যুক্তরাজ্যে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন ১২ বাংলাদেশি

41

252_61866কাজিরবাজার ডেস্ক :
যুক্তরাজ্যের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে এমপি পদে প্রার্থী হবেন ১২ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিবাসী। এদের মধ্যে দেশটিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রথম এমপি রুশনারা আলীও রয়েছেন।
এবার দু’টি আসনে লেবার পার্টির পক্ষে লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই প্রার্থী টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকি ও রূপা হক। ২৩ বছর ধরে লেবার পার্টির দখলে থাকা হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনটি এবারও ধরে রাখাই হবে টিউলিপের জন্য চ্যালেঞ্জ। কনজারভেটিভ পার্টি এবার ওই আসনটিকে ‘টার্গেট সিট’ বানিয়েছে। আর রূপার চ্যালেঞ্জ হলো গতবার কনজারভেটিভ পার্টির কাছে হারানো ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনটি পুনরুদ্ধার করা। এ আসন এবার লেবার পার্টির অন্যতম ‘টার্গেট সিট’।
লন্ডনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ১০টি আসনের শীর্ষে রয়েছে টিউলিপের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন। আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে রূপার আসনটি। এ কারণে আসন দুটির প্রতি গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দৃষ্টি যেমন ভিন্ন, তেমনি প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জটাও অন্য রকম।
অস্কারবিজয়ী অভিনেত্রী গ্লেন্ডা জ্যাকসন হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে ২৩ বছর ধরে লেবার পার্টির এমপি ছিলেন। গত নির্বাচনে তিনি মাত্র ৪২ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। এই আসনে প্রধান তিনটি দলের মধ্যে লেবার পার্টি ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ, কনজারভেটিভ পার্টি ৩২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটস পার্টি ৩১ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পায়। যে কারণে এই আসনটিকে বলা হচ্ছে ‘ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ আসন। গ্লেন্ডা জ্যাকসন অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিলে লেবার পার্টির স্থানীয় সদস্যদের ভোটে এ আসনে এমপি পদে লড়াইয়ের মনোনয়ন পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্যে অভিবাসন নিয়ে সবসময় নেতিবাচক প্রচার লক্ষণীয়। এবারের নির্বাচনেও প্রধান চারটি ইস্যুর শীর্ষে আছে অভিবাসন। তা সত্ত্বেও দেশটির অভিবাসী সম্প্রদায় রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশটির প্রধান সাতটি দল থেকে এবার অভিবাসী সম্প্রদায়ের (কৃষ্ণাঙ্গ ও সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী বা বিএমই) মোট ১৬৭ জন এমপি পদে নতুন প্রার্থী হয়েছেন।
দেশটিতে এমপি পদে এত প্রার্থীর অংশগ্রহণ এ যাবৎকালের রেকর্ড। এমপি ছিলেন এবং আবার নির্বাচন করছেন এমন বিএমই প্রার্থীদের ছাড়িয়েছে এই সংখ্যা।
অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক দলগুলো জয়ের সম্ভাবনা আছে এমন আসনে বিএমই প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয় না। তারপরও আগামী নির্বাচনে বিএমই থেকে নির্বাচিত এমপির সংখ্যা বেড়ে ৪৪ এ দাঁড়াবে বলে আভাস দিয়েছে ‘ব্রিটিশ ফিউচার প্রজেক্ট’ নামে একটি গবেষণা সংস্থা।
আগামী ৭ মে যুক্তরাজ্যের ৫৬ তম সাধারণ নির্বাচন হবে। কোনো ধরণের ডামাডোল ছাড়াই গত বৃহস্পতিবার বিকাল চারটার দিকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কাজ শেষ হয়। একইদিন বিকাল পাঁচটার মধ্যে প্রত্যেক আসনের আলাদা আলাদা প্রার্থীর তালিকা প্রকাশিত হয়ে যায়। হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনে এবার মোট প্রার্থী হয়েছেন ৩ হাজার ৯৬৩ জন।
গত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা রক্ষণশীল ভাবধারার কনজারভেটিভ দল অভিবাসনের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে সব সময়ই সরব। অথচ ‘ডেমোক্রেটিক অডিট ইউকে’ এর এক প্রতিবেদন বলছে, এবার অভিবাসী সম্প্রদায়ের বা বিএমই প্রার্থী মনোনয়নে কনজারভেটিভই সবচেয়ে এগিয়ে। দলটি অভিবাসী সম্প্রদায় থেকে এবার ৪৮ জন নতুন প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। এরপরই আছে গত জোট সরকারের অংশীদার লিবারেল ডেমোক্র্যাটস। কোনো বিএমই এমপি না থাকায় সমালোচিত দলটি এবার অভিবাসী সম্প্রদায় থেকে ৪১ জনকে মনোনয়ন দিয়েছে। অভিবাসন বিষয়ে খানিকটা উদার লেবার পার্টি মনোনয়ন দিয়েছে ৩৬ জনকে। অভিবাসনের বিষয়ে কট্টর বিরোধিতার জন্য হালে আলোচনায় আসা ইউকে ইনডিপেনডেন্ট পার্টিও (ইউকিপ) পিছিয়ে নেই। প্রথমবারের মতো দলটি অভিবাসী সম্প্রদায় থেকে ২৪ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে। এ ছাড়া গ্রিন পার্টি ১৫ জন, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (এসএনপি) ও প্লেইড কিমরু একজন করে বিএমই প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে।
দলগুলোর বিএমই প্রার্থী মনোনয়নের অগ্রগতিকে সাধুবাদ জানিয়ে সমালোচকেরা বলছেন, তাঁদের মধ্যে কতজন বিজয়ী হয়ে ফিরবেন সেদিকেই এখন তাঁদের দৃষ্টি। সংশ্লিষ্টদের এমন সন্দেহের অবশ্য যৌক্তিক কারণ রয়েছে। ১৯৭৯ সালে দেশটিতে ৩০ জন বিএমই প্রার্থীর মধ্যে বিজয়ী হন চারজন। ২০১০ সালে এসে প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে ১৩১ হলেও এমপির সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ২৭ জন। তাঁদের মধ্যে লেবার দলীয় ১৬ জন এবং কনজারভেটিভ দলীয় ১১ জন। সর্বশেষ জনগণনা অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় ১৪ শতাংশ। সেই হিসেবে সংসদে অভিবাসী সম্প্রদায়ের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য অন্তত ৯১ জন এমপি থাকা উচিত বলে সমালোচকেরা মনে করেন।