স্পোর্টস ডেস্ক :
‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল…রক্ত লাল…রক্ত লাল।’ এই গানের মতোই বিশ্বক্রিকেটে বাংলাদেশের লালসূর্য আরো জ্বল জ্বল করছে। আরো উপরে উঠছে…উঠেই চলছে।
গতকাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রোমাঞ্চকর এক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। দীর্ঘ ১১ বছর পর বাংলাদেশ সফরে আসে অস্ট্রেলিয়া। সিরিজের প্রথম টেস্টেই জয় ছিনিয়ে এনেছে টাইগাররা। বাংলাদেশের স্পিনের ছোবলে ২০ রানে পরাজয় হয় অসিদের।
জয়ের পর অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম বলেন, ‘এটা অসাধারণ অনুভূতি, বিশেষ করে তামিম আর সাকিব দুর্দান্ত খেলেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বরাবরের মতোই ভালো খেলেছি আমরা। আমাদের দুই স্পিনার সাকিব-তাইজুল অসাধারণ খেলেছে। তামিম-সাকিব জুটির পাটর্নারশিপ আমাদের জয়ের দিকে এগিয়ে দিয়েছে। তবুও আমাদের আরো কিছু জায়গা শুধরাতে হবে। ১৫০ রানে ৮ উইকেট তুলে নেয়া সহজ ছিল না। আগামী ম্যাচে আমরা ভুল শুধরে আরো শক্তিশালী হয়ে মাঠে নামব। এবং সিরিজ জয় করব। ব্যাপারটা এমন যে, চারদিকে সাপ ফণা তুলে আছে ছোবল দেয়ার জন্য।’
সবশেষে দর্শকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুশফিক। এই জয় দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল আজহার উপহার বলে উল্লেখ করেন।
আজকের ম্যাচের জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান জানিয়েছেন মজার এক ঘটনা। তবে সবার মতো ইংরেজিতে নয় বাংলায়।
সাকিব মাইক নিয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে প্রথম বাংলায় বলেন, ‘আমি জানি না, আমাদের উপর কারো বিশ্বাস ছিল কিনা যে, আমরা অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারব। তবে পানি পানের বিরতির সময় আমি দলের সবাইকে বলেছিলাম, আজ যারা মাঠে খেলা দেখতে এসেছেন, তাদের এই বিশ্বাস ছিল যে, আমরা জিতব। আমরা তাদের হতাশ করব না।’
এরপর বলেন সেই মজার ঘটনাটি, ‘কাল রাতে আমি আমার স্ত্রী শিশিরকে বলছিলাম ম্যাচটা মনে হয় হেরেই যাচ্ছি। তখন শিশির বলেন, তুমিই শুধু পারো কাল বাংলাদেশকে জেতাতে। তাই আমার স্ত্রীকে ধন্যবাদ, আমার উপর বিশ্বাস রাখার জন্য।’
এ কথার পর পরই করতালিতে ফেটে পড়ে গ্যালারির দর্শকরা।
অপরদিকে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বাংলাদেশের। বলেছেন, ‘আসলেই এটি অসাধারণ একটি ম্যাচ ছিল। সব অবদান বাংলাদেশের, তারা প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত খেলেছে। তামিম-সাকিবের জুটি ভাঙার পর আমরা লড়াইয়ে ফিরেছিলাম। ভেবেছিলাম দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের ব্যাট করাটা কঠিন হবে। কিন্তু আমার ধারণ ভুল ছিল, তারা ভালো খেলেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রথম ইনিংসেই ভালো ব্যাটিং করতে পারিনি। ডেভিড ওয়ার্নার অনেক ভালো খেলেছে, সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। এটা এমন একটা উইকেটে ছিল, যেখানে কোনো কিছু ধারণা করা যাচ্ছিল না। এখন চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টের অপেক্ষায় আছি।’
উল্লেখ্য, আগামী ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৭৮.৫ ওভারে ২৬০ (তামিম ৭১, সৌম্য ৮, ইমরুল ০, সাব্বির ০, সাকিব ৮৪, মুশফিক ১৮, নাসির ২৩, মিরাজ ১৮, তাইজুল ৪, শফিউল ১৩, মুস্তাফিজ ০*; হ্যাজেলউড ০/৩৯, কামিন্স ৩/৬৩, লায়ন ৩/৭৯, অ্যাগার ৩/৪৬, ম্যাক্সওয়েল ১/১৫)
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৭৪.৫ ওভারে ২১৭ (ওয়ার্নার ৮, রেনশ ৪৫, খাজা ১, লায়ন ০, স্মিথ ৮, হ্যান্ডসকম্ব ৩৩, ওয়েড ৫, অ্যাগার ৪১*, কামিন্স ২৫, হ্যাজেলউড ৫; শফিউল ০/২১, মিরাজ ৩/৬২, সাকিব ৫/৬৮, তাইজুল ১/৩২, মোস্তাফিজ ০/১৩, নাসির ০/৩)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৭৯.৩ ওভারে ২২১ (তামিম ৭৮, সৌম্য ১৫, তাইজুল ৪, ইমরুল ২, মুশফিক ৪১, সাকিব ৫, সাব্বির ২২, নাসির ০, মিরাজ ২৬, শফিউল ৯, মোস্তাফিজ ০; হ্যাজেলউড ০/৩, কামিন্স ১/৩৮, লায়ন ৬/৮২, ম্যাক্সওয়েল ০/২৪, অ্যাগার ২/৫৫, খাজা ০/১)
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৬৫, আগের দিন ১০৯/২) ৭০.৫ ওভারে ২৪৪ (ওয়ার্নার ১১২, রেনশ ৫, খাজা ১, স্মিথ ৩৭, হ্যান্ডসকম ১৫, ম্যাক্সওয়েল ১৪, ওয়েড ৪, অ্যাগার ২, কামিন্স ৩৩*, লায়ন ১২, হ্যাজেলউড ০; মিরাজ ২/৮০, নাসির ০/২, সাকিব ৫/৮৫, তাইজুল ৩/৬০, মোস্তাফিজ ০/৮)
ম্যাচসেরা: সাকিব আল হাসান
ফল: বাংলাদেশ ২০ রানে জয়ী
সিরিজ: ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ।