॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥
শিশু-কিশোররাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তাদের উন্নতি ও অগ্রগতির উপর নির্ভর করে দেশ ও জাতির উন্নতি। শিশু-কিশোরদের সুস্থ ও স্বাভাবিক বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ভূমিকা অপরিসীম। তাদের একটি অংশ কোন কারণে অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য চরম হুমকি ও সুস্থ সমাজ জীবনের প্রতিবন্ধক হোক তা কারো কাম্য নয়। এজন্যই ইসলাম শিশু-কিশোরদের সুস্থ, স্বাভাবিক ও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে এবং অপরাধমুক্ত জীবন-যাপনের উপস্থাপন করেছে সর্বজননীন ও কল্যাণকর নীতিমালা। যা বাস্তবে কার্যকর করতে পারলে পরিবার পেতে পারে কাক্সিক্ষত প্রশান্তি এবং দেশ ও জাতি লাভ করতে পারে অমূল্য সম্পদ। মায়ানমার ৭ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত, শ্রীলংকা ৭ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত, ভারত ৭ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত, পাকিস্তান ৭ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত, ফিলিপাইন ৯ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত, থাইল্যান্ড ৭ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত, জাপান ১৪ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত, ইংল্যান্ড ৮ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত, ফ্রান্স ১৩ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত, পোল্যান্ড ১৩ াথেকে ১৬ বছর পর্যন্ত, অস্ট্রিয়া ১৪ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত, জার্মানী ১৪ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত।
কিশোর অপরাধের সুনির্দিষ্ট কারণ নির্ণয় করা অত্যন্ত জটিল ও কঠিন বিষয়। তথাপিও অপরাধবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কিশোর অপরাধের কারণ অনুসন্ধানের প্রয়াস চালিয়েছেন। যা অপরাধের নানাবিধ সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে ধারণা লাভে সহায়ক। কিশোর অপরাধের কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে প্রখ্যাত ব্রিটিশ ঐতিহাসিক আরনল্ড টয়েনবী অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, বর্তমানের ধর্মহীনতাই অন্যান্য অপরাধের ন্যায় কিশোর অপরাধের কারণ। অন্যদিকে সমাজতন্ত্রের জনক কার্লমার্কস এর মতে, কিশোর অপরাধসহ সব ধরনের অপরাধের মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক প্রভাব। আধুনিক অপরাধবিজ্ঞানের জনক সিজার লোমব্রোসো কিশোর অপরাধের কারণ হিসেবে জৈবিক প্রভাবকে দায়ী করেছেন। সমাজবিজ্ঞানী হিলি এবং ব্রোনার (ঐবধষু ধহফ ইৎড়হহবৎ) কিশোর অপরাধের কারণ হিসেবে সামাজিক পরিবেশের প্রভাবকে চিহ্নিত করেছেন। বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড কিশোর অপরাধের কারণ অনুসন্ধানে বাহ্যিক পরিবেশের পরিবর্তে মানুষের মনোজগতের প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
বংশগতি বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জৈবিক বৈশিষ্ট্য কিশোর অপরাধের অন্যতম একটি কারণ। শিশু উত্তরাধিকার সূত্রে যে দৈহিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য লাভ করে সেটিই তার বংশগতি। জীববিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, ব্যক্তির মন-মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি, আচার-ব্যবহার, চিন্তাধারা প্রভৃতি বিষয় বংশগতির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ে থাকে। জন্মগতভাবে শারীরিক ও মানসিক ত্র“টি শিশু-কিশোরদের স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে তারা অস্বাভাবিক আচরণ ও অপরাধমূলক কর্মে জড়িয়ে পড়ে। জন্মগত শারীরিক ও মানসিক ত্র“টিগুলো যেমন মাথার খুলি স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট বা বড়, গাঢ় ও ঘন ভ্রু, চেপ্টা নাক, প্রশস্ত হাতের তালু, প্রশস্ত কান, ঘন চুল, লম্বা বাহু, চোখ বসা, হাত-পায়ে অতিরিক্ত আঙ্গুল, সংকীর্ণ কপাল, অসামঞ্জস্য দাঁত, দুর্বল চিত্ত, ক্ষীণ বুদ্ধি, আত্ম-নিয়ন্ত্রণহীন, অসৎ প্রকৃতি ও বেদনার প্রতি অতি সংবেদনশীলতা ইত্যাদি। উপর্যুক্ত ত্র“টিগুলো থেকে পাঁচটি ত্র“টি শিশু-কিশোরের মধ্যে বিদ্যমান থাকলে অপরাধকর্মে প্রবৃত্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ড. ঐবধষু শিকাগো শহরে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, কিশোর অপরাধীদের ৩১% এর দৈহিক বিকাশ অস্বাভাবিক। এছাড়াও ইতালিতে সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রতীয়মান হয় যে, দৈহিক অক্ষমতা দূর করা গেলে কিশোরদের অপরাধমূলক আচরণ থেকে রক্ষা করা যেতে পারে। তবে কিশোর অপরাধের কারণ হিসেবে বংশগতিকে দায়ী করলে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে যে, একই ব্যক্তির একাধিক সন্তানের মধ্যে ভিন্নধর্মী আচরণের জন্য কী কারণ দায়ী? যদি বংশগতিকেই অপরাধের কারণ মনে করা হয়, তাহলে মানুষ কেন তার কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে? কেননা বংশগতির বিষয়ে মানুষের কোন হাত নেই। আর আল্লাহ তা’আলার নীতি হলো একজনের ভার অন্য জনের উপর চাপিয়ে না দেয়া। এ প্রসঙ্গে আল-কুরআনে বলা হয়েছে, কেউ অন্য কারো ভার বহন করবে না। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি অপরের পাপের বোঝা বহন করবে না। অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে বের করেছেন, তোমরা কিছুই জানতে না। রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “প্রত্যেক সন্তান ফিতরাত বা স্বভাব ধর্মের উপর জন্মগ্রহণ করে।” উপর্যুক্ত আয়াতসমূহ ও হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, বংশগতি কিশোর অপরাধের জন্য দায়ী নয়।
কিশোর অপরাধ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সবসময় পরিবারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। কেননা পরিবার মানুষের আদি সংগঠন এবং সমাজ জীবনের মূল ভিত্তি। পরিবারের সূচনা হয় স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক বন্ধনের মাধ্যমে। আর পারিবারিক পরিমন্ডলে সন্তানের জন্ম হয় এবং বিকাশ লাভ করে। সন্তানের স্বাভাবিক ও সুস্থ বিকাশের জন্য পিতামাতার মধ্যে সম্প্রীতিময় দাম্পত্য জীবন একান্ত অপরিহার্য। পিতা-মাতার মধ্যে মনোমালিন্য ও কলহ বিবাদ থাকলে সন্তানের উপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে, যা পরিণামে শিশু-কিশোরদের অপরাধপ্রবণ হতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। অনুরূপভাবে পরিবারের অন্যান্য সদস্য যদি অনৈতিক বা সমাজ বিরোধী কর্মকান্ডে নিয়োজিত থাকে তাহলে পরিবারে কিশোর অপরাধ সমস্যা বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়। তেমনিভাবে ভগ্ন পরিবার ও কিশোর অপরাধের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কেননা ভগ্ন পরিবারে সন্তানের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয় এবং পরিবারের নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিষয় দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে শিশু-কিশোররা ত্র“টিপূর্ণ আচার-আচরণ ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বেড়ে উঠে। অন্যদিকে বাসস্থানের অনুপযুক্ত পরিবেশ কিশোর অপরাধের অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। যেমন নিম্নমানের গৃহায়ণ ও বস্তি এলাকার পরিবেশে শিশু-কিশোররা জীবনের ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে বিচ্যুত আচরণ দ্বারা তারা তাদের আশা আকাক্সক্ষা ও চাহিদা পূরণে সচেষ্ট হয়। এভাবেই বাসস্থানের খারাপ পরিবেশ কিশোর-কিশোরীদের অপরাধ প্রবণতার দিকে ঠেলে দেয়।
