কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাতদলের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি…. রাজিউন)।
গতকাল রবিবার বেলা ১২টা ১০ মিনিটে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে তিনি মারা যান।
তবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ডা. রইস উদ্দিন দাবি করেন, হাসপাতালের বাইরেই পিন্টু মারা গেছেন। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
রাজশাহীর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান জানান, নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু নানা রোগে ভুগছিলেন। হার্ট, কিডনি, ডায়াবেটিকস, ব্লাডপ্রেসারসহ চোখ ও বুকের সমস্যা ছিল তার।
রবিবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি কারাগারের মধ্যে বুকের ব্যথা অনুভব করেন ও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে কারাগার থেকে রামেক হাসপাতালে নিয়ে আসার পর পিন্টু মারা যান।
কারা চিকিৎসক এসএম সায়েম জানান, বেলা ১১টার দিকে নাসিরুদ্দিন পিন্টু অসুস্থ বোধ করেন। তার বুকের ব্যথা তীব্র হলে দুপুর ১২টার দিকে তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ডা. রইস উদ্দিন দাবি করেন, নাসিরুদ্দিন পিন্টু রামেক হাসপাতালের বাইরেই মারা গেছেন। যখন তাকে ভর্তি করা হয় তখন তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
সাবেক সাংসদ নাসিরউদ্দিন পিন্টু পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলার রায়ে পিন্টুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া একই ঘটনায় অবৈধভাবে অস্ত্র লুণ্ঠনের দায়ে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পিন্টু গত শতকের শেষভাগে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে লালবাগ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি।
২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্র“য়ারি পিলখানায় বিডিআর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের সেই ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ অন্তত ৭৪ জন নিহত হন। হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র এবং আসামিদের পালাতে সহযোগিতার অভিযোগ ছিল পিন্টুর বিরুদ্ধে।
পিলখানা হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে নাম আসার পর ওই বছর জুন মাসে হাইকোর্টের বাইরে থেকে এই সাবেক সাংসদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর তার আর বের হওয়া হয়নি।
গত ২০ এপ্রিল তাকে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টু মারা যাননি, সরকার পরিকল্পিতভাবে চিকিৎসায় অবহেলা করে তাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা।
তিনি বলেছেন, “পিন্টুকে মারার জন্য ঢাকা থেকে রাজশাহী নেয়া হয়েছে। তিনি জনপ্রিয় নেত্।া তার জনপ্রিয়তা দেখে সরকার সিটি নির্বাচনের আগে রাজশাহী নিয়ে হত্যা করেছে। তিনি মারা যাননি।”
রবিবার দুপুরে পিন্টুর লালবাগের বাসায় সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন নাসিমা আক্তার কল্পনা।
পিন্টুর স্ত্রীর দাবি, হাইকোর্টের একটি আদেশ ছিল তাকে (পিন্টু) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেলে রেখে চিকিৎসা করানোর। আমরা আইজি প্রিজনকে এই আদেশ দিলেও তা রাখেননি। পিন্টুকে ঢাকা থেকে রাজশাহী নিয়ে যায়।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে পিন্টুর স্ত্রী যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এদিকে পিন্টুর মৃত্যুর খবরে তার সহকর্মী, কর্মী সমর্থকরা তার হাজারীবাগের বাসায় ছুটে যান।
এছাড়াও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, দলের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদারসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা তার লালবাগের বাসায় গেছেন।