ফেঞ্চুগঞ্জে বাস চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

ফেঞ্চুগঞ্জ সংবাদদাতা

ফেঞ্চুগঞ্জে বাসচাপায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে ফেঞ্চুগঞ্জ-নয়াবাজার সড়কে মধ্যভাগে ফরিদপুর এলাকার সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত জুবায়ের আহমদ জুবা (৩৩) উপজেলার মাইজগাঁও ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের মৃত আকরাম আলীর ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোটরসাইকেলে করে নয়াবাজার এলাকায় যাচ্ছিলেন জুবায়ের। এ সময় মৌলভীবাজারের ভাটেরা থেকে ছেড়ে আসা বিপরীতগামী (নরসিংদী-জ-১১-০০৯৮) নাঈম পরিবহণ নামে যাত্রীবাহী বাস মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে গুরুতর আহত হন জুবায়ের। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন জুবায়ের।
ফেঞ্চুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান খান বলেন, দুর্ঘটনার পর বাস চালক ও হেলপার পালিয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত বাস ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।

সিলেটজুড়ে একের পর এক ছিনতাই ডাকাতি

মো. আব্দুল হাছিব

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিলেট নগরী, উপজেলা এবং মহাসড়কে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ছিনতাই ও ডাকাতি। রাতে পুলিশের স্বাভাবিক টহল না থাকার সুযোগে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের উপদ্রবে অনেক পরিবার হচ্ছেন নিঃস্ব। সিলেট অঞ্চল প্রবাসী অধ্যুষিত, স্বাভাবিকভাবেই প্রবাসীরা বিভিন্ন সময় দেশে আসেন। ছিনতাই-ডাকাতি বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসী ও সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা বাড়ছে। গত প্রায় দুই মাসে যতগুলো ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে তার সবই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা না থাকার জন্য বলে মনে করছেন সচেতন মহল। কয়েকটি ঘটনা অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ছিনতাইকারীরা মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছিনিয়ে নিচ্ছে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোনসামগ্রী। এছাড়াও ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে যাওয়ার পথে ছিনতাইয়ের স্বীকার হচ্ছেন অনেকেই। ছিনতাইকারিদের জন্য নিরাপদে নেই দিন ও রাতের নগরী। গত ২ নভেম্বর শাহজালাল উপশহর এলাকায় দিনেদুপুরে ছিনতাইকারীরা ফুলকলি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড এর ১লাখ নব্বই হাজার টাকা নিয়ে যায়। এ ঘটনায় শাহপরাণ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ করেছেন, ফুলকলি ফুডপ্রোডাক্টস লিমিটেড সিলেট বিভাগরে ডিজিএম মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
অভিযাগের বিবরণে জানা যায়, শনিবার ফুলকলির নিজস্ব গাড়ি চালক মোঃ আবু সালেহ চৌধুরী (৪২) প্রতিষ্ঠানের চন্ডিপুল শাখা থেকে ১লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা এবং লালা বাজার শাখা থেকে ষাট হাজার গ্রহণ করে ফের গাড়ি যোগে খাদিম নগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। শিবগঞ্জ আসা মাত্র গাড়িটি বিকল হয়ে যায়। পরে শিবগঞ্জস্থ শিবলী মটরসে গাড়ি রেখে যন্ত্রাংশ ক্রয় করার জন্য তিনি সুবহানীঘাটে আসেন। সেখানে ক্রয় শেষে বেলা ১২টার দিকে উপশহর রোজভিউর সামনে থেকে লোকাল সিএনজি যোগে শিবগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। এ সময় গাড়িতে উঠে আরো তিন যাত্রী।
শাহজালাল উপশহরের বি-বøকের নার্সিং কলেজের সম্মুখে আসামাত্র ওই তিন যাত্রী অভিনব কায়দায় একলক্ষ নব্বই হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে দ্রæত পালিয়ে যায়।
এর আগে ২ অক্টোবর ফিল্মি স্টাইলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এক ব্যাংক কর্মচারীর কাছ থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারিরা।
ছিনতাইয়ের শিকার শাহীন আহমেদ গোলাপগঞ্জের বাঘা এলাকার মাসুক মিয়ার ছেলে। তিনি আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক গোলাপগঞ্জ শাখার অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত। শাহীন আহমেদ জানান, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লালদীঘিরপাড় শাখা থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে গোলাপগঞ্জ ফিরছিলেন তিনি। কদমতলী ওভারব্রিজের কাছে যাওয়ার পর ৩ মোটরসাইকেলে ৬ ছিনতাইকারী এসে ধারালো অস্ত্রেও মুখে তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ছিনতাইকারীদের মাথায় হেলমেট ও টুপি ছিল।
গত ৭ নভেম্বর নগরীর দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের অভিযানে চার ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই করা দুটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।
কদমতলীস্থ রেলস্টেশন গেইট এলাকা থেকে তিনজনকে ৮ নভেম্বর গোলাপগঞ্জ উপজেলার দত্তরাইল গ্রাম থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিলেট মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধ হয়ে পথচারীদেরকে আটক করে চাকু দিয়ে ভয় দেখিয়ে ও জোর করে মোবাইল, টাকা, স্বর্ণালঙ্কাকারসহ মূল্যবান মালামাল ছিনতাই করতো। এঘটনায় দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলা করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন শাহীরুল ইসলাম জীবন (১৯), তানভীর হোসেন (১৮), রিমন আহমদ (১৮) ও শাকিল আহমদ (১৯)। তাদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুরমা থানায় মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে বেশি আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে ডাকাতি। উপরাপুর কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে সিলেট নগরীতে। গত ৩ অক্টোবর নগরীর মেজরটিলা (ইসলামপুর) মোহাম্মদপুর আবাসিক এলাকার বøক-সি’র প্রত্যাশা-৮নং বাসায় রাত ৪টার সময় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা বাসার গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাসার মালিক ও তার স্ত্রীকে বেঁধে স্বর্নালংকার, ২টি মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার ৪ থেকে ৫ দিন পর সকাল ৯টার সময় নোহা লাইটেসযোগে একদল ডাকাত নগরীর ২৭নং ওয়ার্ডের আলমপুর গ্রামে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আব্দুর নূরের মুদির দোকান থেকে নগদ টাকাসহ মালামাল নিয়ে যায়। একই ওয়ার্ডে ৩ দিনের মাথায় পৈত্যপাড়ার ব্যবসায়ী পিযুষ পালের বাসায় দুর্গাপূজায় নবমীর রাতে ঘরের তালা ভেঙে ১৫ ভরি স্বর্ণালংকারসহ নগদ টাকা নিয়ে যায় একদল ডাকাত। অপরদিকে ৭ই নভেম্বর নগরীর ৪১নং ওয়ার্ডের পশ্চিমভাগ আবাসিক এলাকায় আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে আরেকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় ওয়্যারড্রপে থাকা ৮০ হাজার টাকা, দেড় ভরি সোনা, ৩টি মোবাইল ফোন ও একটি পালসার মোটরসাইকেল (সিলেট মেট্রো ল ১১৭৬৪৫) নিয়ে যায়।

সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায়ও নিয়মিত ডাকাতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিয়ানীবাজার ইনার কলেজ রোড সংলগ্ন কাজী রেজাউল কবিরের বাড়িতে ভোর রাতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
গত ২০ আগস্ট দিবাগত রাত ৩ টার দিকে পৌর শহরের নিদনপুর গ্রামের হাজীপাড়ায় সালেহ আহমদের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসময় পরিবারকে জিম্মি করে অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কারসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিয়ে যায় ডাকাতরা।
গত ২০ সেপ্টেম্বর ভোররাতে গোলাপগঞ্জের ফুলবাড়ী পূর্বপাড়ার মাসুম আহমেদের (৭০) বসতঘরে সশস্ত্র অবস্থায় হাফপ্যান্ট পরিহিত মুখোশধারী ডাকাতদল হানা দেয়। এ সময় নগদ টাকা, ৪ ভরি ওজনের ১টি স্বর্ণের ব্রেসলেট, ৮টি স্বর্ণের কানের দুল, ২টি স্মার্টফোন লুটে নেয়। ১৭ই আগস্ট সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার দিঘালীগ্রামে প্রবাসী আব্দুল কাইয়ুমের বাড়ীতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতরা দেশীয় অস্ত্র ও পিস্তল নিয়ে বাড়ির লোকজনদের জিম্মি করে মারধর করে নগদ ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা, ৪ ভরি স্বর্ণালংকার, মোবাইল, আইপড, ট্যাবসহ প্রায় ৭ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় জনমনে দেখা দিয়েছে ভয়। অনেকে জীবনের ভয়ে ঘরে যা কিছু আছে, তুলে দিচ্ছেন ডাকাতদের হাতে। পুলিশী টহল কমে যাওয়া, চেকিং না থাকাসহ নানা কারণে ডাকাতি, ছিনতাই করে নিরাপদে পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা।
এসব ডাকাতির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন-এর সিলেট সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশের কার্যক্রম পূর্বের মত শক্তিশালী অবস্থায় না থাকায় সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। এ কারণে সিলেট অঞ্চলে ছিনতাই ও ডাকাতি বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশের টহল ও নজরদারী বৃদ্ধি পেলে অনেকাংশেই এসব অপরাধ কমে যাবে বলে বিশ্বাস করি।

এ বিষয়ে সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী সুপার সম্রাট তালুকদার বলেন, ৫ই আগষ্টের সময় আমাদের সিলেটের বিভিন্ন থানা ক্ষতিগ্রস্থ, ট্রান্সপোর্টের সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রমে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের যোগদানের পর তাঁর নেতৃত্বে পুলিশের সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠছে। বর্তমানে পুলিশ টহল ও নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমরা প্রতিদিনই সিলেটের বিভিন্ন জায়গা থেকে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। ইতিমধ্যে ডাকাতদলের অনেক সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে, অভিযান চলমান রয়েছে।
মেট্রোপলিটন এলাকায় ঘন ঘন ডাকাতি ও ছিনতাই নিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ রেজাউল করিম পিপিএম (সেবা) বলেন, এসব ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশের চৌকস কর্মকর্তারা কাজ করছেন। ডাকাতির সাথে জড়িতরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে, যার কারণে তাদের গ্রেফতার করতে একটু সময় লাগছে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট এসব ডাকাতির ঘটনা নিয়ে কাজ করছে, তবে দ্রæত জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন ছিনতাইকারী ও ডাকত দলের আটক করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ধারালো অস্ত্র ও লুটকৃত মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

 

নবীগঞ্জে আসামিসহ গ্রেফতার ২

নবীগঞ্জ প্রতিনিধি

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে পুলিশের বিশেষ অভিযান খুনি মামলা ও জি আর মামলার পলাতক আসামি সহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। খুনি মামলার এজাহার নামীয় পলাতক ও জিআর সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী হলো উপজেলার তিমিরপুর গ্রামের মৃত মাহিদ মিয়ার পুত্র ছাদির মিয়া (৪১)। জি আর সূত্রোক্ত মামলা এজাহার নামীয় আরেক পলাতক আসামি হলো করগাঁও ইউনিয়নের পুরুষত্তোমপুর গ্রামের মৃত আবারক মিয়ার পুত্র আবুল কালাম(৫০)।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামাল হোসেন পিপিএম এর দিক নির্দেশনায় ও এসআই, সুমন মিয়া, এস আই আব্দুর কাদেরের নেতৃত্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নবীগঞ্জ উপজেলা তিমিরপুর ও টুকেরবাজার স্থানে বিশেষ অভিযান চালিয়ে খুনের মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক ও জি আর এজাহার নামীয় পলাতক আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করেন নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত(ওসি) মো. কালাম হোসেন পিপিএম। তিনি বলেন গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে হবিগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

 

গ্রেফতারকৃত গৃহশিক্ষিকাসহ ৪ আসামি ৫ দিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার

সিলেটের কানাইঘাটে শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন (৫) খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত গৃহশিক্ষিকাসহ ৪ আসামির ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার বেলা পৌনে ৩ টার দিকে সিলেট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (চতুর্থ) আদালতের বিচারক কাজী মো. আবু জাহের বাদল এই আদেশ দেন।
রিমান্ডকৃত আসামিরা হলেন- কানাইঘাট থানার সদর ইউনিয়নের বীরদল ভারারিফৌদ গ্রামের শামীমা বেগম ওরফে মার্জিয়া (২৫), তার মা আলিফজান বেগম (৫৫), একই গ্রামের ইসলাম উদ্দিন (৪০) ও নাজমা বেগম (৩৫)। তারা সবাই শিশু মুনতাহার প্রতিবেশী।
মুনতাহা হত্যায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কানাইঘাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামসুল আরেফিন জিহাদ ভ‚ঁইয়া গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ৭ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক প্রত্যেকের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। নিহত মুনতাহা কানাইঘাটের বীরদল ভারারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। ৩ নভেম্বর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। রবিবার ভোররাতে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার বেলা ১ টার দিকে মুনতাহা হত্যাকাÐে গ্রেফতার ৪ জনকে আদালতে তুলা হয়। বেলা ২টা ৪০ মিনিটের দিকে মামলার শুনানি শুরু হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হত্যাকাÐের ঘটনায় কারা কারা জড়িত, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্তের জন্য গ্রেফতার ৪ জনের রিমান্ডের আবেদন করেন। এ সময় বাদীপক্ষের আইনজীবীরা শিশু মুনতাহা হত্যার বিষয়টি চাঞ্চল্যকর ঘটনা উল্লেখ করে ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য রিমান্ড দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষের এক আইনজীবী রিমান্ডের বিরোধিতা করেন। পরে বিচারক গ্রেফতার ৪ জনের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে নিহত মুনতাহা আক্তারের বাবা শামীম আহমদের দায়ের করা অপহরণ মামলা হত্যা মামলার ধারা সংযোজন করার জন্য আদালতে আবেদন করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল খালেক বলেন, আলোচিত মুনতাহা হত্যাকাÐ দেশের পাশাপাশি বহির্বিশ্বে আলোচিত হয়েছে। শিশু বাচ্চাকে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করে লাশ ডোবায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। আমরা ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ড আবেদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছি। আদালত আমাদের পক্ষে শুনানিতে আদেশ দিয়েছেন।
সিলেট জেলা পুলিশের আদালত পরিদর্শক জমশেদ আলম বলেন, নিহত মুনতাহার বাবা প্রথমে মেয়ে নিখোঁজের ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। পরে গত শনিবার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। লাশ উদ্ধারের পর এটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবেদন করেছেন। বিচারক সেটিকে হত্যা মামলা হিসেবে আমলে নিয়েছেন। জমশেদ আলম আরও বলেন, আদালতে আনার পর গ্রেফতার হওয়া কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। পরে তাদের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালতের আদেশের পর রিমান্ডের জন্য তাদের থানায় নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রবিবার বাদ আসর জানাজার নামাজ শেষে বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে ঘাতক গৃহশিক্ষিকা শামিমা আক্তার মার্জিয়াসহ তিন নারীর বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
স্থানীয়রা জানান, মুনতাহাকে ২৫০ টাকায় প্রাইভেট পড়াতো মার্জিয়া। তার মা আলিফজান ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। ঘরে তার আশিউর্ধ্ব নানি রয়েছেন। মার্জিয়া চুরির ঘটনায় এবং তার চলাফেরা খারাপ প্রতিয়মান হওয়াতে টিউশনি থেকে তাকে বাদ দেন সেলিম আহমদ। সেই ক্ষোভে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে ওঠে মার্জিয়া। সেলিম আহমদের উপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে শিশু মার্জিয়াকে অপহরণের পর হত্যা করে।

বিনা লাভের মাছের বাজার

জুড়ী সংবাদদাতা

বাজারমূল্যের চেয়ে অনেকটাই কম দামে মাছ বিক্রি করা হয় মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা সদরের বাছিরপুর এলাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে। এর আয়োজন করেছেন কৃষক দলের স্থানীয় একজন নেতা।
সড়কের পাশে টানানো ব্যানারে বড় করে লেখা ‘বিনা লাভের মাছের বাজার’। সামনে চওড়া টেবিলের ওপর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ স্ত‚প করে রাখা। সেখানে ক্রেতা ও উৎসুক মানুষের জটলা। কেউ মাছের দাম জিজ্ঞাসা করছেন, কেউ কিনে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। বাজারমূল্যের চেয়ে দাম অনেকটাই কম। অন্যদিকে মাছ কেনার পর কুপন তুলে মিলছে নানা খাবারও। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা সদরের বাছিরপুর এলাকায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে রবিবার বিকেলে এই দৃশ্য দেখা যায়। বিএনপির সংগঠন কৃষক দলের পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন কমিটির ব্যানারে এ বাজার স্থাপন করা হয়।
বেলা তিনটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মাঝারি আকারের মলা, ছোট-বড় রুই, মৃগেল, পাঙাশ, তেলাপিয়া ও কানলা মাছ রাখা ছিল। আয়োজকেরা ক্রেতাদের পছন্দের মাছ ওজন করে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিচ্ছিলেন। তাদের একজন টাকা গুনে বাক্সে রাখছিলেন। সেখানে একটি প্লাস্টিকের বয়ামে কাগজের ছোট ছোট টুকরার কুপন রাখা ছিল। ক্রেতারা কুপন তুলে চা, শিঙাড়া, পান, চকলেট, বিস্কুটসহ নানা ধরনের খাবারসামগ্রী পাচ্ছিলেন।
রফিক মিয়া নামের একজন সেখানে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছিলেন। তিনি বিএনপির রাজনীতি করেন। সম্প্রতি দুবাই থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, রুই ও মৃগেল ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা, মলা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এখানে প্রতি কেজি পাঙাশ ১৫৫ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ টাকা, রুই ও মৃগেল ২৮০ টাকা, মলা ১৫০ টাকা ও কানলা মাছ ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছ কিনতে আসা আমতৈল এলাকার বাসিন্দা মুহিবুর রহমান বলেন, শনিবার রাতে বাজার বসবে বলে মাইকিং হয়েছে। তাই চলে এলাম। ৩ কেজি রুই, ৪ কেজি পাঙাশ আর ১ কেজি মখা (মলা) কিনেছি। বাজারের চেয়ে দাম কম, মাছও তাজা। ভালো উদ্যোগ।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক ফরিদ মিয়া ৭৫ টাকা দিয়ে আধা কেজি মলা কেনেন। তিনি বলেন, বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। গরিবের খাইয়া বাঁচি থাকাই কঠিন। সারা দিন ভাড়ায় রিকশা চালাই। এইখানে কম দরে মাছ বেচতে দেখলাম। তাই কিনি নিলাম।
বাজারের কর্মীরা বলেন, ক্রেতাদের আকর্ষণের জন্য কুপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাজারে গেলে লোকজন কেনাকাটার ফাঁকে চা-পানসহ নানা খাবার খান। এখানে কুপন তুলে বিনা মূল্যে খাবার পাওয়া যায়।
কৃষক দলের ইউনিয়ন কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল মিয়া এ বাজারের মূল উদ্যোক্তা। তার একটি মাছের খামার আছে। এই বাজারের মাছ ওই খামারেরই। হেলাল বলেন, খামারে নানা প্রজাতির মাছ চাষ করেছেন। এখানে যে দরে মাছ বিক্রি করছেন, একই দরে মৎস্যজীবীদের কাছেও বিক্রি করেন। মৎস্যজীবীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, এ কারণে উপজেলা সদরের মাছ-সবজির বাজার থেকে কিছু দূরে তারা এ বাজার বসিয়েছেন। তিনি বলেন, রবিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত প্রায় ২০০ কেজি মাছ বিক্রি হয়েছে। সকালের দিকে মানুষের ভিড় বেশি ছিল।

জনগণই বিএনপির রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস

বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, দেশনায়ক তারেক রহমান সাম্য ও মানবিক সমাজ বিনির্মাণের যে উদ্যোগ গ্রহণ করছেন তা বাংলাদেশের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। দেশের মানুষ বিএনপির এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সাম্য ও মানবিক সমাজ বিনির্মাণে আমাদেরকে কাজ করতে হবে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রয়োগের মধ্যদিয়ে গণতান্ত্রীক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে খুনি, লুটেরা, টাকা পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্রের সদস্যদের বিচারের ব্যবস্থা করতে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, জনগণই বিএনপির সব রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জনের মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণ যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে আমাদের কাজ করতে হবে। দেশের বিরুদ্ধে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ক্ষমতা হারিয়ে ৫ আগস্টের পরাজিত অপশক্তি অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। তিনি সোমবার (১১ নভেম্বর) সিলেট মহানগর বিএনপির আওতাধিন ৩১নং ওয়ার্ড বিএনপি আয়োজিত মুরাদপুর বাজারের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠায় নিরলস ভাবে কাজ করে গিয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে সবাইকে সাম্য, মানবিক সমাজ বিনির্মানে কাজ করতে হবে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমাদের সবাইকে দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে সাম্য ও মানবিক সমাজ বিনির্মানে দলীয় দিক নির্দেশনা মেনে দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
৩১ নং ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক রাজন মিয়ার সভাপতিত্বে ও ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম এবং লায়েছ আহমদের যৌথ পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম, জিয়াউল গণি আরেফিন জিল্লুর, আব্দুর রহিম মল্লিক, মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজিবুর রহমান নজিব, আব্দুল ওয়াহিদ সুহেল, মতিউল বারী খোরশেদ, সাংগঠনিক সম্পাদ রফিকুল ইসলাম রফিক।
৩১নং ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য রুবেল আহমদের স্বাগত বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্যে রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, আব্দুল মুনিম, নাজিম উদ্দিন, দেওয়ান আরাফাত চৌধুরী জাকি, মুর্শেদ আহমদ, শাহিন আহমদ, কয়েস আহমদ সাগর, সেলিম আহমদ সেলু, আমিনুল ইসলাম, ফখর উদ্দিন পংকি, জমির উদ্দিন, সুহেল আহমদ, ফরহাদ আহমদ, ইফতেখার আহমদ পাবেল, ৩১নং ওয়ার্ড বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য শাহাবুদ্দিন, মইন উদ্দিন, গিয়াস মিয়া, নিজাম মিয়া, সাজ্জাদ মিয়া, লিয়াকত আলী, হারুন রশিদ, আয়াছ আহমদ, কবির মিয়া, এলাকার প্রবীন মুরব্বি ফটিক মিয়া, মসাহিদ মিয়া, খালিক মিয়া, খলিল মিয়া, মকন মিয়া, মানিক মিয়া, শফিক মিয়া, তকবির আলী, আব্দুর রকিব, ময়না মিয়া, জুনেদ আহমদ মুক্তার, নাজির আহমদ, এমদাদ হোসেন, সাহিদ মিয়া, সরফ মিয়া, নজরুল ইসলাম, বিলাল মিয়া, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ফেরদৌস আলম, জামাল আহমদ প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি

প্রার্থী মনোনয়ন আরও সুষ্ঠুভাবে হওয়া দরকার

কাজির বাজার ডেস্ক

বিদ্যমান নির্বাচনপদ্ধতি পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আবু হেনা। তিনি বলেন, দেশের চলমান নির্বাচনপদ্ধতিই কার্যকর হতে পারে। এ পদ্ধতির সঙ্গে দেশের মানুষ পরিচিত। নির্বাচনের সফলতা নির্ভর করে নির্বাচনী আইন প্রয়োগের ওপর। নির্বাচন কমিশনে যোগ্য মানুষ দরকার।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাবেক সিইসি আবু হেনার সঙ্গে মতবিনিময় করে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। বৈঠক শেষে আবু হেনা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
বিদ্যমান নির্বাচনপদ্ধতির পরিবর্তনে সংখ্যানুপাতিক বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি চালু করার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবু হেনা বলেন, যেসব দেশে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি চালু আছে, সেসব দেশ যে ভালোভাবে চলছে, তা কিন্তু নয়। নেপাল, ইসরায়েলÑএসব দেশে ভালো চলছে না। দেশে বর্তমান যে নির্বাচনপদ্ধতি, সেটার সঙ্গে মানুষ পরিচিত। এই পদ্ধতিকে কার্যকর করে তোলা দরকার।
১৯৯৬ সালে সপ্তম সংসদ নির্বাচনের সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা আবু হেনা বলেন, আইন কার্যকর করা না হলে যত সংস্কার বা ভালো আইন করা হোক, তা অর্থবহ হয় না। নির্বাচনের সফলতা নির্ভর করে নির্বাচনী আইন প্রয়োগের ওপর। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশনে যোগ্য মানুষ দরকার। তাঁরা যদি যোগ্য না হন, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকে।
রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে আবু হেনা বলেন, প্রার্থী মনোনয়ন আরও সুষ্ঠুভাবে হওয়া দরকার। ওপর থেকে আরোপ নয়, প্রার্থীর মনোনয়ন নিচ থেকে আসতে হবে। স্থানীয়ভাবে ভোটের মাধ্যমে প্রাথমিক নির্বাচনের মতো করে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া দরকার।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রয়োজন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আবু হেনা বলেন, সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হবে, নাকি বর্তমান পদ্ধতিতে চলবে, তা রাজনৈতিক দলগুলো ঠিক করবে। এটি রাজনৈতিকভাবে ঠিক করলেই ভালো।
এক প্রশ্নের জবাবে আবু হেনা বলেন, যোগ্য লোক নির্বাচন কমিশনে থাকলে রাজনৈতিক সরকারের আমলেও ভালো নির্বাচন করা সম্ভব। ভারতে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা আইন-বিধি পর্যালোচনা করছি। আশা করছি, যথাসময়ে সরকারের কাছে কমিশন প্রস্তাব পেশ করতে পারবে। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে অনেক প্রস্তাব পেয়েছি। আরও পাব বলে আশা করছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অনেক ধরনের প্রস্তাব আসছে। যেমন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে কেউ পক্ষে, কেউ বিপক্ষে প্রস্তাব করেছে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে যদি সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ রকম অনেক বিষয় আছে, যেগুলো বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। ওই সব বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনকেই মূলত সুপারিশ করতে হবে।