অর্থনৈতিক অবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে কিশোর অপরাধের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। দরিদ্রতা ও সম্পদের প্রাচুর্য উভয়ই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কিশোর অপরাধ সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দরিদ্রতার কারণে মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে কিশোররা বিভিন্ন প্রকারের অপরাধে লিপ্ত হয়ে থাকে। এ জন্যই রাসূলুল্লাহ (স.) কুফরীর পাশাপাশি দরিদ্রতা থেকেও আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে বলেন, “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কুফরী ও দরিদ্রতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” অন্য একটি হাদীসে বলা হয়েছে, দরিদ্রতা কুফরী ডেকে আনে। তেমনিভাবে সম্পদের প্রাচুর্যের অপব্যবহার শিশু-কিশোরদেরকে অন্যায়, অপকর্ম ও অপরাধে লিপ্ত হতে সহায়তা করে। মহান আল্লাহ এ বাস্তবতাকে স্মরণ করে দিয়ে বলেন, আল্লাহ তার বান্দাদেরকে জীবনোপকরণে প্রাচুর্য দিলে তারা জমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করতো। কিশোর অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক সামাজিক পরিবেশের প্রভাব অপরিসীম। বিধায় আবাসিক পরিবেশ, সঙ্গীরে প্রভাব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দূর্বলতা, সামাজিক শোষণ-বঞ্চনা ইত্যাদি সামাজিক উপাদানগুলো শিশু-কিশোরদের আচরণে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।শিশু-কিশোরদের নৈতিক ও সামাজিক আচরণের উপর আবাসিক পরিবেশের প্রভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এজন্যই বাসস্থানের অনুপযুক্ত পরিবেশ (যেমন ঘনবসতিপূর্ণ বস্তি এলাকা) কিশোর-কিশোরীদের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ধাবিত করতে পারে। বিভিন্ন আবাসিক এলাকার উপর পরিচালিত গবেষণামূলক জরিপে প্রতীয়মান হয় যে, বস্তি এলাকার বিরাজমান সামাজিক পরিবেশই অপরাধমূলক আচরণের জন্য অনেকাংশে দায়ী। কেননা বস্তি এলাকার লোকজন সাধারণত অস্থায়ী বাসিন্দা হয় এবং তারা ঘন ঘন বাসস্থান পরিবর্তন করে। তাদের পরস্পরের মধ্যে সামাজিক সংযোগ ও সংহতি থাকে না। এরূপ পরিবেশে শিশুরা গৃহের বাইরে অবাধে অপরাধমূলক আচরণে লিপ্ত হয়।
কিশোর অপরাধের ক্ষেত্রে সঙ্গদলের প্রভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিশোর-কিশোরীরা এই বয়সে পরিবারের প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে চলতে চায় এবং পাড়া-প্রতিবেশী. খেলার সাথী ও সমবয়সীদের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। এধরনের সম্পর্কের মাধ্যমে শিশু-কিশোররা অত্যন্ত সহজে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে পারে, যা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন বা পরিবার-পরিজনের নিকট থেকে তা করতে পারে না। সুতরাং সঙ্গী-সাথীদের মধ্যে কেউ অসৎ প্রকৃতির বা অপরাধপ্রবণ থাকলে তাদের প্রভাবে অনেক সময় কিশোর-কিশোরীরা অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠে। রাসূলুল্লাহ স. ভাল ও খারাপ প্রকৃতির সঙ্গীর সাথে উঠা-বসার বাস্তব পরিণতি উপমার মাধ্যমে তুলে ধরে বলেন, ভাল মানুষের সাহচর্য লাভকারী ব্যক্তি মিসক সুগন্ধিদ্রব্য বিক্রেতার ন্যায়। সে যদি তোমাকে মিসক নাও দেয়, তবে এর একটু ঘ্রাণ তোমার নিকট পৌঁছবেই। আর মন্দ লোকের সাহচর্য অবলম্বনকারী কর্মকারের ন্যায়। কর্মকারের হাপরের ময়লা তোমার গায়ে না লাগলেও একটু ধোয়া হয়েও তোমার গায়ে লাগবে।
