মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
সকল ধর্মই নারীর প্রতি যে কোন ধরনের সহিংসতা বিরুদ্ধে। নারী যেন কোন সহিংসতার শিকার না হয় তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ধর্মসমূহ বিভিন্ন বিধান দিয়েছে, বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অথচ কোন কোন ক্ষেত্রে ধর্মের নামে নারী নির্যাতিত হয়, নারী সহিংসতার শিকার হয়। এ মূলে রয়েছে পুরুষ সমাজের নারীকে বশীভূত রাখার প্রভূসুলভ অসুস্থ মানসিকতা এবং কখনো কখনো ধর্মের অপব্যাখ্যা ও অপব্যবহার। বর্তমান বিশ্বের সর্বত্র নারী নানাভাবে সহিংসতার শিকার। খুন, গুম, অপহরণ, উত্যক্তকরণ, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন, বৈষম্য, ধর্ষণ প্রভৃতি নারীদের জীবনযাত্রা বিভীষিকাপূর্ণ করে তুলেছে। নারীদের ক্ষেত্রে যদি ইসলাম প্রদত্ত নির্দেশনা ও আইনগুলো সবাই মেনে চলতো তাহলে নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা এমন প্রকট আকার ধারন করতো না। এ প্রবন্ধে ধর্মে নারীদের অবস্থা ও অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। ধর্মীয়ভাবে তাদের প্রতি বৈষম্য ও নির্যাতনের যে কোন সুযোগ নেই তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর ধর্মীয় আইনসমূহ যে একান্তই নারীর প্রতি সংবেদশীল তা প্রমাণ করা হয়েছে। প্রবন্ধটি ভাবে নারীর প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি করবে, এ বিষয়ক আইনগুলো জানা থাকায় ধর্মের ভিত্তিতে নারীকে নির্যাতনের শিকার বানানোর পথরুদ্ধ করবে এবং ধর্মসমূহের অনুসারীদের মধ্যে সম্প্রীতির মেলবন্ধন তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।
নারী হলো স্ত্রীলোক; রমণী; মহিলা। “ডা. মুহাম্মদ এনামুল হক, বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, ঢাকা: বাংলা একাডেমী ১৯৯২, পৃ: ৬৭৮।” নির্যাতন হলো পীড়ন; উৎপীড়ন; নিগ্রহ; অত্যাচার; প্রহার; প্রতিহিংসা। “প্রাগুক্ত পৃ: ৬৯৫”। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উপর যখন অন্য ব্যক্তি বা গোষ্ঠী হুমকি বা বল প্রয়োগ করে তাকে নির্যাতন বলে। “প্যাসিফিক এশিয়ান উইমেনস ফোরামের নারী নির্যাতন বিষয়ক আলোচনায় প্রদত্ত নিপীড়ন বা ভায়োলেন্সের সংজ্ঞা। ড. মোঃ নুরুল ইসলাম উদ্বৃত, বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা, ঢাকা: তাসমিয়া পাবলিকেশন্স, ২০০৬, পৃ: ৩৩১”। নারী নির্যাতন বলতে তাই যে কোনো বয়সের যে কোনো সম্পর্কের নারীকে নিগ্রহ, অত্যাচার ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা বুঝায়। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো গড়ষবংঃধঃরড়হ/ ঢ়বৎংবপঁঃরড়হ ড়ভ ধ ড়িসধহ “ইবহমধষর-ঊহমষরংয উরপঃরড়হধৎু, উযধশধ: ইধহমষধ অপধফবসু, ১৯৯৮, ঢ়. ৩৫৭” ডড়সবহ’ং ঙঢ়ঢ়বৎবংংরড়হ “ড. মোহাম্মদ জাকির হুসাইন, আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধানে আল-হাদীসের অবদান: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০০৪, পৃ: ৫২৩” ঈৎঁফবষঃু ঃড় ডড়সবহ. “ড. মোঃ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা, প্রাগুক্ত, পৃ: ৩৩০”। তবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রণীত সকল সংবিধান, দেশে-বিদেশে নারী মর্যাদা ও অধিকার সুরক্ষায় সকল গোষ্ঠী ও আন্দোলনে নারী নির্যাতন বুঝাতে সাধারণভাবে ঠরড়ষবহপব-অমধরহংঃ ডড়সবহ পরিভাষাটি ব্যবহার করা হেয়েছে। “সৈয়দ শওকতুজ্জামান, সামাজিক সমস্যা ও বিশ্লেষণ কৌশল, ঢাকা: রোহেল পাবলিকেশন্স, ১৯৯৭, পৃ: ২৩৬; ড. মোঃ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা, প্রাগুক্ত, পৃ: ৩৩০; জাতিসংঘ প্রণীত সকল বিধি-উপবিধিতে শব্দটির সাধারণ ব্যবহার থেকেও এ সম্পর্কে জানা যায়”।
সাধারণভাবে নারীর প্রতি সহিংসতা বলতে পুরুষ কর্তৃক নারীদেরকে কোনো না কোনো প্রকারে কষ্ট দেয়াকে বুঝায়। ব্যাপক অর্থে নারীর প্রতি সহিংসতা বলতে নারীদের উপর দৈহিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক যে কোনো ধরনের নিপীড়ন ও নির্যাতনকে বুঝায়। নারীর যে কোনো অধিকার খর্ব বা হরণ করা এবং কোনো নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বিষয় চাপিয়ে দেয়া বা কোনো ব্যক্তি গোষ্ঠীর ইচ্ছানুসারে কাজ করতে বাধ্য করাও নারী নির্যাতনের অন্তর্গত। সার্বজনীন নারী অধিকারের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘনমূলক অপরাধ নারী নির্যাতন। ধারণাগতভাবে এটি আবার নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়ন এবং নারীর সাথে অপব্যবহার ইত্যাদিও বুঝায়। এটি সমাজে মহিলাদের প্রতি অমানবিক ও অনৈতিক আচরণের মধ্যেও প্রকাশ পায়। এর একটি সহজ সংজ্ঞা হলো “….. ধষষ ভড়ৎসং ড়ভ পৎঁবষঃু ধহফ ৎবঢ়ৎবংংরড়হ ড়হ ড়িসবহ ড়ভ ধষষ ধমবং.” “উৎ. গড়যধসসধফ অনফঁৎ জড়ন ধহফ গড়ংঃধয় গড়যধসসধফ, ঠরড়ষবহপব ধমধরহংঃ পরঃু ড়িসবহ, উযধশধ: ঞযব রহফবঢ়বহফবহঃ, ১০ ঝবঢ়ঃবসনবৎ, ১৯৯৯, ঢ়. ১২”.
এভাবে বলা যায়, “ঞযবংব ভড়ৎসং ড়ভ ারড়ষবহপব ভৎবয়ঁবহঃষু ড়পপঁৎ রহ ঢ়ৎরাধঃব রহ ঃযব যড়সব ধহফ ঢ়ড়ষরপব ধহফ ড়ঃযবৎ পৎরসরহধষ লঁংঃরপব ধমবহপরবং যধাব নববহ ৎবষঁপঃধহঃ ঃড় ফবভরহব ংঁপয ারড়ষবহপব ধং পৎরসরহধষ ড়ৎ ঃড় ৎবংঢ়ড়হফ ঃড় ংঁপয ভধসরষু সধঃঃবৎ”. “ঊফষষধৎ, ছঁড়ঃবফ নু অনফঁষ ঐধষরস, ঞযব ঊহভড়ৎপবসবহঃ ড়ভ ঐঁসধহ জরমযঃং, উযধশধ, ১৯৯৫, ঢ়. ৫০”.
সি. বানচের মতে, “নারী নির্যাতন-তা যে ধরনেরই হোক না কোনো কোনো বিক্ষিপ্ত বিষয় নয় এবং যৌনতা সম্পর্কিতও নয়। এই নির্যাতনের একটা সুনির্দিষ্ট সামাজিক উদ্দেশ্য আছে এবং তা হচ্ছে নারীর জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করে রাখা। “সি বানচ, দুর্বিসহ স্থিতাবস্থা: নারী ও মেয়েদের প্রতি সহিংসতা, উদ্বৃত: ইউনিসেফ, বাংলাদেশের শিশু ও তাদের অধিকার, ঢাকা: ১৯৯৭, পৃ: ৬০”।
নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধে জাতিসংঘ ১৯৭৫ সাল থেকে বিশ্ব জুড়ে কাজ করে চলেছে। প্রতিবছর এ বিষয়ের উপর আলোচনা, বিতর্ক ও সুপারিশ আসছে। এর ২০ বছর পর ১৯৯৪ সালে পৃথিবীর সব দেশের সরকারী-বেসরকারি প্রতিনিধিরা নারী নির্যাতন রোধে একটি অবশ্য পালনীয় বিধি তৈরি করেছেন। এটি হলো বেইজিং প্লাটফর্ম ফর অ্যাকশন। এতে নারী নির্যাতনকে নির্দিষ্ট করে বলা হয়,
“…… ধহু ধপঃরড়হ ড়ভ মবহফবৎ ারড়ষবহপব ঃযধঃ ৎবংঁষঃং রহ ড়ৎ রং ষরশবষু ঃড় ৎবংঁষঃ রহ ঢ়যুংরপধষ, ংবীঁধষ ড়ৎ ঢ়ংুপযড়ষড়মরপধষ যধৎস ড়ৎ ংঁভভবৎরহম ঃড় ড়িসবহ, রহপষঁফরহম ঃযৎবধংঃ ড়ভ ংঁপয ধপঃং, পড়বৎপরড়হ ড়ভ ধৎনরঃৎধৎু ফবঢ়ৎরাধঃরড়হ ড়ভ ষরনবৎঃু যিবঃযবৎ ড়পপঁৎৎরহম রহ ঢ়ঁনষরপ ড়ৎ ঢ়ৎরাধঃব ষরভব.” “ছঁড়ঃবফ নু ঝুবফ গবযফর গড়সরহ, ঠরড়ষবহপব ধমধরহংঃ ড়িসবহ ধহফ পযরষফৎবহ: ংবধৎপযরহম ভড়ৎ পধঁংবং, ডববশবহফ ওহফবঢ়বহফবহঃ, উযধশধ, ১২ ঋবনৎঁধৎু ১৯৯৯, ঢ়. ৪”.
এ সম্মেলনে তৈরি বিধির বিশ্লেষণ ও ঘোষণাটি নিম্নরূপ: “নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হলো নারী ও পুরুষের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে বিরাজমান অসম ক্ষমতা সম্পর্কের একটি বিহঃপ্রকাশ, যা নারীর উপর পুরুষের অধিপত্র প্রতিষ্ঠা ও নারীর বিরুদ্ধে পুরুষের বৈষম্য সৃষ্টি করছে। নারীর পরিপূর্ণ অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করছে। “জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্র, চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন- বেইজিং, ঢাকা ১৯৯৫, ড. মোঃ নুরুল ইসলাম উদ্বৃত, বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা, প্রাগুক্ত, পৃ: ৩৩২”।
বেইজিং ঘোষণা অনুযায়ী নারী নির্যাতন বলতে এমন যে কোনো কাজ অথবা আচরণকে বুঝায় যা নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত হয় এবং নারীর শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতি সাধন করে। তাছাড়াও এ ধরনের কোনো ক্ষতি সাধনের হুমকি, জোরপূর্বক অথবা খামখেয়ালিভাবে সমাজ অথবা ব্যক্তিগত জীবনে নারীর স্বাধীনতা হরণকে বুঝায়। নারী নির্যাতন বা নিগ্রহ বলতে নিম্ন বর্ণিত বিষয়গুলোকে বুঝায়:
পরিবারের অভ্যন্তরে শারীরিক, যৌন অথবা মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতন যেমন প্রহার, কন্যা শিশুর উপর যৌন নিগ্রহ, যৌতুক সংক্রান্ত নির্যাতন এবং অন্যান্য প্রথাগত যন্ত্রণাদায়ক রীতি, স্বামী ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তির যৌনাচরণ এবং নারীকে কোনো কাজে অন্যায়ভাবে ব্যবহারের জন্য নির্যাতন। সম্প্রদায়ের মধ্যে নারীর প্রতি শারীরিক, যৌন অথবা মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতন যেমন ধর্ষণ, যৌন নিগ্রহ, যৌন হয়রানি এবং কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভীতিপ্রদর্শন, নারী অপহরণ এবং জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা; রাষ্ট্র কর্তৃক শারীরিক, যৌন এবং মনস্তাত্ত্কি নিগ্রহ তা যেখানেই ঘটুক না কেন। অতএব নারীর প্রতি সহিংস আচরণ বা নারী নির্যাতন বলতে সশস্ত্র সংঘর্ষের সময় হত্যা, পরিকল্পিত ধর্ষণ, যৌন দাসত্ব এবং জোরপূর্বক গর্ভধারণকে বুঝায়। “বেইজিং প্লাটর্ফম ফর অ্যাকশন ১৯৯৫, ড. মোঃ নুরুল ইসলাম দ্বৃত, প্রাগুক্ত, পৃ: ৩৩২”।
র্তমানে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের অবস্থান প্রান্তিক। এই প্রান্তিকতা সমাজব্যবস্থার স্তর বিন্যাস কাঠামো থেকে তৈরি হয়েছে। অপরপক্ষে এই প্রান্তিকতার দুটি উপাদান অধস্তনতা এবং নির্যাতন স্তর বিন্যস্ত কাঠামোজনিত কারণে শক্তিশারী হয়েছে। সমাজ ব্যবস্থা নারীদের অবস্থা প্রান্তিক হওয়ায় তারা নির্যাতিত। অধস্তনতা এবং নির্যাতন পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে শোষণের সাংস্কৃতি পরিমন্ডল গড়ে তোলে। এই সাংস্কৃতি পরিমন্ডলেণর মধ্যে শোষন অর্থনৈতিক শ্রেণি কাঠামো এবং পিতৃতন্ত্র পরস্পরকে প্রবিষ্ট করে তোলে। এর ফলে পুরুষরা নারীদের শ্রম লুন্ঠণ করে কিংবা নারীদের ্রমের অর্থ ভোগ করে। এদিক থেকে নারীগণ ত্রিবিধভাবে শোষিত: (ক) তারা মানুষ হিসেবে পুরুষ কর্তৃক শোষিত, (খ) তারা গৃহবধূ হিসেবে পুরুষ কর্তৃক শোষিত এবং (গ) তারা বেতনভুক্ত হিসেবে শোষিত। “বোরহান উদ্দীন খান জাহাঙ্গীর ও জরিনা রহমান খান, বাংলাদেশে নারী নির্যাতন, সমাজ নিরীক্ষণ কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯৩, পৃ: ৩”।
১৯৯৫ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদনে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বা নির্যাতনকে সংজ্ঞায়িত করে বলা হয়েছে, নারী নির্যাতন হলো শারীরিক, মানসিক, জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক ব্যবস্থা। “এবহফবৎ ারড়ষবহপব রং ধ ারড়ষবহপব ধমধরহংঃ ড়িসবহ ঃযধঃ ৎবংঁষঃং রহ ঢ়যুংরপধষ, সবহঃধষ, ংবীঁধষ পড়বৎপরড়হ ড়ভ যঁসধহ ৎরমযঃং. –টহরঃবফ ঘধঃরড়হ, ঞযব ডড়ৎষফং ড়িসবহ ঞৎবহফং ধহফ ঝঃধঃরংঃরপং, ১৯৯৫”.
২০০২ সালে ঢাকায় আয়োজিত ‘ঝঁন-জবমরড়হধষ ঊীঢ়বৎঃ এৎড়ঢ় গববঃরহম ড়হ ঊষরসরহধঃরহম ঠরড়ষবহপব অমধরহংঃ ডড়সবহ’ শীর্ষক সম্মেলনে বলা হয়, নারী নির্যাতন শুধু কোনো ব্যক্তির উপর আক্রমণাত্মক বিশেষ কিছু নয় বরং নারীর বিরুদ্ধে মানসিক অথবা শারীরিক অথবা স্বাধীনভাবে চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ। “ঠরড়ষবহপব ধমধরহংঃ ড়িসবহ রং হড়ঃ লঁংঃ ধহ ধংংধঁষঃ ধমধরহংঃ ধহ রহফরারফঁধষ নঁঃ ধমধরহংঃ ড়িসবহ’ং ঢ়বৎংড়হযড়ড়শ, সবহঃধষ ড়ৎ ঢ়যুংরপধষ রহঃবৎমৎরঃু ড়ৎ ড়াবৎ ভৎববফড়স ড়ভ সড়াবসবহঃ ড়হ ধপপড়ঁহঃ ড়ভ ঃযবরৎ মবহফবৎ”. –ঔুড়ঃর ঞধষঁশফবৎ, ঠরড়ষবহপব অমধরহংঃ ডড়সবহ রহ ঘবঢ়ধষ, ঈড়ঁহঃৎু জবঢ়ড়ৎঃ ঈডঈউ, ঘবঢ়ধষ, ১৯৯৭, চ.১. এতে আরো বলা হয়, ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নারীর যখন অন্যের দ্বারা জোরপূর্বক বঞ্চনার সম্মুখীন হয় এবং শারীরিক, যৌন ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়, সে পরিস্থিতিকে নারী নির্যাতন বলে। “ঠরড়ষবহপব ধমধরহংঃ ড়িসবহ রং বিষষ-ফবভরহবফ ধং ধহু ধপঃ ড়ভ মবহফবৎ নধংবফ ারড়ষবহপব ঃযধঃ ৎবংঁষঃং ড়ৎ রং ষরশবষু ঃড় ৎবংঁষঃ রহ ঢ়যুংরপধষ, ংবীঁধষ, ঢ়ংুপযড়ষড়মরপধষ যধৎস ড়ৎ ংঁভভবৎরহম ঃড় ড়িসবহ রহপঁষফরহম ঃযৎবধঃং ড়ভ ংঁপয ধপঃং, পৎবৎপরড়হ ড়ৎ ধৎনরঃৎধৎু নবঢ়ৎরাধঃরড়হ ড়ভ ষরনবৎঃু, যিবঃযবৎ ড়পপঁৎৎরহম রহ ঢ়ঁনষরপ ড়ৎ ঢ়ৎরাধঃব ষরভব. –ওনরফ.”
নারী নির্যাতন এমন একটি লিঙ্গীয় অপরাধমূলক কাজ যার ফলে নারীর লিঙ্গীয় অথবা মানসিক ক্ষতি হয় অথবা ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া এ ধরনের দুস্কুর্ম ঘটানোর হুমকি দেয়া, নানা রকম জোর-জবরদস্তি করা, চলাচরে বিঘœ ঘটানো নির্যাতনের সংজ্ঞায় পড়ে। এ অপরাধমূলক কর্ম যেখানেই সম্পন্ন হোক না কেন তা নারী নির্যাতন হিসেবেই গণ্য হবে। এ সংজ্ঞানুযায়ী শারীরিক, মানসিক, লিঙ্গীয় নির্যাতন যেমন: যৌতুক অনাদায়ের নির্যাতন, নারী পাচার ও লিঙ্গীয় শোষণ, স্ত্রীকে মারধোর করা, নারী ও কন্যা শিশু ধর্ষণ ও শারীরিক অত্যাচার, যৌন হয়রানী করা ও পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করা ইত্যাদি অপরাধমূলক কাজ হিসেবে চিহ্নিত হবে।
নারী নির্যাতন সমস্যার ব্যাপকতা, গভীরতা ও ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে ১৯৯০ সালের ৮ মার্চ থেকে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস, সারা বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই দিবসের প্রেক্ষিতেই আজকের নারী সমাজ তাদের অধিকার ও প্রাপ্তি সম্পর্কে সচেতন হতে শিখেছে। যদিও ধর্ষণ, হত্যা এবং নানা প্রকারের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এখন নিত্যদিনের ঘটনায় রূপান্তরিত হয়েছে। নারীর প্রতি নির্যাতনের নতুন মাত্রা যোগ করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা আর একই সাথে প্রশাসনের বিরূপ আচরণ। “সম্মিলিত নারী সমাজ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ৮ মার্চ ১৯৯৭, ড. মোঃ নুরুল ইসলাম উদ্বৃত, প্রাগুক্ত, পৃ: ৩৩৩।
নারী নির্যাতনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ঝঃধঃঁং ড়ভ ডড়সবহ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে,
“ঠরড়ষবহপব ধমধরংঃ ড়িসবহ রং ধষধৎসরহমষু ড়হ ঃযব রহপৎবধংব. ঞযব ইধহমষধফবংয ইঁৎবধঁ ড়ভ ঝঃধঃরংঃরপং, রহ ধ ংঢ়বপরধষ ৎবঢ়ড়ৎঃ রহ ১৯৯৩ ৎবাবধষবফ ঃযধঃ ফবধঃয ফঁব ঃড় ঁহহধঃঁৎধষ পধঁংবং (ংঁরপরফবং, সঁৎফবৎ, নঁৎহ, ংহধশব ফরঃব, ধপপরফবহঃ ধহফ ফৎড়রিহম) রহ ধষসড়ংঃ ঃযৎবব ঃরসবং যরমযবৎ ভড়ৎ ড়িসবহ ঃযধঃ ঢ়ৎবমহধহপু ৎবষধঃবফ পধঁংবং. “ঋরভঃয ঋরাব ণবধৎ চষধহ ১৯৯৭-২০০২, এড়াবৎহসবহঃ ড়ভ ইধহমষধফবংয, চষধহহরহম ঈড়সসরংংরড়হ, ১৯৯৮ গরহরংঃৎু ড়ভ চষধহহরহম, ঢ়.রী, ১-৫”.
নারী নির্যাতন স্থান-কাল-পাত্রভেদে বিভিন্ন ধরনে ও প্রকৃতির হয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি হলো আঘাত করা বা অপব্যবহার, যৌতুকের জন্য দৈহিক ও মানসিক চাপ, মানসিক নিপীড়ন, অপহরণ, বউ পেটানো, যৌন নিপীড়ন বা অপব্যবহার, জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগ, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, বাল্যবিবাহ ও বহু বিবাহ, বিদেশে পাচার, অন্যাভাবে বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছেদ, যৌন নিপীড়ন ও হয়রানী এবং ধর্ষণ করতে গিয়ে জখম বা মৃত্যু ঘটানো ইত্যাদি অপরাধের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। “ঝুবফ গবযফর গড়সরহ, রনরফ, ঢ়.৪”.
সনাতন ধর্মে নারীর : যম্মান্নোদ্বিমতে লোকে লোকোন্নোদ্বিমতে চযঃ। হর্ষামর্ষ ভয়োগ বেগে মুক্তো যঃসচমে প্রিয় “শ্রীগীতা, ১২:১৫”। বা যা থেকে কোন প্রাণি উদ্বেগপ্রাপ্ত হয় না এবং যিনি স্বয়ং কোনো প্রাণি কর্তৃক উত্ত্যক্ত হন না, যিনি হর্ষ, অঘর্œষ, ভয় ও উদ্বেগ হতে মুক্ত, তিনি আমার প্রিয়। এ শ্লোক হতে বুঝা যায়, যিনি সত্যই অহিংস ব্রতে স্থিত, তাঁকে কেউ হিংসা করে না। যিনি অচদ্বষ্টা সর্বভূতানাং “শ্রীগীতা, ১২:১৩”। বা যিনি সকল প্রাণির প্রতি দ্বেষ রহিত তিনি আমার প্রিয়। তাই কেবল নারীকে নয় বরং জগতের সমস্ত প্রাণির প্রতি ভালবাসা এবং সকলের প্রতি অহিংস আচরণ সনাতন ধর্মের মূল শিক্ষা।
যেখানে নারীগণ সম্মানিত হন সেখানে দেবগণ প্রীত হন। যেখানে নারীগণ সম্মানিত হন না, সেখানে সকল কর্ম নিস্ফল হয়। বহু কল্যাণকামী তপতা, ভ্রাতা, পতি ও দেবর কর্তৃক কন্যা সম্মানীয় ও ভূষনীয়। যেখানে ভগিনী, পতœী, কন্যা ও ভ্রাতৃবধূ প্রমুখ দুঃখ করেন, সে বংশ শীঘ্রই বিনষ্ট হয়। যেখানে এরা দুঃখ করেন না, সে বংশ সবসময় উন্নতি করে। মনুসংহিতায় রয়েছে মন্ত্র নার্যত্ত পৃদ্যন্তে রমন্তে তত্র দোতা, যত্রৈতা¯ত্ত ন পৃদ্যন্তে সর্বস্ত্রতা ফলাঃ ক্রিয়া। “মনুসংহিতা, ৩:৫৪”।
সনাতন ধর্মেও রয়েছে, যারা মারাত্মকভাবে সহিংস আচরণ করেছে তাদের জন্য কাঠোর শান্তি ব্যবস্থা আইনে থাকতে হবে এবং নির্দ্বিধায় সেটি প্রয়োগ করতে হবে। শাস্তি না পেলে অপরাধী আরো বেশি অপরাধ করার সাহস পাবে এবং অন্যরাও একই অপরাধ সংঘটনে উৎসাহিত হবে। মহাভরতে নির্দেশ রয়েছে, ভূমি হরণকারী, গৃহে অগ্নিদানকারী, বিষ প্রয়োগকারী, স্ত্রীর উপর নির্যাতনকারী এবং অপহরণকারীকে মৃত্যুদন্ড দিতে হবে। আততায়ীকে নির্বিচারে হত্যা করবে। “মনুসংহিতা, ৮:৩৫০”। যারা কর্তন করে তাদের রাজা উদ্বেগজনক দন্ড দ্বারা চিহ্নিত করে নির্বাসিত করবেন।
সনাতন ধর্মে নারীকে নানাভাবে সম্মানিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বৃহদাণ্যক উপনিষদে বলা হয়েছে, সৃষ্টিকর্তা বিরাট পুররু। তিনি আপন সৃষ্টি বৈচিত্রকে উপলব্ধি করার জন্য নারীসত্ত্বা সৃষ্টি করেছেন। তিনি আত্মবেদমগ্র আসীদেক এবং সেৎকাময়ত জায়া মে স্যাহ অর্থাৎ সৃষ্টির পূর্বে সৃষ্টিকর্তাই একমাত্র ছিলেন। তিনি কামনা করলেন, আমার জায়া উৎপন্ন হোক। উপনিষদের এ বাণী প্রকৃতপক্ষে নারী জাতির মহিমাকেই নির্দেশ করে। বিয়ের মাধ্যমে একজন পুরুষ ও একজন নারী দাম্পত্য জীবনে আবদ্ধ হয়। এ সময় যে ধর্মীয় অনুশাসনের ভেতর দিয়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয় সেগুলোর মূল্যবোধ ধারণ করলে কোনো স্বামীই স্ত্রীকে নিপীড়ন করতে পারে না। বিয়ের মন্ত্রে বলা হয়, যদিদং হৃদয়ং তব তদিদং হৃদয়ং মম অর্থাৎ তোমার হৃদয় আমার হোক, আমার হৃদয় তোমার হোক। বৈদিক মন্ত্রে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলা হয়, হে বধু! তুমি সুমঙ্গলী হয়ে পাতিগৃহে প্রবেশ কর। আমাদের এবং চতুস্পদ জীবের মঙ্গলবহ হও। তুমি কল্যাণনেত্রা হও, পতির মঙ্গল বিধান কর। গৃহপালিত পশুদের হিতকারিণী হও। তোমার মন সুন্দর হোক, তোমার তেজ শোভন হোক। তুমি বীরজনীন, দেবপরায়ণা এবং সকরের সুখদায়িনী হও।
নববধূকে লক্ষ্য করে আরও বলা হয়েছে, সম্রাজ্ঞী শ্বশুরে ভব সম্রাজ্ঞী শ্বস্রাং ভব। ননান্দরি সম্রাজ্ঞী ভাব সম্রাজ্ঞী অধিদেবৃষুঃ॥ “ঋগে¦দ ১০-৮৫-৪৬”।
অর্থাৎ তুমি শশুরের উপর সম্রাজ্ঞী হও, শাশুরির উপর সম্রাজ্ঞী হও, ননদের উপর সম্রাজ্ঞী হও এবং দেবরের উপরও সম্রাজ্ঞী হও। মহাভারতে বলা হয়েছে, ভাষা মানুষের অর্ধাংশ এবং শ্রেষ্ঠতম সখা। ভাষা, ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষের মূল। ভাষাযুক্ত ব্যক্তিরাই ক্রিয়াবান হতে পারেন। ভাষা থাকলেই গৃহীর কর্তব্য পালন করা সম্ভব। ভাষা থাকলে আনন্দ ও শ্রীলাভ হয়। প্রিম্বদা ভার্ষা জনবিরল স্থানে সখার, ধর্মকার্যে পিতার এবং রোগে মাতার কাজ করে থাকেন। ধর্মীয় বিধান মেনে যে স্ত্রী এমন আচরন করেন সনাতন ধর্মীয় কোন পুরুষ তার সঙ্গে কোনক্রমেই সহিংস আচরণ করতে পারে না। সনাতন ধর্মে নারী জাতি। অর্থাৎ মাকে যেমন ভক্তি শ্রদ্ধা করা উচিত নারীকেও তেমনি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখানো কর্তব্য। শাস্ত্রে বলা হয়েছে, মাতৃবৎ পরদারেষু যঃপশ্যতি সপন্ডিত অর্থাৎ যিনি পরস্ত্রীকে মায়ের মত করে দেখেন তিনিই পন্ডিত।
হিন্দুশাস্ত্রে মাকে স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ট বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী। অন্যত্র বলা হয়েছে, মাতা কিল মনুস্যণাং দৈবতানাং চ দৈবতম অর্থাৎ মাতা মনুষ্য এবং দেবতারও দেবতা। সনাতন ধর্মে ব্রক্ষ্ম এবং ব্রক্ষ্মশক্তি অভিন্ন। শাস্ত্রে ব্রক্ষ্মশক্তিকে মাতৃরূপে কল্পনা করা হয়েছে। দেবী চন্ডী, দূর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কালী প্রভৃতি দেবীগণ মাতৃজাতিরই প্রতিনিধি। অমিতভক্তে তাঁরা পূজিত হয়ে থাকেন। সনাতন ধর্মীয় শিক্ষা সঠিকভাবে ধারণ করলে, মেনে চললে, অনুসরণ ও অনুশীলণ করলে কোনো হিন্দুর পক্ষে নারীকে নিপীড়ন করা ও নির্যাতন করা সম্ভব হবে না। নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করা অসম্ভব হবে।
খ্রিষ্টধর্মে নারী: বাইবেলে রয়েছে, পরে সদাপভু ঈশ্বর বললেন, মানুষটির পক্ষে একা থাকা ভাল নয়। আমি তার জন্য একজন উপযুক্ত সঙ্গী তৈরি করব। “আদিপুস্কক, ২:১৮”। পুরুষের ঈশ্বর প্রদত্ত এই উপযুক্ত সঙ্গী হলেন নারী। খ্রিষ্টধর্মে তাই নারীর মর্যাদা পুরুষের সমান। এ ধর্মের শিক্ষায় নারীকে পুরুষের দেহ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই পুরুষরা যেমন নিজের দেহকে ভালবাসে ঠিক তেমনি নারীগণকে ভালবাসবে। কেউ কখনও নিজের দেহকে ঘৃণা বা অবজ্ঞা করে না। বরং মনোযোগ সহকারে যতœ নেয়। এ দিক দিয়ে বিবেচনা করলে প্রত্যেকেরই নারীর প্রতি যতœবান হওয়া উচিত এবং তাকে সম্মান দেয়া আবশ্যক। বাইবেলে রয়েছে, স্বামী যেমন নিজের দেহকে ভালবাসে ঠিক সেভাবে নিজের স্ত্রীকেও তার ভালবাসা উচিত। যে নিজের স্ত্রীকে ভালবাসে সে নিজেকেই ভালবাসে। কেউ তো কখনও নিজের দেহকে ঘৃণা করে না বরং সে তার দেহের ভরণ পোষণ ও যতœ করে। “ইফিসিয়, ৫: ২৮-২৯”। পুরুষ তাই নারীকে নিপীড়ন করবে না বরং ভালবাসবে। কারণ নারীকে অবজ্ঞা বা অবহেলা করা কিংবা হেয়ভাবে দেখা মানে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে ঘৃণা করা। বাইবেলে আরও বলা হয়েছে, ঠিক সেভাবে তোমরা যারা স্বামী, তোমরা বুদ্ধি বিবেচনা করে স্ত্রীর সঙ্গে বাস কর। তারা তোমাদের দুর্বল সাথী, আর তারাও তোমাদের সঙ্গে ঈশ্বরের দয়ার দান হিসেবে জীবন পাবে। সেজন্য তাদের সম্মান কর যেন তোমাদের প্রার্থনা বাধা না পায়। “পিতর, ৩:৭”। এখানে নির্বিগ্নে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার শর্ত হিসেবে স্ত্রীকে সম্মান করার শর্তারোপ করা হয়েছে তাই ধর্মভীরু খ্রিষ্টান স্ত্রীকে সম্মান না করে পারে না। (চলবে)