ওসমানীনগর থেকে সংবাদদাতা :
ওসমানীনগর উপজেলা সীমান্তবর্তী সুনামগঞ্জের জগন্নাথাপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ বিষয়কে কেন্দ্র করে এলাকার দু’টি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। স্কুল কেন্দ্রীক সাজানো অভিযোগ নিয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার একপেশী তদন্ত প্রতিবেদন নিয়েই এলাকায় দ্বন্দ্ব ও বিড়ম্ভনার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। পূর্ব বিরোধের রেস মিটাতে স্কুলকে পুঁজি করে স্থানীয় একটি মহল বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষানুরাগীদের ঘায়েল করতে নানা ফন্দি ফিকিরে লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। তথ্যানুসন্ধান ও স্কুল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার দীঘলবাক ক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটিতে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন একই গ্রামের মুজিবুর রহমান। কিছু দিন আগে মুজিবুর রহমান স্বেচ্ছায় ওই স্কুলের পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়ার পর দীঘলবাক গ্রামের আব্দুল আহাদ গত ১৭ মে মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে স্কুলের স্লীপের অর্থে অনিয়ম ও গাছ কাটার কথা উল্লেখ করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগটির তদন্ত প্রতিবেদন ১৯ জুন জগন্নাথপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট দাখিল করেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রাপ্র“চাই মারমা। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও প্রতিবেদনটির কোন পর্যালোচনা না করে ইউএনও’র নিকট প্রেরণ করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনটি পর্যালোচনায় দেখা যায় তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক। তদন্ত কর্মকর্তা রাপ্র“চাই মারমার দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে প্রধান শিক্ষিকার নাম ভুলসহ বিভিন্ন অসঙ্গতি রয়েছে। অভিযোগের তদন্ত কালে উভয় পক্ষকে পত্রের মাধ্যমে না জানিয়ে মুঠোফোনে অবহিত করেন। স্লীপের যাবতীয় কার্যক্রমে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির যৌথ স্বাক্ষরে তা বাস্তবায়ন এবং স্লীপের অনুমোদিত পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ ব্যয় করে ভাউচার সহ যাবতীয় রেকর্ডপত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সংরক্ষণ করার বিধান থাকলেও প্রতিবেদনে প্রধান শিক্ষকের কোনো বক্তব্যও উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া স্লীপ পরিকল্পনা বাস্থবায়ন কমিটির সভা প্রধান শিক্ষক আহবান করার বিধান থাকলেও সভাপতিকে একক ভাবে দায়ি করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। প্রতিবেদনে গাছগুলোর নির্ধারিত অনুমানিক বাজার মূল্য উল্লেখ করার নিয়ম থাকলেও সেখানে ‘বাজার মূল্য খুব বেশি নয়’ বলে উল্লেখ করেছেন যা বিধি পরিপন্থি নয় বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার। গাছ বিক্রির ব্যাপারে ইউএনওর মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিলাম কমিটির গঠন করে গাছ বিক্রির বিধান থাকলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা এ বিষয়েও সুস্পষ্ট কোন বক্তব্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনি। অপর দিকে বিদ্যালয় সংলগ্ন কর্তনকৃত গাছগুলো স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন রাস্তার বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। অসঙ্গতিপূর্ণ এই তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রাপ্র“চাই মারমা তদন্ত প্রতিবেদনে অসঙ্গতি থাকাসহ একতরফা ভাবে মনগড়া প্রতিবেদন দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন- এটা আমার ভুল হয়ে গেছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রাপ্র“চাই মারমা টাকার বিনিময়ে যৌক্তিকতাহীন তদন্ত প্রতিবেদনে টাকার আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, স্বল্প সময়ে কাজ করতে গিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান শিক্ষিকার নাম সহ বিভিন্ন বিষয়ে ভুল হয়েছে। দাখিলকৃত প্রতিবেদনে ভুল হলেও সরজমিনে টাকা আত্মসাৎ ও গাছ কর্তনের প্রাথমিক সত্যতা রয়েছে। জাগন্নাথপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিনের কাছে অসঙ্গতিপূর্র্ণ তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমি এখন ব্যস্ত আছি পরে কথা বলব।