সামাজিক পরিবেশে পরিবারের ভূমিকার পরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রভাব শিশু-কিশোরদের জীবনে অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমান দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজে এ সকল প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য যেমন শিক্ষকের বিষয়জ্ঞান, সততা, আন্তরিকতা, ছাত্র শিক্ষকের পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক, ছাত্র-ছাত্রীর নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের চেতনা কার্যত অনুপস্থিত। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য গঠনমূলক চিত্তবিনোদন, খেলা-ধূলার সুযোগ সুবিধা ও শিক্ষকদের নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির অভাবও প্রকট। সুতরাং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রম ও শিক্ষা পদ্ধতি শিশু-কিশোরদের রুচি ও সামর্থ্যরে অনুপযোগী হলে তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং তারা নানা অপরাধমূলক আচরণের মধ্য দিয়ে নিজেদের মানসিক তৃপ্তি লাভ করার চেষ্টা করে। যেমন স্কুল পালিয়ে তারা রাস্তায় ঘোরাফিরা করে এবং ইভটিজিং, আত্মহত্যা, মাদকদ্রব্য গ্রহণ ও বিপণনসহ নানাবিধ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে জটিল আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় উপযুক্ত শিক্ষা প্রশিক্ষণ ও পেশা গ্রহণে ব্যর্থ কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের সামঞ্জস্য বিধান করতে না পারার কারণে সামাজিক শোষণ বঞ্চনার শিকার হয়। ফলে তাদের মনে তীব্র হতাশা ও নৈরোশ্য দানা বাঁধে, যা এক পর্যায়ে সমাজের বিরুদ্ধে অসন্তোষ ও আক্রোশে রূপ নেয়। এমন পরিস্থিতিতে এই ব্যর্থ কিশোর-কিশোরীরা সামাজিক আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এবং অপরাধমূলক আচার আচরণে লিপ্ত হয়।
কিশোর অপরাধের সাথে ভৌগোলিক পরিবেশের এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যেমন মরু এবং গ্রীষ্ম প্রধান এলাকার মানুষ সাধারণত রুক্ষ্ম স্বভাবের ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির হয়ে থাকে। এ ছাড়াও অরণ্যে ঘেরা দুর্গম পাহাড়ী এলাকা, চরাঞ্চল ও সীমান্তবর্তী এলাকার কিশোর-কিশোরীরা তুলনামূলক অপরাধপ্রবণ হয়। অপরাধবিজ্ঞানী ডেক্সটারের মতানুযায়ী, বায়ূর চাপের সাথে মানুষের স্নায়ুবিক চাপ প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত এবং তার ফলে ব্যারোমিটারে পারদের উঠা-নামার সাথে অপরাধ প্রবণতার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। অন্যদিকে জলবায়ূর প্রভাবজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার অনেক শিশু-কিশোর পারিবারিক পরিবেশের বাইরে উদ্বাস্তু ও ভাসমান হিসেবে বেড়ে উঠে। বিধায় জীবনের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত এসব কিশোরের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ঘন ঘন কর্মসংস্থান পরিবর্তন : পিতা-মাতার ঘন ঘন কর্মস্থল পরিবর্তনের কারণে শিশু-কিশোররা নতুন নতুন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের সংস্পর্শে এসে সহজেই তা অনুসরণ করতে পারে না এবং তাদের ব্যক্তিত্ব অসম্পূর্ণভাবে বেড়ে উঠে। ফলে এটি শিশু-কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতার জন্ম দেয়। (অসমাপ্ত)