ছাতক থেকে সংবাদদাতা :
ছাতকে শিশু ইমন অপহরণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় জামায়াত নেতা সুয়েবুর রহমান সুজনসহ তিনজনকে আবারো রিমান্ডে এনেছে পুলিশ। গত বুধবার সুনামগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শ্যাম কান্তি সিনহার আদালতে হাজির করে পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ড চাইলে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে একই ঘটনায় গত ৮ এপ্রিল বাতিরকান্দি গ্রামের আব্দুল বাহার(৫৫) ও নুরুল আমিন (৪৫)কে সুনামগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শ্যাম কান্তি সিনহার আদালত থেকে ৩দিনের রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এদের বিরুদ্ধের ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ইমনের মৃতদেহ উদ্ধারসহ হত্যাকান্ডের তথ্য উদঘাটন করতে গত বুধবার দুপুরে শিশু ইমন অপহরণ ও হত্যাকান্ডের মূল নায়ক বাতিরকান্দি গ্রামের একটি মসজিদের ইমাম ও নোয়ারাই ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারী সুয়েবুর রহমান সুজন ও তার সহযোগী বাতিরকান্দি গ্রামের আব্দুর রহমানের পুত্র রফিকুল ইসলাম(৩৭) এবং একই গ্রামের আব্দুস ছালামের পুত্র জাহেদ(২৭)কে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শ্যাম কান্তি সিনহার আদালতে হাজির করানো হয়। এ ক্ষেত্রেও পুলিশ ৭দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করলে আদালত ৪দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ইমাম সুজন উপজেলার ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের ব্রাহ্মনজুলিয়া গ্রামের মৃত মখলিছ মিয়ার পুত্র। এদিকে ইমন অপহরণের ২১দিন ও ঘটনার মূল হোতা সুজন গ্রেফতারের ৯ দিন অতিবাহিত হলেও ইমনের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ইমনের লাশ উদ্ধারে পুলিশ সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করলেও ঘাতকদের দেয়া বিভ্রান্তিকর তথ্যের কারণে এখনো লাশ উদ্ধারে বিলম্বিত হচ্ছে। ঘাতক সুজনকে গত ৮ এপ্রিল সিলেটের কদমতলী বাসষ্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতারের পর তার স্বীকারোক্তি মতে সুজনকে সাথে নিয়ে পুলিশ অপহৃত ইমনের মৃতদেহ উদ্ধারে ওইদিন বাতিরকান্দি গ্রামের দু’টি খালসহ বিভিন্ন স্থানে তল্ল¬াশী চালায়। পানির পাম্প বসিয়ে খালের পানি নিষ্কাশন করে দিনভর ব্যাপক তল্ল¬াশী চালিয়ে ব্যর্থ হলেও ইমনের বসতঘর সংলগ্ন মসজিদের সিঁড়ির পাশের একটি গর্ত থেকে রক্তমাখা লুঙ্গি, তোয়ালে, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বিষের বোতল, একটি ছুরি ও সুজনের কাছ থেকে তার ব্যবহৃত বিভিন্ন কোম্পানীর ১৯টি সীম উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। এ সময় তার সহযোগীরা খাল থেকে ইমনের বস্তাবন্দি লাশ অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে বলে ঘাতক সুজন পুলিশকে জানায়। একদিকে ইমনের লাশ উদ্ধারে পুলিশের চলছে অব্যাহত চেষ্টা, অপরদিকে ইমনের পরিবারে বইছে শোকের মাতম। পুত্র শোকে কাতর ইমনের মার নির্বাক চোখ দু’টি শুধুই ইমনকে খুঁজে ফিরছে। বাবা প্রবাসী জহুর আলী শিশুপুত্রকে হারিয়ে মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। মিডিয়া কর্মীদের সাথে কথা বলতে অনিহা প্রকাশ করছেন তিনি। তার একটিই প্রশ্ন-কোন অপরাধে আমার শিশু পুত্র ইমনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ঘাতকরা। নিজের অজ্ঞাতসারে তার শিশুপুত্রের ঘাতককে এতদিন নিজ ঘরে রেখে ভরণ-পোষণ করেছেন। ইমনের মৃত্যুদূত ঘাতক ইমাম তার বুকে এতবড় নির্মম আঘাত আনবে তিনি কখনো কল্পনা করতে পারেননি। ঘাতকদের আরো নির্মম শাস্তি দাবী করেন তিনি। ইমন অপহরণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় ইমাম সুজনসহ এ পর্যন্ত ৫জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে দ্বিতীয় দফা। গত ২৭ মার্চ নোয়ারাই-দোয়ারাবাজার সড়কের বাতিরকান্দি গ্রামের নিজ বাড়ির সামন থেকে ইমন অপহৃত হয়। ওইদিন মোবাইল ফোনে ২লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে অপহরণকারীরা। ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ হারুন-অর রশীদ চৌধুরী জানান, তথ্য উদঘাটনে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনো কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য না পাওয়া গেলেও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।