 

ছাতকে ভারতীয় ৩৫ বস্তা কাপড় উদ্ধার, আটক ১

ছাতক প্রতিনিধি

ছাতকে ভারতীয় ৩৫ বস্তা কাপড় উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। রবিবার সকালে উপজেলার পিয়াইন নদীতে টহলরত নৌ-পুলিশের একটি টিম এসব মালামাল উদ্ধার ও এক ব্যক্তিকে আটক করেন। আটক হোসাইন আহমদ, উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের লুবিয়া গ্রামের আব্দুল হেকিমের ছেলে। এসময় মালামাল পরিবহনে ব্যবহৃত ১টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা জব্দ করা হয়। উদ্ধারকৃত ভারতীয় শাড়ি, ত্রি-পিস ও চাদরের আনুমানিক মূল্য প্রায় ২৩ লাখ টাকা।
জানা যায়, প্রতিদিনের মতো নদী পথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পিয়াইন নদীতে টহল দেন নৌ পুলিশের একটি টিম। এসময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নদীতে চলাচলরত একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকার গতিরোধ করে নৌ-পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নৌকার লোকজন পিয়াইন নদীর পশ্চিম তীরে নৌকা ভিড়িয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এসময় পুলিশ ধাওয়া করে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় হোসাইনকে আটক করে। পরে নৌকায় তল্লাশি করে ৩৫ বস্তা ভর্তি ভারতীয় শাড়ি, ত্রি-পিস ও চাদর উদ্ধার করে।
নৌ পুলিশের পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন জানান, আটক ব্যাক্তি ও পলাতকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে এবং আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক; টাকা না পেয়ে খালি হাতে ফিরছে গোবিন্দগঞ্জ শাখার গ্রাহকরা

আতিকুর রহমান, ছাতক

ছাতকে ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক এসআলম গ্রæপের মালিকানাধীন গোবিন্দগঞ্জ শাখা থেকে টাকা না পেয়ে খালি হাতে ফিরছে গ্রাহকরা। ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দিলেও বেশির ভাগ গ্রাহকরা খালি হাতে ফিরছেন। প্রতিদিন ব্যাংকে গিয়েও টাকা তুলতে পারছেন না বেশির ভাগ গ্রাহকরা। এতে প্রায় ১৩ হাজার গ্রাহকের জমাকৃত টাকা উত্তোলন করতে পাছেন না বলে জানাগেছে।
সোমবারে ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক গোবিন্দগঞ্জ শাখার গ্রাহকরা টাকা উত্তোলন করতে এসে খালি হাতে ফিরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাংকে দিনে শতাধিক গ্রাহক জড়ো হন টাকা উত্তোলনের জন্য। কিন্তু এ শাখাতে টাকার সংকট থাকায় এবং গ্রাহকরা চাহিদা মতো টাকা পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, ব্যাংকে ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) ও রিয়েল-টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) বন্ধ থাকার পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং ও এটিএম বুথেও টাকা দেওয়া বন্ধ থাকার কারণে প্রায় ১৩ হাজার গ্রাহক চরম ভোগান্তি পড়েছেন। এ ব্যাংকের গ্রাহক ছাবিনা খানম বলেন, ব্যাংকে টাকা ৪লাখ টাকা জমা রয়েছে অথছ তারা আমাকে মাত্র ৫ হাজার দিচ্ছেন। গত দুই সপ্তাহে টাকা তুলতেই পারিনি। ব্যাংকের অফিসাররা বলছেন তাদের কাছে টাকা নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক বলেন, অনেক গ্রাহকরা সাদা চেকে স্বাক্ষর করে টাকার অঙ্ক না লিখে তা ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে জমা রেখে যাচ্ছেন। যেন ব্যাংকে টাকা জমা হলে সামান্য কিছু হলেও পাওয়া যায়। কেউ কেউ লক্ষ টাকা নিয়ে যেতে দেখা যায় আর আমরা ২০/৩০ হাজার টাকাও পাইনা। ব্যাংকের অফিসাররা বলছেন তাদের কাছে টাকা নেই। তাহলে আমাদের জমানো টাকা গেলো কই। গ্রাহকদের লাইন দীর্ঘ হতে দেখা যায় ক্যাশ কাউন্টার ও ব্যবস্থাপক কক্ষের সামনে। কিন্তু অবশেষে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
ব্যাংক ব্যবস্থাপক নাসিম আহমদ চৌধুরী এব্যাপারে বলেন, টাকা সংকটের বিষয় স্বীকার করে বলেন, সকল গ্রাহকের চাহিদা মতো টাকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন গ্রাহকদের ৫ থেকে ১০হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু নতুন করে গ্রাহকরা টাকা জমা না দেওয়ার ফলে এ সংকট দেখা দিয়েছে।

জুড়ীতে বিএসএফের গুলিতে নারী ও শিশুসহ ৭ রোহিঙ্গা আহত

জুড়ী সংবাদদাতা

মৌলভীবাজারে জুড়ী উপজেলার বটুলী সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে এক নারী ও শিশুসহ ৭ জন আহত হয়েছেন। রবিবার ভোর রাতে ভারত থেকে উপজেলার বটুলী সীমান্ত দিয়ে ৭ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের সময় এ ঘটনা ঘটে।
পরে তারা কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে চিকিৎসক তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। তবে এ ব্যাপারে বিজিবির কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। গুলিবিদ্ধরা হলেন- দিলারা বেগম (২৮) ও সোহানা (৮)। আহতরা হলেন- নাজিমুদ্দিন (৩৫), নুর সাহিদ (৮), নূর সাহারা (৭), মোহাম্মুনুর আক্তার (৫) ও সাইফান নুর (২)।
জানা যায়, ভারত থেকে অবৈধপথে নাজিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী দিলারা বেগম ৫ শিশুসন্তান নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে বিএসএফ। এ সময় দিলারা বেগম ও তার কোলে থাকা শিশু সোহানা গুলিবিদ্ধ হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাজিম উদ্দিন জানান, বিএসএফের এক সৈনিক এক রাউন্ড গুলি করে। ওই গুলি তার স্ত্রী ও সন্তানের গায়ে লাগে। পরে আরও গুলি করতে চাইলে বিএসএফের অস্ত্র থেকে গুলি আটকে যায়। পরে তারা দ্রæত বাংলাদেশের ভেতর ঢুকে পড়েন। প্রায় ২ বছর আগে শাশুড়িকে দেখার জন্য তারা ভারতে যান। দালালের মাধ্যমে ফেরার পথে সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হন তার স্ত্রী ও এক সন্তান। পরে রবিবার সকাল ৭টার দিকে তারা কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে চিকিৎসক তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর জেনারেল হাসপাতাল পাঠান।
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর জেনারেল হাসপাতালের সানেক ভারপ্রাপ্ত তত্ত¡াবধায়ক ডা. বিনেন্দু ভৌমিক বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে রবিবার বিকেলে শিশু ও তার মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সকালে তারা জুড়ী থেকে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায়। পরে চিকিৎসক তাদের জেলা সদর হাসপাতালে পাঠান।