স্পোর্টস ডেস্ক :
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সাবেক সভাপতি এহসান মানি বলেছেন, সমঝোতা স্মারক চুক্তি (এমওইউ) না মানায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) দায়ের করা মামলার ভিত্তি খুবই দুর্বল।
৭২ বছর বয়সী মানির দাবি আইসিসি’র একটি সূত্র তাকে জানিয়েছে, ভারতের কাছ থেকে পাকিস্তানের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সম্ভবনা ক্ষীণ।
মানি বলেন, ‘ভারতীয় বোর্ডের সাথে চুক্তি করে নাজাম শেঠি একটি বড় ভুল করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘তার (শেঠি) উচিত ছিল চুক্তিটি সবাইকে দেখানো। ক্ষতিপূরণের দাবি করা যায় কি-না সেটা দেখানো উচিত ছিল। আইসিসিতে আমার সূত্রের পাওয়া খবর থেকে আমি বলতে পারি যে বিসিসিআই’র বিপক্ষে পিসিবি’র করা মামলা দুর্বল। প্রতিপক্ষের কাছ থেকে পিসিবি’র ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।’
সম্প্রতি শাহরিয়ার খানের অধীনে পিসিবি’র বোর্ড অব গভর্নর্সের (বিওজি) শেষ সভায় সমঝোতা চুক্তি করেও দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে রাজি না হওয়ায় বিসিসিআই’র বিপক্ষে আইনি লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে দেড় কোটি রুপি খরচ করার অনুমোদন দেয় বিওজি।
‘এটা কেবল অর্থের অপচয় হবে’ বলে পিসিবি’র পদক্ষেপ সম্পর্কে মন্তব্য করেন মানি।
তিনি বলেন, ‘লড়াই করে সব সমস্যার সমাধান হয় না। পিসিবি’র উচিত ছিল মধ্যবর্তী একটা পথ বেছে নেয়া। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে বিসিসিআই। তারা সব দেশকেই তাদের পাশে পাবে এবং পাকিস্তান একা হয়ে যাবে।’
পাকিস্তানের একটি কার্যকর কৌশল গ্রহণ করা দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভারত সব সময়ই একটা সিরিজ আয়োজনে সরকারের অনুমোদন না পাওয়ার কথা বলে থাকে। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে কখনোই ক্রিকেট বন্ধ হয় না। সুতরাং তারা একটি সঠিক কৌশল নিয়ে এগোলে সমস্যার সমাধান হতে পারে।’
আইসিসিতে পাকিস্তানের মর্যাদা কমছে : মানির বিশ্বাস ঐতিহাসিকভাবেই পাকিস্তান আইসিসিতে মর্যাদা পেয়ে আসছিল। কিন্তু এখন তারা বিশ্বে নির্বাহী সংস্থায় তাদের কণ্ঠ ছোট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তান এক ঘরে অবস্থায় আছে। অতীতে বিষয়গুলো ভিন্নতর ছিল; আইসিসিতে আমরা কথা বলতে পারতাম। আইসিসি’র সব কমিটিতেই পাকিস্তানের প্রতিনিধি ছিল। কিন্তু আমরা এখন কাউন্সিলে আমাদের কণ্ঠ হারিয়ে ফেলেছি। আইসিসি প্যানেলে আমাদের কোন রেফারি নেই। আইসিসি’র এলিট আম্পয়ার তালিকায় রয়েছেন কেবলমাত্র আলিম দার। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পদ্ধতি সম্পর্কে না বুঝায় কেউই আমাদের আম্পায়ার ও রেফারিদের আইসিসি প্যানেলে তালিকাভুক্ত হতে সাহায্য করার কেউ নেই।’
পিসিবি’র বিশাল বহর : পিসিবি’র বিশাল আকারের জনবল কাঠামোর সমালোচনা করে একে অপ্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করেন মানি।
তিনি বলেন, ‘অতীতে ২০-২৫ জন্য পিসিবি’র কার্যক্রম চালাতো। তবে এখন সেটা কয়েক শ’ হয়ে গেছে। কর্মকর্তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেন; পিসিবি’র উচিত ওয়েবসাইটে তাদের হিসাবের বিস্তারিত প্রকাশ করা। কর্মকর্তারা কি পরিমাণ অর্থ খরচ করছে জনগণকে সেটা তাদের বলা উচিত।’
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। সে চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানে দুটি সিরিজে খেলার কথা ছিল ভারতের। যার একটি হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে। পাকিস্তান সফর তো নয়ই ভারত সিরিজটি খেলতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেতেও অস্বীকৃতি জানায়। এমনকি শ্রীলঙ্কায় সিরিজ আয়োজনের কথা উঠলেও ভারত তাতে রাজি হয়নি। কারণ হিসেবে দুই দেশের তিক্ত রাজনৈতিক সম্পর্ককেই সামনে আনা হয়। এর জের ধরে ক্ষতিপূরণ আদায়ে মামলা করে পাকিস্তান।