স্পোর্টস ডেস্ক :
মাঠের লড়াইয়ের ফলটা এখন সবার জানা। কিন্তু ‘কথার লড়াই’ বলে কোনো প্রতিযোগিতা থাকলে সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে পেরে ওঠা মুশকিল হতো দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য।
৩৩৩ রানে পরাজয়ের কবর কি ওই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস থেকেই খোঁড়া হয়ে যায়নি?
অনুশোচনার ভারে অনুতপ্ত শোনায় অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের কণ্ঠ। এমন আত্মসমর্পণের জন্য ক্ষমা চাইতেও দ্বিধাহীন তিনি। কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে এমন পরাজয় বলে মানতে নারাজ তিনি, ‘অতি আত্মবিশ্বাসের কিছু নেই। যখন কোনো ম্যাচে এত পিছিয়ে থাকবেন, সেখানে তো নয়ই। যদি স্কিল আর মানসিকতার দিক থেকে আরো দৃঢ় হতে পারতাম, সাহসী হতে পারতাম—তাহলে হয়তো ভালোভাবে সামলাতে পারতাম পরিস্থিতি।’ বাংলাদেশ সেটি পারেনি মোটেও। তাইতো দলের অন্যতম মূল বোলার তাসকিন আহমেদ বোলিং পারফরম্যান্স নিয়ে খুশির কথা বলে যান। চতুর্থ দিন শেষেও লিটন দাশ বলেন যে, বাংলাদেশ কখনো ম্যাচের বাইরে ছিল না।
তাই বলে শেষ ইনিংসে ৯০ রানে গুটিয়ে যাবে বাংলাদেশ! সেটিও মরনে মরকেলহীন বোলিং লাইনের সামনে! উইকেটেও তো অমন কোনো জুজু ছিল না।
মুশফিক তাই কাঠগড়ায় দাঁড় করান নিজেদেরই, ‘এখানে এমন কোনো উইকেট ছিল না, যেটা আনপ্লেয়েবল। দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে এমন উইকেট পাবেন সেটা কখনো কল্পনাতেও ছিল না। আমার মনে হয়, আমাদের সামনে খুব ভালো সুযোগ ছিল। যদি প্রথম ইনিংসের মতো লড়াই করে দ্বিতীয় ইনিংসেও একটা স্কোর করতে পারতাম তাহলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একটা ভালো মানদণ্ড হতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা পারিনি। এর দায় ব্যাটসম্যানদের। ’ প্রথম ইনিংসে নিজেদের অনেক ঘাটতি দেখছেন তিনি, ‘প্রথম ইনিংসে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। চার-পাঁচজন আউট হয়েছি থিতু হয়ে। যদি আমরা এক শ-দেড় শ রানের একটা জুটি গড়তে পারতাম তাহলে হয়তো চার শ রান পর্যন্ত যেতে পারতাম। ’
শুধু ব্যাটসম্যান না, বোলারদেরও একেবারে ধুয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক। তাসকিন নিজেদের বোলিংয়ে খুশি হলেও মুশফিক মোটেই নন, ‘এমন ফ্ল্যাট উইকেটে আপনি উইকেট না পান, অন্তত একটা লাইন-লেংথে তো বোলিং করতে পারবেন। এই স্কিলের জন্যই আপনি জাতীয় দলে খেলেন। নইলে তো আমিও ছয়টা বলের মধ্যে দুইটা বল লাইনে ফেলতে পারতাম। সেদিক থেকে আমাকে প্রথম ইনিংসে বোলাররা খুব হতাশ করেছে। আমি অধিনায়ক হিসেবে খুব হতাশ। ’ দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং লাইনের সঙ্গে তুলনায়ও নিজেদের মানসিকতার দুর্বলতা দেখেন মুশফিক, ‘ওদের বোলিং লাইন আপ দেখেন, ওরা যে খুব বেশি ম্যাচ খেলেছে তাও না। আমার মনে হয়, এই অজুহাত আমরা আর কত দিন দেব? আমার মনে হয়, ৫-১০ বছর খেললে দেখা যাবে নামের পাশে ৫/১০টা টেস্ট রয়েছে। যদি ভালো নাই করে তখন আমাদের আরেকজনের কথা চিন্তা করতে হবে। ’ তাতে বাংলাদেশের টেস্ট বোলিং ইউনিটটা আর দাঁড়াচ্ছে না কিছুতেই। এ ক্ষেত্রে বড় দায় বোলারদের বলেই রায় অধিনায়কের, ‘স্কিলের উন্নতি নিজেরই করতে হয়। কেউ বারবার আপনাকে শিখিয়ে দেবে না। ব্যাটিংয়ে যারা আছে, ব্যক্তিগতভাবে তারা যে উন্নতি করেছে, বোলিং ইউনিট হিসেবে আমরা সেই উন্নতি করতে পারিনি। আমি এখনো বলছি না, ওদের দুই দিকে বল সুইং করাতে। অন্তত জায়গায় তো বোলিং করতে পারবে। এটার জন্য একটা কোচের দরকার হয় না। এটা আপনি নিজে থেকেও করতে পারেন। ’ বোলারদের সেই তাগিদটা দেন মুশফিক, ‘যদি মন থেকে চান, ওভারে পাঁচ বল আপনি এক জায়গায় ফেলতে পারবেন। সে জন্যই আপনি দেশের হয়ে খেলেন। আমরা এই কাজটা এক দিন-দুই দিন হয়তো করি, কিন্তু এটা আমাদের দিনের পর দিন করে যেতে হবে। তাদের নিজেদের ব্যক্তিগতভাবে এই উদ্যোগটা নিতে হবে। এটা যদি তারা না নিতে পারে, সেই প্যাশন যদি না থাকে তাহলে কাজটা খুব কঠিন হয়ে যাবে। ’
অমন কিছু করার ছাপ পচেফস্ট্রুম টেস্টে দেখাতে পারেননি বোলাররা। তবু তাসকিন এই বোলিংয়ে খুশি! সতীর্থের ঢাল হয়ে দাঁড়াতে চাইলেও ক্ষোভটা বেরিয়ে আসে মুশফিকের, ‘তাসকিনের মনে হতে পারে, আমি শেষ যে কয়টা টেস্ট খেলেছি, তার মধ্যে এমন ফ্ল্যাট উইকেটে আমি একটু ভালো করতে পেরেছি। তার মানে এই নয় যে, আমরা দল হিসেবে খুব ভালো করেছি। সেটা ওর ব্যক্তিগত মতামত হতে পারে। এটাও আমাদের একটা মানদণ্ড। আপনি যদি এতটুকু করেই মনে করেন খুব ভালো করেছেন, তাহলে যতই উন্নতি করতে চান সেটা আপনাকে রুখে দেবে। আমার মনে হয়, ৫/৬ উইকেট পেলেও অনেক জায়গা থাকে উন্নতি করার। আমি এক শ-দেড় শ করলেও অনেক জায়গা থাকে উন্নতি করার। ’ অন্যরাও যে গণমাধ্যমের সামনে এসে নিজেদের মতো করে নানা উদ্ভট ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, এ নিয়ে মুশফিকের ব্যাখ্যা, ‘কে কিভাবে কথা বলে সেটা তার ব্যাপার। যদি আমাকে বলেন, পাঁচ দিনই আমাদের খুব ভালো সুযোগ ছিল যে, অন্তত অনেক ভালো একটা টেস্ট ম্যাচ খেলার। ’
কাল ৯০ রানে অল আউট হওয়ার পর মুশফিকের কথাগুলোকে কেমন বিলাপের মতোই না শোনায়!