মেজরটিলায় ফার্ণিচার ব্যবসায়ী ও দক্ষিণ সুরমায় গৃহবধূ হত্যা

46

স্টাফ রিপোর্টার :
নগরীর মেজরটিলায় ফার্ণিচার ব্যবসায়ী ও দক্ষিণ সুরমার গোটাটিকরে গৃহবধূ হত্যার শিকার হয়েছেন। স্ত্রীকে গলাটিপে হত্যার পর পালিয়ে গেছে স্বামী। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে গোটাটিকরের একটি কলোনীতে ও দুপুরে মেজরটিলার শ্রাবণী এলাকায় এ পৃথক খুনের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হচ্ছে- দক্ষিণ সুরমা কামালবাজার এলাকার নভাগী গ্রামের মৃত আব্দুল বারীর পুত্র বর্তমানের মেজরটিলা শ্রাবণী ১২ নম্বর যুক্তরাজ্য প্রবাসী জমসেদ মিয়ার বাসার বাসিন্দা ফার্ণিচার ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম (৪৭) ও কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার আব্দুল্লাহপুর গ্রামের রিক্সা চালক মজনু মিয়ার স্ত্রী বর্তমানে গোটাটিকর ময়না মিয়ার কলোনীর বাসিন্দা শরীফা বেগম (২২)।
ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনায় পুলিশ পাশের বাসার ভাড়াটে ছালিক মিয়া,তার স্ত্রী ও বোনসহ ৩ জনকে আটক করেছে। তাদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। মেজরটিলা শ্রাবণী ১২ নম্বর বাসার তত্ত্বাবধায়ক সামাদ আহমদ জানান, প্রায় এক বছর ধরে স্ত্রী পরিচয়ে এক মহিলাকে নিয়ে ওই বাসায় বসবাস করতেন নূরুল ইসলাম। বাসার আরেক ভাড়াটে ছালিক মিয়ার ঘর থেকে দুইদিন আগে মাটির ব্যাংকে রক্ষিত কিছু টাকা চুরি হয়। চোর ধরতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ছালিক মিয়া এক কবিরাজকে নিয়ে আসেন। কবিরাজ তার সহযোগীর মাধ্যমে ‘বাটি চালান’ দেন। কবিরাজ এর সহযোগী ‘বাটি চালান’র মাধ্যমে নুরুল ইসলামকে চোর সনাক্ত করে তার গলা চেপে ধরে। এক পর্যায়ে তাকে মাটিতে ফেলে তার বুকের উপর উঠে বসে। পরে কবিরাজ তার সহযোগীকে নিবৃত্ত করে নূরুল ইসলামকে চুরি যাওয়া টাকা ফেরত দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। এর কিছুক্ষণ পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন নূরুল ইসলাম। খবর পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪ টার দিকে শাহপরান থানা পুলিশের একটি দল সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায়। সেখান থেকে নুরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত নূরুল ইসলামের ভাই কয়েস আহমদ জানান, কামালবাজারে তার ভাইয়ের ফার্ণিচার ব্যবসা রয়েছে। তার এক ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। কামালবাজারের নভাগী গ্রামের বাড়িতে তার স্ত্রী পারভিন বেগম ও সন্তানদের নিয়ে থাকতেন। মেজরটিলায় তার কোন স্ত্রী আছে এটা পরিবারের কেউ জানেন না।
নূরুল ইসলামের স্ত্রী দাবিদার রুফিয়া বেগম জানান,‘আমার স্বামীকে চোর সাব্যস্ত করার পর তাকে ছাড়িয়ে নিতে আমি মাছিমপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় টাকা আনতে যাই। বাসায় ফিরে দেখি আমার স্বামী নূরুল ইসলাম অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। হাসপাতাল আনার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শাহপরাণ থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে চুরির অপবাদ সইতে না পেরে হার্ট অ্যাটার্ক করে নূরুল ইসলাম মারা গেছেন। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর আসল কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছালিক মিয়া, তার স্ত্রী ও বোনকে থানায় আনা হয়েছে।
এেিদক, গত সোমবার রাতে রিক্সা চালক মজনু মিয়া তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্ত্রী শরীফা বেগমের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে স্ত্রীকে ঘুমন্ত অবস্থায় মজনু মিয়াকে গলা টিপে হত্যা করে পালিয়ে যান।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার আব্দুল্লাহপুর গ্রামের আফিজ আলীর পুত্র মজনু মিয়া দক্ষিণ সুরমার গোটাটিকর এলাকার ময়না মিয়ার কলোনীতে স্ত্রী শরীফা বেগম (২২) ও স্মৃতি নামের ৫ বছরের কন্যা সন্তানকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। গত কয়েকদিন ধরে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ চলছিল। গত সোমবার রাতে মজনু বাসায় ফিরলে স্ত্রীর সাথে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়াঝাটি হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে শিশু কন্যা স্মৃতির কান্নাকাটিতে আশপাশের লোকজন মজনুর ঘরে প্রবেশ করে শরীফা বেগমের নিথর দেহ দেখতে পান। পরে পুলিশকে খবর দিলে আলমপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জয়ন্ত ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদি হয়ে মোগলাবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নং ৮ (২৪-০৩-১৫)।
এসআই জয়ন্ত জানান, নিহতের গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে মোগলাবাজার থানায় মামলা করেছেন। গতকাল রাতে ময়না তদন্ত শেষে নিহতের লাশ তার আত্মীয় স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।