সিলেটে রাজনৈতিক পরিবেশ অন্যান্য স্থানের তুলনায় অনেক সমৃদ্ধ। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা নেতিবাচক ধারণা থেকে সরে আসলে রাজনৈতিক পরিবেশ আরো সমৃদ্ধ হবে। এজন্য প্রয়োজন একে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ বজায় রাখা। ১৮ জুলাই, মঙ্গলবার ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের আয়োজনে “সমৃদ্ধ রাজনৈতিক -পরিবেশ প্রত্যাশা ও করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সোবহানীঘাটে হোটেল ভ্যালী গার্ডেনে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় এক মঞ্চে বসেছিলেন সিলেটের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা।
সিলেটের রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে এ সময় বক্তারা আরো বলেন, ক্ষমতাসীন দল ভালো রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করলে পরবর্তীতে যে দল ক্ষমতায় আসবে তারাও ভালো পরিবেশ বজায় রাখবে। তাই অতি উৎসাহী কোন কর্মকান্ড যাতে রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট না করে সেদিকে সকলকে নজর রাখতে হবে।
সভায় প্যানেল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী এবং সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বিভূতি ভূষণ ব্যানার্জি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সিলেট রিজিওনাল কো-অর্ডিনেটর সুদীপ্ত চৌধুরী, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার অনিন্দ্য রহমান এবং ডিআই এর প্রাক্তন ফেলো ও সিলেট জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের (ডিআই) ডেপুটি চীফ অব পার্টি জে ব্রায়ান ও’ডে বলেন, দীর্ঘ ৬ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কাজ করে ডিআই। ডিআই অংশগ্রহণ মূলক রাজনৈতিক চর্চা সুসংহত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল সমূহের সাথে কাজ করছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখতে ৬ বছর মেয়াদী আমাদের বিগত প্রকল্প গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও সংস্থাটি সকলের অংশগ্রহণে সফলতা লাভ করেছিল। তারই ধারাবহিকতায় আমরা আরেকটি প্রকল্প ‘এসপিএল’ হাতে নিয়েছি।
প্যানেল বক্তা হিসেবে বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, গণতন্ত্র নিয়ে আমরা হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশে এখনো গণতান্ত্রিক অবস্থা বিরাজ করছে। তারই অনন্য নিদর্শন বিভিন্ন চ্যানেলের টকশো। এটি গণতন্ত্রের একটি অংশ। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আগামী নির্বাচন সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনটি অংশগ্রহণ মূলক হবে। তিনি বলেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। সিলেট বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচীতে বাধা প্রদান প্রসঙ্গে কামরান বলেন, বিএনপির কোন কার্যক্রমে বাধা দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কখনো প্রশাসনকে বলা হয়নি। আমরা চাই প্রশাসন এখানে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করুক। আমরা সিলেটে ইতিবাচক রাজনৈতিক সংস্কৃতি বজায় রাখতে চাই।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, সিলেটে সমৃদ্ধ রাজনৈতিক পরিবেশ থাকার কারণে বিগত নির্বাচন গুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এ পরিবেশ বজায় রাখতে সকলকে কাজ করতে হবে। কারো একক ভূমিকায় সমৃদ্ধ রাজনৈতিক পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, একজনকে সন্তুষ্ট রাখতে গিয়ে যাতে সমস্ত পরিবেশ নষ্ট করা না হয়।
দেশের গণতান্ত্রিক চর্চা আরো শক্তিশালী করতে হবে উল্লেখ করে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমাদের সহনশীল হতে হবে। একে অন্যকে ভালোবাসার মাধ্যমে সমৃদ্ধ রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, সিলেটে একটি সমৃদ্ধ রাজনৈতিক পরিবেশ দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিকে আমরা আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সরকার বিরোধী আন্দোলন সকল সময়েই হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক পরিবেশকে আরো সুন্দর করতে চাইলে অন্যদেরকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। তিনি প্রত্যাশা জানান প্রশাসন থেকে তাদের দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনায় কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হবে না।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বিভূতি ভূষণ ব্যানার্জি বলেন, গণতন্ত্র মানেই শুধু নির্বাচন নয়, অনেক ধরণের চর্চা এর সাথে সম্পৃক্ত। এগুলো সঠিকভাবে পালন হচ্ছে কি না সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমৃদ্ধি রক্ষায় মূল ভূমিকা নিতে হবে রাজনীতিবিদদেরই। পুলিশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে মাত্র। নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন সহায়ক শক্তিগুলোকে যথাযথ ভাবে কাজে লাগাবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল নেতৃবৃন্দ পাঁচটি দলে বিভক্ত হয়ে দলীয় আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সহনশীলতা ও নির্বাচন সম্পর্কে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও সুপারিশ প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি আবুল কাহির চৌধুরী, ওসমানী নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি সালেহ আহমদ খসরু, মহানগর আওয়ামী লীগ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এটিএমএ হাসান জেবুল, জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়ছল, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগ এর মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নাজনীন হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগ এর দপ্তর সম্পাদক সাইফুল আলম রুহেল, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগ এর সভাপতি, কাউন্সিলর শাহানারা বেগম, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আসমা কামরান , মহানগর মহিলা দল এর সভাপতি অধ্যাপিকা সামিয়া চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোর্শেদ আহমদ মুকুল, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাসেম, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক, কাউন্সিলর সালেহা কবির শেপী, মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর এডভোকেট রোকসানা বেগম শাহনাজ, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জামাল উদ্দীন আহমেদ বাকের, মহানগর বিএনপির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা ইয়াসমিন, জেলা বিএনপি’র সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট খালেদ জুবায়ের, রীনা আক্তার, শোয়েব আহমেদ, মুন্না মিত্র। বিজ্ঞপ্তি