গোলাপগঞ্জ উপজেলার গ্রামীণ রাস্তাগুলোর বেহাল দশা

121

গোলাপগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
গোলাপগঞ্জ উপজেলার সড়কগুলোর বেহাল দশা। দুঃখ দুর্দশার অন্ত নেই Road-pic..1গণপরিবহন ,শিক্ষার্থী ও পথচারীদের। বিভিন্ন স্কুল কলেজের সামনে ও আশ পাশে গর্ত হওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও চরম হতাশায়। রাস্তাঘাটে গর্ত হওয়ায় প্রায়ই শিক্ষার্থীরা পরিষ্কার কাপড় নিয়ে বের হলেও নোংরা করে বাড়ী ফিরছে। চলতি বন্যায় আরো ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে গ্রামীণ জণপদের রাস্তাগুলোর। রাস্তার কার্পেটিং উঠে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ হয়ে পুকুরে পরিণত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও এখনো উপজেলার কোন রাস্তা মেরামতের কাজ চালু হয়নি। ভাঙ্গাচোরা সড়কের সংস্কার কাজের উদ্যোগ না নেয়ায় উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়ক কয়েক বছর ধরেই ভাঙ্গা রয়েছে। কোন কোন সড়ক দীর্ঘদিন থেকে ছোট বড় গর্ত হয়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছেন জনসাধারণ। এসব রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ছোট বড় গর্ত হওয়ায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেকেই হাত পা ভেঙ্গে কষ্টের জীবন যাপন করছেন। বিশেষ করে রাতের বেলা এসব সড়ক দিয়ে চলাচলে যান চালকেরা একটু এদিক সেদিক করলেই গাড়ি বিকল হয়ে দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হয় সাধারন মানুষকে। গোলাপগঞ্জের প্রবেশমুখের সড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা। সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার গোলাপগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ, ঢাকাদক্ষিণ-ভাদেশ্বর, ঢাকাদক্ষিণ-বিএনকে, পাহাড়লাইন, পুরকায়স্থবাজার-কমলগঞ্জ, গোলাপগঞ্জÑপুরকায়স্থবাজার ও গোলাপগঞ্জ-ধারাবহর, শিকপুর সড়কের প্রায় পুরোটাতেই বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। সড়ক গুলো সংস্কার না করায় দিন দিন গর্তগুলো বড় হচ্ছে এবং পিচ ও পাথরের খোয়া উঠে গিয়ে সড়কের বেশি অংশ ভাঙ্গাচোরা অবস্থায় রয়েছে। এসব সড়কে গর্তের পাশাপাশি কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। এছাড়া উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউপির বাইশমুরা, কোনাচর, নিমাদল, ঘোষগাঁও, লক্ষণাবন্দ ইউপির ফুলসাইন্দ, করগ্রাম, লক্ষণাবন্দ, কমলগঞ্জ, ঢাকাদক্ষিণ ইউপির ঢাকাদক্ষিণ বাইপাচ, রায়গড়, শীলঘাট, নগর, কানিশাইল, আমুড়া ইউপির ধারাবহর, ডামপাল, সুন্দিশাইল, গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামের সড়কে ছোট বড় গর্ত হয়ে পানি জমে আছে। এমনকি বিভিন্ন সড়কে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক জায়গায় সড়কের উপর দিয়ে বৃষ্টি পানি যাওয়ার ফলে সড়ক ভেঙ্গে গিয়ে ছোট খালে পরিনত হয়েছে। বিশেষ করে পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের ঘোগারকুল মাঝপাড়া রাস্তায় ড্র্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তার উপর দিয়ে পানি গিয়ে ছোট খালে পরিণত হয়েছে। যার ফলে ৩/৪ দিন যাবৎ এ রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থী সহ সাধারণ মানুষের চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। এলাকার অনেকেই আশংকা প্রকাশ করে বলেন রাস্তাটি দ্রুত মেরামত না করলে যে কোন সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। এদিকে উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ-বিএনকে সড়ক দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না করায় সড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। ঢাকাদক্ষিণ-বিএনকে ২.২৫ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা থাকায় গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ। সড়ক কর্তৃপক্ষের নেই কোন সংস্কার কাজের উদ্যোগ। এ সড়ক দিয়ে ঢাকাদক্ষিণ ইউপির ৪টি গ্রামের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এ সড়কের কারণে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। প্রতিদিন স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা পড়–য়া ছাত্রছাত্রী ও ব্যবসায়ীসহ শতশত লোক এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। সুত্রে জানাযায়, এ সড়কের বেহাল অবস্থা হওয়ায় এলাকাবাসী শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপির হস্তক্ষেপ কামনা করলে গত বছরে ঢাকাদক্ষিণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নিজে সড়কের উন্নয়ন কাজের আশ্বাস দেন। এ সড়কের উন্নয়ন কাজের জন্য শিক্ষামন্ত্রীর নিজস্ব (আইআরআইডিপি-২) প্রকল্প থেকে সংস্কার কাজের সুপারিশ পাঠালেও এখন পর্যন্ত সড়কের সংস্কার কাজ হয়নি। এ সড়কটির বেহাল দশার কারণে প্রতিদিন ছোট বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ ভাঙ্গা সড়কের কারণে দত্তরাইল, বারকোট, খর্দ্দাপাড়া, নিশ্চিন্ত গ্রামের বিপুল জনগোষ্ঠীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দত্তরাইল, খর্দ্দাপাড়া, নিশ্চিন্ত ও বারকোট গ্রামের ভুক্তভোগী বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন বিএনকে সড়কের যে দশা হয়েছে যানবাহন ও সাধারন জনগণের চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্তমানে বৃষ্টির কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের তুলনায় আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। ঢাকাদক্ষিণ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, বিএনকে উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজসহ ঢাকাদক্ষিণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একাধিক ছাত্রছাত্রী অভিযোগ করে বলেন বর্তমানে আমাদের এলাকার বিএনকে সড়কটির বেহাল অবস্থার জন্য কলেজে নিয়মিত আসা যাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। উপজেলার কানিশাইল ও মুকিতলা গ্রামের ভুক্তভোগী মানুষেরা জানান পাহাড়লাইন সড়কের মুকিতলা এলাকার সড়কে বড় বড় গর্ত হয়ে পুকুরের মত হয়ে গেছে। আমাদের এ সড়ক দেখে মনে হবে এটা সড়ক না এগুলা এক একটি পুকুর। পাহাড়লাইন সড়কের সিএনজি চালক জাহেদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন উপজেলার সড়কগুলির বেহাল দশা হওয়ার ফলে একদিকে যাত্রীদের যেমন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তেমনি যানবাহনের যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গাড়ির মালিকরা। বর্ষাকালে কোন কোন সড়কের কাজ করানো হয় কিন্তু বৃষ্টির পানিতে অর্ধেক নষ্ট হয়ে যায়। আমাদের যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগের শেষ নেই। সিএনজি চালক নাজিম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন সড়কগুলোর দিকে স্থানীয় প্রশাসনের নজর না থাকায় প্রতিটি সড়কের এ বেহাল অবস্থা। এই রাস্তা দিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে যাতায়েত করতে হয়। সিএনজি চালক জামাল উদ্দিন, জামিল আহমদ সড়কের ব্যাপারে আরো অভিযোগ করে বলেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার প্রায় প্রতিটি সড়কে যেভাবে ছোট বড় গর্ত হয়েছে তাতে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ী চালাতে হয়। ঝুঁকি নিয়ে গাড়ী চালালেও গর্তগুলোতে গাড়ী পড়ে নষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত।