স্পোর্টস ডেস্ক :
গতকাল শুক্রবার বিশ্বকাপের তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে নয়টায় সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে অজিরা।
অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত এ ম্যাচে অজিদের সামনে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১৪। তারপরও শুরুতে হোঁচট খেয়ে একটু চাপে পড়েছিল স্বাগতিকরা। দলীয় ৫৯ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়েছিল তারা।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে সোহেল খানের বল সরাসরি আঘাত করে ফিঞ্চের প্যাডে। ফিঞ্চ সতীর্থর সঙ্গে আলাপ করে রিভিউ’র সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এটা ছিল বোকার মত কাজ। কারণ এটা নির্ঘাত এলবিডব্লিউ, তা খালি চোখেই বোঝা গেছে। ধর্মসেনা দ্বিতীয়বার আঙুল উঁচিয়ে জানিয়ে দেন তার সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল।
উদ্বোধনের সঙ্গী ফিঞ্চ ফেরার পর বেশি সময় থাকতে পারেননি ওয়ার্নারও। ওয়াহাব রিয়াজের শর্ট বলে থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
এরপর ১১তম ওভারের চতুর্থ বলে ক্লার্ককে বোকা বানান ওই ওয়াহাব। পরিকল্পিতভাবে রাহাতকে তিনি শর্ট লেগে নিয়ে আসেন। হেলমেট বরাবর লাফিয়ে ওঠা বল কোনোমতে ডিফেন্স করে মাটিতে নামাতে যান ক্লার্ক। কিন্তু হায় বল রাহাতের হাতে! এটি বিশ্বকাপে রিয়াজের ১৬তম উইকেট।
তারপর ক্যাচ ফেলে দেয়ার উৎসবে মাতে পাকিস্তানিরা। এই সুযোগে স্টিভেন স্মিথ ও শেন ওয়াটসন দলকে অনেক দূর টেনে নিয়ে যান। ব্যক্তিগত ৬৫ রান করে ওয়াটসনকে রেখে সাজঘরে ফেরেন স্মিথ। এরপর ওয়াটসনের সঙ্গে জুটি বেধে ৩৩.৫ ওভারে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। শেষমেশ ওয়াটসন ৬৪ রানে ও ম্যাক্সওয়েল ৪৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন। পাকিস্তানি বোলারদের মধ্যে ওয়াহাব রিয়াজ ২টি, সোহেল খান ১টি ও এহসান আদিল ১টি করে উইকেট নেন। এদিন ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার জস হ্যাজলউড ।
শুক্রবার টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন মিসবাহ। কিন্তু মিসবাহ যা করতে চেয়েছিলেন তা নিশ্চয়ই হয়নি। ধুঁকতে ধুঁকতে ৪৯.৫ ওভারে ১০ উইকেট হারিয়ে তার দল করে ২১৩ রান।
এদিন দলীয় ২৪ রানের মধ্যে সাজঘরে ফেরেন দুই পাকিস্তানি ওপেনার। পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে সরফরাজকে (১০) স্লিপে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন স্টার্ক। আর শেহজাদকে (৫) ফেরান হ্যাজলউড। দুই উইকেট হারিয়ে দল যখন চাপে, তখন মিসবাহ-হারিস সোহেল দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেও বেশি দূর এগোতে পারেননি। ৭১ রানের জুটি গড়ার পর তাদের থামতে হয়।
মিসবাহ যখন সোহেলকে নিয়ে বড় রানের ভিত গড়ার চেষ্টা করছিলেন, তখন ক্লার্ক মূল বোলারদের বসিয়ে আক্রমণে আনেন আইটেম অফ-ব্রেকার ম্যাক্সওয়েলকে। তবে মিসবাহ মাক্সওয়েলকে স্বাগত জানান মিড-উইকেটের উপর দিয়ে দুই ছয় মেরে। এরপর ২৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ম্যাক্সওয়েলকে তৃতীয় বার ছক্কা মারতে যেয়েই ধরা পড়েন পাক কাপ্তান (৩৪)। স্লগসুইপ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বল উঠে যায় ডিপ-মিড উইকেটের আকাশে। ফিঞ্চ তা তালুবন্দি করে ম্যাচে ফেরান অজিদের।
এরপর দুই ওভার যেতে না যেতেই সোহেলকে ফেরান জনসন। বাউন্সার সোহেলের ব্যাটে লেগে চলে যায় হাডিনের হাতে। বলটি শরীরের বেশ বাইরে ছিল। তাতেই ব্যাট চালিয়ে দেন তিনি। ইনিংস শেষ করেন ৪১ রানে।
ফর্মহীনতায় থাকা উমর আকমলও আরেকবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। মাকসুদের সঙ্গে ১২ রানের জুটি গড়ে ম্যাক্সওয়েলের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। ডিপ-মিড উইকেটে ধরা পড়েন ফিঞ্চের হাতে।
ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে আফ্রিদিও ছিলেন ম্লান। তবে আশা জাগিয়ে ছিলেন। ১৫ বল খেলে তিন চার এক ছয়ে করেন ২৫ রান। ৩৪তম ওভারের শেষ বলে হ্যাজেলউডকে পুল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল অতটা শর্ট ছিল না। খেলা মাত্রই ক্যাচ ওঠে ডিপ-মিডউইকেটে। একই যায়গায় দাঁড়িয়ে তৃতীয় ক্যাচটি লুফে নেন ফিঞ্চ।
এরপর ব্যর্থতার মিছিলে নাম লেখান সোয়েব মাকসুদ। ৪২তম ওভারে হ্যাজলউডের বলে ভালো শট নিয়েছিলেন। অফসাইডে ঝুলন্ত বল ছিল। মাকসুদ জানতেন ডিপ কাভারে ফিল্ডার নেই। চেষ্টা করেছিলেন কভারের উপর দিয়ে মারতে। কিন্তু শরীর ঝুঁকে দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় তা ধরে ফেলেন জনসন। প্রথমবার ক্যাচটি জনসনের হাত ফসকে যায়। মাকসুদ আউট হওয়ার আগে ৪৪ বল খেলে করেন ২৯।
ওয়াহেব রিয়াজ(১৬) ফেরেন স্টার্কের বলে। রিয়াজ স্ট্যাম্প ছেড়ে রুম করে শট খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষকের হাতে।
৪৪তম ওভারের শেষ বলে সোহেল খানকে নিজের চতুর্থ শিকার বানিয়ে পাকিস্তানের রানের লাগাম আরো শক্ত করে টেনে ধরেন হ্যাজলউড। এরপর রাহাত আর এহসান দুজনে পৌঁছাতে পারেন ২১৩ পর্যন্ত।