ইসলামের দৃষ্টিতে খেলাধূলা ও বিনোদন

1906

শামসীর হারুনুর রশীদ

খে লাধূলা ও বিনোদনমূলক বিষয়াবলীকে ইসলাম ধর্মে খুব সর্তকতার সাথে মূল্যায়ন করা হয়েছে। খেলা যখন খেলায়, বিনোদন যখন বিনোদনে সীমাবদ্ধ থাকে, তাতে মন্দ কোন বিষয়ের উঁকি-ঝুঁকি না থাকলে ইসলাম এমন খেলা ও বিনোদনে বাধা দেয়নি, দিবেও না। কারণ খেলাধূলা পৃথিবীর আদিকাল থেকে শিশু-কিশোরদের মজ্জাগত স্বভাব ছিল ও আছে। এটা সর্বজন স্বীকৃত একটি বিষয়। কিন্তু যখন এটাকে শিশু-কিশোরদের থেকে কেড়ে নিয়ে কিংবা শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করে ব্যবসায়িক রূপ দেয়া হয়, যুবক-যুবতী, নর-নারীসহ প্রাপ্ত বয়স্করা বিভিন্ন পেশায় বিঘœতা সৃষ্টি করে মূল্যবান সময়ের একাংশ খেলায় এবং অপরাংশ খেলা দেখায় নষ্ট করতে দেখা যায়। অনেকে এটাকে জীবনের নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় বানিয়ে ফেলেছেন। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থা খুব উদ্বেগজনক! তারা ক্লাস শুরুর আগে, দুপুরের বিরতির ফাঁকে, পুরো বিকাল, সকাল ও রাতের কিছু সময় খেলায় এবং অর্ধরাত পর্যন্ত খেলা দেখায় ব্যস্ত থাকে।  ফলে খেলার মাঠের চে’ বিদ্যালয় এখনও তাদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেনি। অনেক শিক্ষার্থী সুযোগ পেলেই মোবাইলসহ নানা প্রযুক্তিতে গেইম খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া শিশুদের এ খেলা ও খেলার মাঠকে যখন ছিনিয়ে নিয়ে আঞ্চলিক করণ, অত:পর জাতীয়করণ, পরবর্তিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন খেলা আর খেলা থাকেনি এটাকে হাজার কোটি মুদ্রা উপার্জনের মাধ্যম বানানো হয়। শুরু হয় রাষ্ট্র কর্তৃক পৃষ্ঠপোষকতা দান। সৃষ্টি করা হয় দেশে দেশে পৃথক ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠা করা হয় সরকারি-বেসরকারিভাবে নানা সংস্থা, ক্লাব ও সংগঠন। শুরু হয় খেলাধূলা নিয়ে নানা রকমের প্রতিযোগিতা। এসব প্রতিযোগিতায় আয়-উপার্জনের হার দিন দিন বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে বিশ্ব মোড়লদের নজর কাড়ে। তারা শুরু করে নানা পর্যায়ে আলোচনা-সমালোচনা ও গবেষণা। এক পর্যায়ে আয়োজন করা হয় বিশ্বকাপ ফুটবল। আবিষ্কার করা হয় বিশ্বকাপ উপলক্ষে ক্রীড়া-কৌতুক ও বিনোদনের নানাজাত পণ্যসামগ্রী। ছড়িয়ে দেয়া হয় মুক্তবাজার-বিশ্ব বাজারে এবং তা থেকে আশাতীত আয়-উপার্জন হয়। তার আগে আয়োজন করা হয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ উম্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বায়নের ঘরে ঘরে। বিশ্ব বাজারে ক্রিকেট সমাগ্রীও যথেষ্ট লাভের পথ দেখায়। সম্প্রতি ক’ বছর থেকে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আয়োজন করা হচ্ছে অলিম্পিক মহোৎসব। অলিম্পিকেও মাত্রারিক্ত উন্মাদনা চলছে, চলুক তাতে তেমন কোন আপত্তি ছিলনা। কিন্তু যখন দেখা গেল এই খেলাধূলা, বিশ্বকাপ, অলিম্পিক এর সাথে জুয়া, লটারী, অশ্লীলতা, নগ্নতা, মাদকাসক্ততা, খেলাধূলার লাভ-ক্ষতি নিয়ে হানাহানি সহ নানাজাত অপরাধ-অপকর্মগুলো একাকার হয়ে যাচ্ছে। নানা শ্রেণী পেশার মানুষ এর ধারা প্রভাবিত হয়ে প্রকাশ্যে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। পার্থিব পরকালীন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এমনকি এ খেলাধূলার মাধ্যমে দ্বীন-ধর্ম-কর্ম থেকে মানুষ নিজে পথভ্রষ্ট হচ্ছে বা অপরকে পথভ্রষ্ট করছে। আর আকাশ সংস্কৃতির উপহার নানা প্রযুক্তির মাধ্যমে শিশুরা পর্যন্ত প্রভাবিত হয়ে নানা অপরাধ-অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে যা বিবেকবান চিন্তাশীলদের ভাবিয়ে তুলছে, তখন তো একেবারে চুপ করে বসা যায় না। এর প্রতিক্রিয়া নিয়ে নতুন করে জানার, বুঝার, ভাবার, বিশ্লেষণ ও লেখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। খেলাধূলাকে এসব অপকর্ম থেকে মুক্ত রাখতে দেশের মূল ধারার মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীরা আরও এক যুগ আগে ভাবার প্রয়োজন ছিল। অনেক দেরী হয়ে গেছে আশা করি ত্বরিত ব্যবস্থা নেয়া হবে। চলমান নিবন্ধে এ বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হবে।
এক.
আবহমান বিশ্বে, বিশেষ করে আমাদের দেশে খেলাধূলা বলতে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ভলিবল, হ্যান্ডবল, বাস্কেটবল, জিমন্যাসটিকস, টেবিল টেনিস, স্কোয়াশ, ড্রাইভিং, হাডুডুুডু, ব্যাডমিন্টন, এ্যথলেটিকস, সাঁতার, জুড়ো, ক্যারাটে, কুংফু, বক্সিং, কুস্তি, ভারোত্তোলন, শ্যূটিং, ওয়াটার পোলো, দাবা, ছক্কা-পাঞ্জা, গাফলা, তাস, ক্যারাম, দাড়িয়াবান্ধা, লাঠিখেলা, নৌকা বাইস, গোল্লাছুট, খোÑখো, ষাড়ের লড়াই প্রভৃতি খেলা-ধূলায় ধার্মিক-অধার্মিক, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, অতিশিক্ষিতরা শহর-নগর, পাড়া-মহল্লা, গাঁও-গ্রামে আঞ্চলিক কিংবা জাতীয় স্টেডিয়ামে নানা শ্রেণী পেশার মানুষের স্বত:স্ফূর্ত উপস্থিতি না হলেও বিশ্বকাপ ফুটবল, ক্রিকেট বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক-এ খেলতে নয়, খেলা দেখাই যেন চলমান বিশ্বের নজরে সবচে জনপ্রিয় একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ লেখাটি তৈরি করার আগে বিশ্বকাপ ফুটবল, ক্রিকেট বিশ্বকাপ এবং ২০১৪ এর অলিম্পিক উৎসবও প্রযুক্তির কল্যাণে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। তাই প্রথমে ক্রিকেট বিশ্বকাপ, বিশ্বকাপ ফুটবল সম্পর্কে কিঞ্চিৎ আলোচনা করেই মূল বিষয়ের দিকে চলে যাব।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ ইতিকথা : ক্রিকেট খেলাটা আবিষ্কার হয় ১৭২৫ খ্রিস্টাব্দে। বিশ্বকাপ হিসেবে তার যাত্র শুরু ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে। ইংল্যান্ডের লর্ডসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তার  প্রথম আসর। অতি সম্প্রতি আসরটি আইসিসি কর্তক পরিচালিত ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার একাদশ আসর, ১৪ ফেব্র“য়ারি থেকে শুরু হয়ে যা চলে ২৯ মার্চ পর্যন্ত। চলমান এই বিশ্বকাপ অষ্ট্রেলিয়া ও নিউজল্যান্ড যৌথভাবে আয়োজন করছে যাতে সর্বমোট ৪৯টি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। দেশ দুটি ১৯৯২ সালেও ক্রিকেট বিশ্বকাপের আয়োজন করেছিল। ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ১২ ফেব্র“য়ারী ২০১৫ তারিখে নিউজল্যান্ডের ক্রাইষ্টার্চাচ ও অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল প্রতিযোগিতার একাদশ আসরে অর্থ পুরস্কার হিসেবে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘোষণা করা হয়। এ সংখ্যাটি অন্যান্য বিশ্বকাপের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। চলমান বিশ্বকাপ উন্মাদনায় সঙ্গ দিয়েছেন বিশ্বের সেরা গলফার ‘রবি ম্যাকলর্য’। রবি আইসিসির সদর দফতর দুবাইয়ে কিছু সময় তার বলিং একশ্যন দেখাতে ব্যয় করেছেন। বাংলাদেশেও ক্রিকেট বিশ্বকাপের উন্মাদনা ছড়াতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) দেশের ৩টি ভেন্যুতে- খুলনা, চট্টগ্রাম ও ঢাকা মিরপুর স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয় কনসার্ট। এতে গান পরিবেশন করেন বাপ্পা, এ্যান্ড ফেন্ডস, ওয়ারফেজ, মাইলস, এলআরবি ও মমতাজ। এ উপলক্ষে টিকিট বিক্রি হয় ১০০০/৫০০/১০০ টাকার।
বিশ্বকাপ ফুটবলের পূর্ব ইতিহাস : ১৯০৪ সালের ২১শে মে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউরোপের সাতটি দেশ- ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, নেদারলেন্ড, সুইজারলেন্ড, সুইডেন ও বেলজিয়াম মিলে এক বৈঠকে মিলিত হয় এবং ফেডারেল ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল এসোসিয়েশন বা ফিফা (ঋওঋঅ) নামে একটি কমিটি গঠন করে। তারা বৈঠকে সিন্ধান্ত গ্রহণ করে যে, সমস্ত বিশ্বকে নিয়ে যদি কোন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় তবে ফিফারই থাকবে সেই অধিকার। ১৯২৮ সালে হল্যান্ডের রাজধানী অর্মস্টাডে অলিম্পিক প্রতিযোগিতা চলার সময় ফিফা সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা প্রতি চার বছর পরপর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে। ইউরোপীয় দেশগুলোর আপত্তি সত্ত্বেও ইউরোপের চারটি দল, আমেরিকার দুটি দল এবং ল্যটিন আমেরিকা থেকে সাতটি দল মিলে মোট ১৩টি দল নিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের যাত্রা শুরু। ১৯৩০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মোট ২০বার বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বকাপের খবর প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া কে কার চাইতে সুন্দর উপস্থাপনায় আগ বাড়িয়ে খবর দিতে পারে এ নিয়ে চলছে আরেক প্রতিযোগিতা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিশ্বকাপের সাথে বা অলিম্পিকের সাথে যে উম্মাদনা চলে তা গোটা বিশ্বকে আইয়্যামে জাহিলিয়াত থেকে আরো কয়েক ধাপ নিচুমানের বর্বরতায় নামিয়ে দিচ্ছে। ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় মধ্যযুগীয় বর্বরতায়ও এতো ঢাকঢোল পিটিয়ে অশ্লিলতা চলত না। উদাহরণ স্বরূপ গত ৮ জুন ২০১৪ দৈনিক মানব জমিনের এক তথ্যসন্ধানি রিপোর্টের দিকে পাঠকদের দৃষ্টি আর্কষণ করছি। ঐ পত্রিকার শেষের পৃষ্ঠায় একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল “হোটেলে মোটেলে সয়লাব যৌন কর্মীরা”, সংবাদটি পড়ে জানা যায় ব্রাজিল অভিমুখে ছুটছে দর্শক, পর্যটক, এই দুরন্ত চলায় যেন তারা ক্লান্ত না হয়, মেজাজ বিগড়ে না যায়, সেজন্য ব্রাজিলের হোটেলে মোটলে সর্বত্রই নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এরই মধ্যে দেশের বেশিরভাগ আবাসিক হোটেলে গিজ গিজ করছে ভিড়ে। একদিকে বিশ্বকাপের মাঠে জমবে স্নায়যুদ্ধ, ঠিক তখন পর্দার আড়ালে চলবে আরেক যুদ্ধ। সেটা এখন আর আড়ালে নেই। একেবারে উন্মুক্ত হয়ে পড়ছে। তা হল বিশ্বকাপের আসর থেকে যৌনকর্মীদের উপার্জন কৌশল, এটা ব্রাজিলের সবখানে বৈধ ও আয়ের অন্যতম কৌশল, এ কারণে পর্যটক আকর্ষণ করতে সমাবেশ ঘটানো হয়েছে সুন্দরী দেহপসারিনীদের, নানা শ্রেণীর যৌনকর্মী মৌজুদ রাখা হয়েছে। যাতে চাওয়া মাত্র পাওয়া যায়। মাদকসহ অন্যান্য ব্যবসা তো আছেই…………।
দুই.
