বড়লেখা থেকে সংবাদদাতা :
প্রতিবছর ঈদুল ফিতরের ছুটিতে মৌলভীবাজারের বড়লেখার মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে হাজার হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটে। এতে ইজারাদার ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সারা বছরে এবারেরও ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ভালো বিকিকিনি হবে, এমন আশায় বুক বেধেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তাদের সে আশা পূরণ হয়নি।
সাম্প্রতিক ভারি বর্ষণে মাধবকুন্ডের টিলা ও রাস্তা দেবে যাওয়ায় অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশাসন গত বৃস্পতিবার (২২ জুন) থেকে মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ফলে গত কয়েকদিন থেকে অনেক দূর-দুরান্ত থেকে মাধবুকন্ড জলপ্রপাতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা প্রধান ফটক থেকেই ফিরে যাচ্ছেন। আর এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন ইজারাদার ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, সোমবার ঈদের দিন বিকেলে মাধবুকন্ড পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেয়ার দাবীতে আগত পর্যটকরা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
ঈদের দিন সোমবার ও পরের দিন মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে মাধবকুন্ডে গেলে ইকোপার্কের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ থাকতে দেখা গেছে। ঈদের দিন প্রায় ১ হাজার পর্যটক মাধবকুন্ডে এসেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাদের ইকোপার্কের ভেতরে প্রবেশ করতে না দেয়ায় তারা অনেকটা নিরাশ হয়ে ফিরে গেছেন। যারা আসছেন পুলিশ তাদেরকেও ফিরেয়ে দিচ্ছে।
মঙ্গলবার সিলেট থেকে মাধবকুন্ডে বেড়াতে এসেছিলেন কলেজ শিক্ষার্থী হোসাইন আহমদ, কামাল আহমদ, ফাহিম আহমদ, আমিনুল ইসলাম। জলপ্রপাতে প্রবেশ করতে না দেয়ায় তারা অনেকটা নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কথা হয় তাদের সঙ্গে। তারা বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে খুব আশা করে বন্ধুরা মিলে মাধবকুন্ডে বেড়াতে এসেছিলাম। কিন্তু পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এজন্য ফিরে যাচ্ছি।’ এছাড়া পর্যটক না থাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন।
গ্রামীণ রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী সাইদুল ইসলাম বলেন, গত ঈদে এমন সময় কম হলেও ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বিকিকিনি হয়েছিল। কিন্তু এবার অবস্থা খুব খারাপ। তিনি ক্যাশ খুলে দেখালেন সারা দিনে মাত্র ১’শ টাকা বিক্রি করেছেন। গ্রামীণ রেস্টেুরেন্টের পাশের দোকান মীম ঝিনুক এন্ড কসমেটিক্সের দোকানে কর্মচারীর কাজ করেন জাহেদ আহমদ ও এবাদ আহমদ। তারা বলেন, ‘দোকান মালিক এ বছর প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার মালামাল তুলেছেন। সারাদিনে প্রায় ১ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। তারা আরও বলেন, ‘দোকানে আমরা মোট ১৬ জন কর্মচারী কাজ করি। কিন্তু মাধবকুন্ডে পর্যটক না আসায় তারা মাত্র ছয়জন দোকানে কাজ করছেন। বিকিকিনি না থাকায় বাকিরাও আসেনি।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন, এমরান হোসেন, রাজুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম, শামীম আহমদ, আলী হোসেন, স্বপন আহমদ, আবুল হোসেন, হেলাল উদ্দিন, বেলাল আহমদ জানান, মাধবকুন্ডে সবমিলেয়ে মোট ৬০টি দোকান রয়েছে। সারা বছরে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বিকিকিনি একটু ভালো হয়। এবছর তারা বিকিকিনি ভালো হওয়ার আশায় ধারদোকানগুলোতে লাখ লাখ টাকার মালামাল তুলেছিলেন। কিন্তু মাধবকুন্ডে পর্যটক না আসায় তারা মন্দা সময় কাটাচ্ছেন। তারা মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের রাস্তা দ্রুত মেরামত করে গেট খুলে দেয়ার জোর দাবী জানান।
ইজারাদার জুনেদে আহমদ ও রিফাত আহমদ বলেন, ‘বনবিভাগ ইকোপার্ক থেকে বছরে ৩০-৩৫ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করছে। ঈদের আগে ও পরে ১০-১৫ দিন হাজার হাজার পর্যটক আনন্দ উপভোগে এখানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে ছুটে আসেন। ১৫ দিন আগের বর্ষণে রাস্তায় সামান্য ফাটল আর অল্প দেবে যাওয়া মেরামতে বনভিবাগ চরম উদাসীন। দেশের দূরদুরান্তের পর্যটকের দুর্ভোগের কথা তারা মোটেও চিন্তা করেনি। কোন পূর্ব প্রস্তুতি নেয়নি। বর্ষাকালে অতীতেও মাধবকুন্ডের রস্তা-ঘাট বিধস্ত হয়েছে। কিন্তু ইকোপার্ক বন্ধ করার ঘটনা ঘটেনি। তারা অবিলম্বে পর্যটকের জন্য মাধবকুন্ডের তালা খুলে দেয়ার দাবী জানান।’
মাধবকুন্ড পর্যটন পুলিশের ইনচার্জ এসআই জাহাঙ্গির আলম বলেন, ‘ঈদের দিন ব্যাপক পর্যটক এসেছিলেন। কিন্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় তাদরেকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। নিজেরও কষ্ট লাগছে। অনেক দূর থেকে মানুষজন হাজার হাজার টাকা খরচ করে আসার পর গেট থেকেই তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে বনবিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে শ্রমিক না থাকায় সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে। কাজ শেষে অভ্যন্তরীণ রাস্তা পর্যটকের চলাচলের উপযোগী করেই ইকোপার্কের গেট খুলে দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক ভারি বর্ষণে মাধবকু- ইকোপার্কের সড়কের পর্যটন রেস্তোরাঁ এলাকার কাছে প্রায় ৪০ ফুট জায়গা প্রায় দুই ফুটের মতো নিচের দিকে দেবে যায়। তা ক্রমশই দাবছে। এছাড়া রোস্তারাঁর কাছে উপরে উঠার সিঁড়ির বামপাশের নিচের প্রায় ৪০ ফুট এবং জলপ্রপাতের কাছে নামার সিঁড়ির ডান পাশের নিচের প্রায় ৩০ ফুটের মতো জায়গার মাটি সওে গেছে। এতে ইকোপার্কের সড়ক ও সিঁড়ি দুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। ফলে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত এলাকাটি পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন গত বৃস্পতিবার (২২ জুন) থেকে মাধবকুন্ডে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা মাধবকুন্ড।