাইকে এক বছরের অন্তবর্তীকালীন জামিন দেন। এ জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। এই আবেদনে শুনানি শেষে ৩০ আগষ্ট জামিন ৬ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষের এই আবেদন গতকাল বৃহস্পতিবার খারিজ করে দেন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
মামলা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের দুই ফেব্র“য়ারি দেবোত্তর সম্পত্তি নগরীর তারাপুর চা-বাগান লিজের ক্ষেত্রে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির বিষয়ে দায়ের করা মামলায় রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাইকে ১৪ বছরের কারাদন্ড দেন আদালত। আসামিদের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামান হিরো ৪৬৬ ধারায় রাগীব আলী ও তার ছেলেকে ৬ বছরের সশ্রম কারাদন্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদন্ড, ৪৬৮ ধারায় সমপরিমাণ সাজা প্রদান করেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ১৬ ফেব্র“য়ারি দন্ডপ্রাপ্তরা সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন। আপিলে তারা জামিন চাইলে ২৪ মে সিলেটের বিশেষ দায়রা জজ আদালতে তা নামঞ্জুর করে দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে তারা আবেদন করেন। এছাড়া ৪২০ ও ৪৭১ ধারায় ১ বছর করে ২ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয় তাদের। পৃথক ৪টি ধারায় রাগীব আলী ও তার ছেলে আব্দুল হাইকে মোট ১৪ বছরের কারাদন্ড, অপর মামলায় রাগীব আলীসহ ৫ আত্মীয়ের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা এবং দৈনিক সিলেটের ডাক প্রকাশনা সংক্রান্ত একটি মামলায় রাগীব আলী ও তার ছেলের এক বছরের সাজা হয়। সব সাজা একসঙ্গে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করায় কার্যত তাদের ৬ বছর কারাভোগ করতে হবে। এর আগে গত ২৩ নভেম্বর ভারতের করিমগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে রাগীব আলী ও গত ১২ নভেম্বর ভারত থেকে জকিগঞ্জ এসে গ্রেফতার হন আবদুল হাই।