সকাল-বিকাল শিশু কিশোররা যেভাবে খেলাধূলায় ব্যস্ত থাকে, ঠিক তেমনি মধ্য বয়সী থেকে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ খেলা দেখায় সময় কাটানো যেন জীবনের নিত্য নৈমিত্তিক প্রয়োজনীয় কাজ হয়ে পড়েছে। খেলাধূলার নেশার আমেজ অবিরাম চলে যাচ্ছে, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। তবুও খেলোয়াড়, খেলা অনুরাগী ও খেলা দর্শনার্থীদের মধ্যে অবসাদের একটুও আভাস দেখা যায়না। যেন তাদের কাছে জীবন বা সময়ের কোন মূল্য নেই। এদেশের ছেলেরা বিশ্বয়ানের কাফেলা থেকে পিছিয়ে থাকার এটা একটা উল্লেখযোগ্য কারণ।
বিশ্বে যত ক্রীড়া উৎসব হয় তন্মধ্যে সর্বাধিক শ্রেষ্ঠ ক্রীড়া উৎসব হচ্ছে অলিম্পিক, যেন তার সাথে অন্য কোন ক্রীড়া উৎসবের তুলনা করা চলেনা। কারণ বর্তমান দুনিয়ার সব ধরণের খেলাধূলা বা ক্রীড়া উৎসবের যৌথ বা ক্রীড়া সমন্বয়কারী ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানের নাম অলিম্পিক, বিশ্বকাপ, অলিম্পিক, এশিয়ান গেমস, সাফ গেম্স, প্রভৃতি খেলা ও ক্রীড়া উৎসব সমূহের উদ্দেশ্য হিসেবে যা বলা হয়েছে, তন্মধ্যে অন্যতম হলো ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি, সমগ্র বিশ্ববাসী মানুষকে এ উৎসবের সুযোগে কাছাকাছি দাঁড় করানো এবং জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে নারী-পুরুষ দলবদ্ধ হয়ে রঙ্গ তামাশায় ও মিলন মেলায় মত্ত হওয়া ইত্যাদি। আর এসব লক্ষ্য অর্জনে প্রতি চার বছর পর পর বর্ণিল অলিম্পিক, বিশ্বকাপ ফুটবল, ক্রিকেট বিশ্বকাপ ও সাফ গেমসের আয়োজন করা হয় প্রত্যেক স্বাগতিক দেশে দেশে। কিন্তু ক বছর থেকে আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করে আসছি যে, বিশ্বকাপ মৌসুমে অশ্লীলতা, নগ্নতা, বেহায়াপনা, নোংরামীসহ সর্বপ্রকার অপসংস্কৃতির অশুভ বার্তা হানাদেয় বিশ্বের ঘরে ঘরে। শুরু হয় বিশ্বব্যাপী খেলা দেখার মেলা। শহর-নগর, পাড়া-মহল্লা, গাঁও-গ্রামেও দলবদ্ধ হয়ে খেলা দেখার উদ্দ্যেশে সারা রাত কাটিয়ে দেয়া হয়। তখন দেখা যায় টি.ভি ক্রয়ের প্রতিযোগিতা মাসখানেক আগ থেকে। সপ্তাদিন আগ থেকে বিশ্বজুড়ে বার্ণাঢ্য কর্মসূচী পালনের পরিকল্পনা করা হয়। ছড়িয়ে পড়ে চৌদিকে-দশদিকে উত্তেজনা-উম্মাদনা। ভিন্ন-ভিন্ন বর্ণের ভিন্ন জাতির পাতাকা উত্তোলন করা হয় মুসলমানদের বাসভবনের ছাদে, রোডের এপাশ ওপাশে, বাড়ির দেয়ালে, চৌমুহনী রাস্তার মোড়ে মোড়ে। মজার ব্যাপার হচ্ছে-নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাওরের মাঝে অবস্থিত নিরীহ গাছ-গাছালিগুলোর চূড়ায় বিজাতীয় পতাকা হেলতে দোলতে দেখা যায়। কখনও মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে বিজাতীয় পতাকা টানা বা ছাটার অজুহাতে দেয়ান-দরবার শুনা যায়। এমনকি নিজস্ব সমর্থিত দল বিজয়ী হলে প্রচন্ড হাবিজাবি, হুড়–স্থুল এবং পরাজিত হলে নানা গালাগাল সহ আত্মহত্যার খবর পর্যন্ত মিডিয়ায় আসে হরহামেশা।
এরই ফাঁকে কালো টাকার মালিকদের দেখা যায়, বিভিন্ন মাঠে-ময়দানে, হাওর-বাওরে, নিজেদের নাম ছড়ানোর লক্ষ্যে আঞ্চলিক কাপ খেলার আয়োজন, অমুক-তমুক টুর্ণামেন্ট ফাইনাল খেলার মাইকিং এর আওয়াজে শব্দদূষণসহ আশপাশের মসজিদে নামাজ পড়া মুশকিল হয়ে যায়। মারামারি, দেন-দরবার সহ শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ায় ব্যাঘাত তো আছেই?
তিন.
শিশুরা স্বভাবগতভাবে কুচিকুচি ও আজে-বাজে খেলাধূলায় শৈশব কাল কাটায়। এটা স্বাভাবিক, তাতে দোষের কিছু নেই। যখন তারা কৈশোরে পর্দাপণ করে তখন গ্রাম্য, আঞ্চলিক, দেশীয় খেলাধূলায় উদ্যমী হয়। আগেকার যুগে কচি ছেলে-মেয়েরা বিকাল বেলায় দেশীয় খেলাধূলা করে থাকতো আজো আছে, থাকা উচিত, কিন্তু বর্তমান দুনিয়ায় নানা জাতের খেলা, মেলা, জুয়া, লটারি আবিষ্কার হয়েছে, যেগুলো মুসলিম বিশ্বে তর্ক-বিতর্ক বেড়েই চলছে। কেননা খেলাধূলা বা খেলা দেখার নামে চলছে নারী-পুরুষ একত্রে উপবেশণ থেকে নিয়ে কনসার্ট, গীতিনাট্য, নৃত্যানুষ্ঠান, গান-মিউজিক, নারী কর্তৃক পুরুষের শরীর মেসেজ, ক্লোজ আপ, খেলোয়াড়দের অর্ধনগ্ন উরু প্রদর্শনী, অশ্লিল ছবির গান, বেহালার মূর্ছনা, একতারা টুংটাং দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা, খেলার টিমের অধিনায়ক বা বিজয়ী হওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করা, বড় অংকের টাকায় খেলোয়াড় ক্রয় করা হয়। বিশেষ করে বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক, এশিয়ান গেম্স ও বিভিন্ন লীগে অশ্লিলতা, নগ্নতা, জুয়া, মাদকাসক্ততা, দেহব্যবসা থেকে নিয়ে যে অপরাধগুলোর জন্ম দিয়ে যাচ্ছে, এতে সভ্য নাগরিক ও চিন্তাশালীরা এগুলোকে খেলাধূলা না বলে অপকর্ম বলাই ভালো বলে মনে করছেন। জাতির অভিভাবকের দায়িত্বে নিযুক্ত ব্যক্তিদের ঘুম ভাঙ্গার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আগামী প্রজন্মরা বিজাতীয় সংস্কৃতি-সভ্যতার বন্যায় কি শুধূ সাঁতারই কাটবে? এভাবে চোখের সামনে ইসলামী চেতনা, বিবেক অনুভূতিগুলো কি লাওয়ারিশ ও ইয়াতিম হয়ে যাবে? খেলাধূলার আনন্দ ও রঙ্গ তামাশার সাথে এ সব অপকর্মের কি বৈধতা দেয়া যায়? ফুটবল ও ক্রিকেট বলতে খেলোয়াড় ও ক্রীড়ামোদীরা ভাগ্যদেবতা বা ঈশ্বরের মত পূজ্য মনে করে তা কি ঠিক? ফাইনাল খেলা শেষে চ্যাম্পিয়ন দলপতি ও খেলোয়াড়রা বলকে বুকে চেপে ধরে নাকে-মুখে চুমু খেতে দেখা যায় তা কতটুকু যুক্তিসংগত?
চার.
ইসলাম নির্দিষ্ট কোন খেলাধূলাকে জায়েজ নাজায়েজ বলে নাই, বরং তিনটি শর্তের সাথে জায়েজ-নাজায়েজের সম্পর্ক, তা হলো ১. শারীরিক উপকার সাধন। ২. ইসলামি শরিয়াতের কোন বিধান লঙ্গন না হওয়া। ৩. আর্থিক ক্ষতিসাধন না হওয়া। এ তিনটি শর্ত যে খেলার মাঝে পাওয়া যাবে তা জায়েজ, আর পাওয়া না গেলে জায়েজ নয়। যার বিস্তারিত আলোচনা নিম্নরূপ-
ইসলামপূর্ব যুগে খেলাধূলা, মেলা ও জুয়া ভিত্তিক অনেক প্রকারের খেলাধূলার প্রচলন ছিল, শরিয়াতের বিধান লঙ্ঘিত হওয়ায় অনেকগুলোকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। যার বর্ণনা কোরআন-সুন্নাহ ও ফেক্বাহ শাস্ত্রে বিদ্যমান আছে। তবে হ্যাঁ! শরীয়তের সীমারেখার ভেতরে উল্লিখিত শর্তের সাথে শরীর চর্চা, সাময়িক সময়ে খুশিবাসি, তীরন্দাজ, যুদ্ধকৌশল ও রণক্ষেত্রে জয়লাভের পূর্ব প্রস্তুতিমূলক দৌড়া-দৌড়ির বৈধতা বিভিন্ন হাদীসে ও ফেকাহগ্রন্থে পাওয়া যায়। তবে এগুলো খেলাধূলার অন্তর্ভূক্ত কি না এ নিয়েও পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক আছে।
খেলাধূলার সংজ্ঞা : মিসবাহুল মুনীর গ্রন্থে খেলাধূলা ক্রীড়া কৌতুক ও তৎসংশ্লিষ্ট বস্তুর শাব্দিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে- এমন বস্তুকে যা দ্বারা চিত্ত বিনোদন করা হয় অথচ জ্ঞান-বুদ্ধি তা সমর্থন করে না। অর্থাৎ যে কাজ ও বস্তু মানুষের জন্য অনিবার্য নয়, অর্থকরী নয়, তাতে সে ব্যস্ত হয়ে পড়াকে খেলাধূলা, ক্রীড়া কৌতুক ও কৌতকাবহ বস্তু বলা হয়।
ইসলামি পরিভাষায়, খেলাধূলা ক্রীড়া-কৌতুক এমন সব কাজ বস্তু বা বিষয়কে বলা হয় যা মানুষকে আল্লাহর এবাদত ও স্মরণ থেকে গাফেল করে ফেলে। যার কোন উল্লেখযোগ্য উপকারিতা নেই কেবল সময় ক্ষেপন কিংবা মনোরঞ্জনের জন্য করা হয়।
খেলাধূলার শরয়ী বিধান : খেলাধূলা ও কৌতুকাবহ বস্তুর বর্ণিত সংজ্ঞার ভেতরে যত কাজ, যত কথা, বস্তু ও বিষয় ঢুকবে সবগুলোকে শরিয়ত অনুমোদন দেয়নি। সূরা লুকমানের ৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “মানুষের মধ্যে এক শ্রেণীর মানুষ এমন আছে যারা লাহওয়াল হাদীস তথা খেলাধূলা-কৌতুকাবহ কথা ক্রয় করে মানুষকে আল্লাহর পথ পদ্ধতি থেকে ভ্রষ্ট করার জন্য। আর এটা নিয়ে ঠাট্ট্রাÑবিদ্রুপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবনামনাকর শাস্তি”। প্রথম লক্ষণীয় বিষয় এই যে, কোরআন পাক কেবল নিন্দার স্থলেই খেলাধূলা, ক্রিড়া-কৌতুকের উল্লেখ করেছে। এই নিন্দার সর্ব নিম্ন পর্যায় হচ্ছে মাকরুহ, আলোচ্য আয়াতটি খেলাধূলা ও অনর্থক কাজের নিন্দায় সুম্পষ্ট ও প্রকাশ্য। (রূহুল মাআনী, কাশ্শাফ)
বিংশ শতাব্দির প্রখ্যাত মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ শফী র. স্বীয়গ্রন্থ আহকামুল কুরআনে বর্ণিত আয়াতের হুকুম প্রসঙ্গে বলেন- পবিত্র কুরআনের এ আয়াতে ঐ সকল কথা, কাজ, বস্তু ও বিষয়কে হারাম করে যা মানুষকে আল্লাহ পাকের এবাদত ও তার স্মরণ থেকে গাফিল করে দেয়। তা গান-বাজনা হোক বা খেলাধূলা, ক্রীড়া-কৌতুক, মেলা, জুয়া সরঞ্জামসহ সবই এর অন্তর্ভূক্ত।
বর্ণিত আয়াতে অধিকাংশ তাফসীরের কিতাবে “লাহওয়াল হাদীস” এর ব্যাখ্যায় খেলাধূলা-ক্রীড়া-কৌতুক, আজে-বাজে কথাবার্তা, ছায়াছবি-নাটক, অশ্লীল উপন্যাস, কেচ্ছা-কাহিনী, গান-বাজনা ইত্যাদি যা মানুষকে আল্লাহর এবাদত ও স্মরণ থেকে গাফেলা করে তা হারাম সাবস্ত করেছেন। বিশ্ববিখ্যাত ফেকাহ শাস্ত্রীয় কিতাব ‘হেদায়া’র মধ্যে বলা হয়েছে শেতরানজ, নারদাশীল, চৌদ্দ গুটির খেলা এবং প্রত্যেক খেলা মাকরুহে তাহরীমী, কারণ এর দ্বারা জুয়া খেলা খেললে তা হবে মাইসির। আর মাইসির অকাট্য হারাম, পবিত্র কোরআন হাদীসের আলোকে। মাইসির হচ্ছে যে কোন জুয়া খেলার নাম, আর যদি এর দ্বারা জুয়া না খেলে তাহলে এটা হবে নিরর্থক লাভহীন এক কাজ। পৃথিবী বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাব দুররে মুখতার গ্রন্থকার বলেছেন যে কোন খেলাধূলা বৈধ হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত হচেছ, তাতে হার জিতের ওপর কোন বাজী ধরা যাবে না। জুয়ার চুক্তি করা যাবেনা। খেলার অধ্যবসায় সদা-সর্বদা করা যাবেনা। জীবনের আদর্শ উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট হিসেবে একে আজীবন করা যাবেনা। খেলাধূলার কারণে ইসলামের অনুশাসন বাস্তাবায়নে কোন প্রকার বাধা সৃষ্টি হতে পারবে না। নতুবা তা হারাম হওয়ার বিষয়ে ফকীহগণ একমত।
প্রত্যেক খেলার ব্যাপারে ফতোয়ায়ে শামী গ্রন্থকার বলেন- খেলাধূলা, মেলা, অনর্থক, লাভহীন কথাবার্তা, কর্মকান্ড এবং এসব বস্তু তৃপ্তি সহকারে দেখা বা শুনা যেমন নৃত্য, উপহাস, করতালী, বীণার সুুুুুুুরেলা ধ্বনি, সঙ্গীতের সুরালাপ, হারমোনি, তবলা, বড়ঢোল প্রভৃতি বিষয় হারাম।
মৌলিক নীতি : ফতোয়ায়ে দুররে মুখতারে খেলাধূলার একটি মূলনীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো-
খেলাধূলা তখন জায়েজ হবে যখন তাতে জুয়া থাকবেনা। খেলার অধ্যবসায় সদা-সর্বদা করা যাবেনা। এটাকে জীবনের উদ্দেশ্য, আদর্শ ও বৈশিষ্ট্য মনে করা যাবেনা। সেই সাথে খেলাধূলার কারণে ইসলাম ধর্মের অনিবার্য বিধান লংঙ্ঘিত হতে পারবে না। অন্যথায় তা হারাম হওয়ার ব্যপারে ফকীহগণ একমত।
এ প্রসঙ্গে ফতোয়ায়ে শামীর মধ্যে বলা হয়েছে অনুরূপ যখন খেলাধূলার বেশিরভাগ ধর্মদ্রোহী, ধর্মবিদ্বেষী অসৎ পতিতা ও অসাধু মানুষ অংশ না নেবে, কিন্তু যখন খেলার মাঠে বর্ণিত স্বভাবের লোকজনের আড্ডায় পরিণত হবে, তখন আর খেলা বৈধ থাকবেনা। (খেলাধূলা ও আনন্দমেলা-মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল গফুর)
পাঁচ.
খেলধূলার বৈধতা : কোন কোন হাদীস ও ফেকহার কিতাবে যেসব খেলাধূলার বৈধতা দেয়া হয়েছে তা হলো- হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন রাসূল (সা.) পবিত্র মদীনায় খেলাধূলায় মগ্ন একদল ছেলেদের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। আর আমি তিনির কাঁধের ফাঁক দিয়ে তাদের খেলা দেখলাম, রাসূল (সা.) বললেন, খেলাধূলা কর হে আরিফের বৎসগণ! এতে ইয়াহুদি ও নাসারাগণ আমাদের শরীয়তে আনন্দোদ্দীপনার সুযোগ আছে বলে জানতে পারবে, ছেলেরা বলতে লাগলো ধন্যবাদ আবুল কাসিম, ধন্যবাদ, ইতোমধ্যে হযরত ওমর রা. আসায় সকলে মাঠ ত্যাগ করে চলে গেল। আরেক হাদীসে আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন- তিন খেলাই মুসলমানদের- এক. আপন স্ত্রীর সাথে অত্যধিক প্রেমভরে খেলা করা। দুই. স্বীয় অশ্বকে যুদ্ধ কৌশল শিক্ষা দেয়া। তিন. শত্র“র মুকাবেলায় জয় লাভের জন্য তীর ছুড়া ছুড়ির প্রশিক্ষণ। (তিরমিজী, আবু দাউদ, ইবনে মাযা)
কানজুল উম্মাল নাকম কিতাবে আরেকটি হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো- (তোমরা মাঝে মধ্যে) খেলাধূলা কর, কারণ আমি তোমাদের জীবন ব্যবস্থায় সম্প্রীতির অভাব অপছন্দ করি।
ইমাম আবু দাউদ স্বীয় মারাসীল গ্রন্থে এক হাদীসে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, মাঝে মধ্যে মনকে আরাম দাও, অবকাশে থাক। জামে ছগিরের এক হাদীসে উল্লিখিত- আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহর যিকির-আযকার ব্যতীত যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান খেলাধূলার অন্তর্ভূক্ত।
সাংঘর্ষিক হাদীস সমূহের ব্যাখ্যা: খেলাধূলা জায়েজ-নাজায়েজ সম্পর্কিত হাদীসগুলোর ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসিন ও ফুকাহায়ে কেরামগণ বলেছেন, ইসলামী শরীয়তে নির্ধারিত কোন খেলাধূলা নেই। সেই সাথে নির্ধারিত কোন নিয়ম কানুনও নেই। বরং দ্বীন ইসলাম, ব্যক্তির শারীরিক ও আর্থিক স্বার্থ বিরোধী খেলা এবং জুয়া ভিত্তিক যাবতীয় খেলাধূলা নিষিদ্ধ ও হারাম। মোটকথা খেলাধূলা হারাম হওয়ার কারণ সমূহের মধ্যে থেকে প্রধান কারণ হিসেবে যে ক’টিকে সনাক্ত করে বৈধ বা অবৈধ হুকুম লাগিয়েছেন তা নিম্নরূপ-
(ক) দু’তরফা লেনদেন ও হার জিতের বাজি খেলা বা জোয়া খেলা করা। (খ) আল্লাহর জিকির আযকার ও তার স্মরণ থেকে মানুষকে গাফিল করা। (গ) বেশিরভাগ অধার্মিক ও অসাধু লোকজনের আড্ডা জমে উঠা। (ঘ) খেলার অধ্যবসায় সদা-সর্বদা করা। (ঙ) শারীরিক ক্ষতি সাধিত হওয়া। (চ) আর্থিক ক্ষতি সাধন হওয়া। এগুলো যে খেলায় পাওয়া যাবে সেটা হারাম ও নিষিদ্ধ আর না পাওয়া গেলে বৈধ। প্রিয় পাঠক! বর্তমান খেলাধূলার বিষয়টি মনোযোগের সহিত লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন যে, খেলাধূলা হারাম হওয়ার প্রধান কারণগুলো তাতে অবশ্যই জড়িত রয়েছে।
ক্রীড়া মঞ্চগুলোতে খেলার দিন সকাল থেকে দর্শনার্থীদের ঢল নেমে আসে, দূর দূরান্ত থেকে মূর্চ্ছনা, ঢোল, ডুগডুগির ছান্দিক, বাদ্য, একতারার টুংটাং এবং অশ্লিল অশালিন ছবির গান দিয়ে শুরু করা হয়। সেই সাথে থাকে উৎসব মুখর জনতার আনন্দের কলতান। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় এখেলা যেন তাদের আনন্দের তীর্থস্থান। অথচ এসব অনুষ্ঠানের কারণে পার্শ্ববর্তী এলাকার মসজিদ মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখা-পড়ায় বাধা সৃষ্টিসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান পর্যন্ত পালন করা যায় না। খেলার মাঠে হৈ-হোল্লড়, চিৎকার, ভাষ্যকারের ঘোষণা এবং জনতার করতালির কারণে যে শব্দদূষণ সৃষ্টি হয় তা বড় অসহ্য লাগে। হাজার হাজার খেলাপ্রিয় মানুষের ভিড়ের কারণে রাস্তাঘাট ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে নিরীহ পথচারীরা কষ্ট পায়, লঙ্ঘন করা হয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার। জাতীয় ও বিভাগীয় স্টেডিয়ামে দর্শক গ্যালারিতে তরুণ-তরুণীরা ইউরোপিয়ান কায়দায় স্বীয় সমর্থিত দলের পতাকাসহ উল্লাসে ফেটে পড়ে। বিশ্বকাপ ফুটবল, বিশ্বকাপ ক্রিকেট বা অলিম্পিক মাঠের গ্যলারিতে ইংলিশ ছায়াছবির মত নারীরা অশ্লিলতার মহড়া দেয়, নিজ নিজ সমর্থিত দলের পতাকা মাথায় গাল, স্তন, পেট ও উরুতে অংকন করে আর্শিবাদ জানায়। যদি নিজ সমর্থিত দলের জয় হয় তা হলে খেলোয়াড়দের প্রান উজাড় করে চুম্বন খেয়ে প্রেম উপহার দিতে দেখা যায়, আনুষ্ঠানিক নারীদের দুরবীন নিয়ে উপভোগ করতেও দেখা যায়।
খেলাধূলা আজ মহামারি ও জাতীয় মরণ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। মাদ্রাসা, স্কুলসহ নানা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ভেস্তে যাচ্ছে। অধিকাংশ খেলাই ইসলামী সভ্যতা ও আদর্শের ওপর আগ্নেয়াস্ত্রের মত আঘাত হানছে। আন্তর্জাতিক খেলা থেকে নিয়ে আঞ্চলিক খেলা পর্যন্ত সব খেলাতেই জুয়া, ব্যবসা ও অসৎ উপায়ে টাকা উপার্জনের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। খেলায় বিজয়ী হওয়া জাতীয় মর্যাদা ও জাতীয় সম্মানের মানদন্ড হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। মজার ব্যাপার হল যাদু-টুনা ও খোদা পাকের পবিত্র নাম দ্বারা আরধনার মাধ্যমেও নিজ টিমকে জেতানোর চেষ্টা করতেও দেখা যায়। এসব অপসংস্কৃতির জোয়ারে আমরা কোথায় ভেসে যাচ্ছি?