॥ মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান ॥
ই সলামী আইন তথা শরীয়া ও ফিক্হশাস্ত্র গোটা মুসলিম জীবনকে পরিচালিত করে। এ বিষয়ে পশ্চিমা গবেষক প্রাচ্যবিদদের কৌতুহলের অন্ত নেই। ফলে একদল প্রাচ্যবিদ ইসলামী আইন ও ফিক্হশাস্ত্রকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন তাদের রচনা ও গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, আক্বীদা ও বিশ্বাসে অমুসলিম হয়েও পাশ্চাত্যের এসব লেখক ও গবেষক ইসলামী শরীয়ত ও ফিক্হশাস্ত্রকে যে মনযোগ, যে অধ্যবসায় ও গুরুত্বের সাথে অধ্যয়ন করেছেন, অনেক মুসলিমও হয়ত করেননি। কিন্তু দুয়েকজন ব্যতিক্রম ছাড়া সাধারণ প্রাচ্যবিদদের রচনা ও গবেষণায় ইসলামী শরীয়ত ও ফিক্হশাস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন উক্তি ও মন্তব্য অত্যন্ত মারাত্মক। এক্ষেত্রে অনেক প্রাচ্যবিদ লেখক চরম পর্যায়ের বিদ্বিষ্ট ও হিংসুটে রূপে প্রমাণিত হয়েছেন। অথচ ইসলামের প্রতি বিদ্বিষ্ট এসব প্রাচ্যবিদের লেখা বই-পুস্তকের অধিকাংশই আধুনিক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে রেফারেন্স বুক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলশ্র“তিতে ঐসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা অর্জনকারী ছাত্র, শিক্ষক, আইনজীবী, বিচারক ও প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে প্রাচ্যবিদদের লেখার প্রভাবে ইসলামী আইনের প্রতি এক ধরনের বীতশ্রদ্ধা সৃষ্টি হয়। মুসলমানের সন্তান হয়েও অনেক সময় ইসলামী শরীয়া, ইসলামী আইন ও বিচার এবং মুসলিম জীবনপদ্ধতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করতে দেখা যায় অনেককে। তাই এক্ষেত্রে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই ইসলামী আইন ও ফিক্হশাস্ত্রে প্রসিদ্ধ কয়েকজন প্রাচ্যবিদদের রচনা ও গবেষণা বিষয়ে এই প্রবন্ধ লেখার প্রয়াস পেয়েছি। প্রবন্ধের শুরুতে প্রাচ্যবাদের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের উপর সামান্য ধারণা দেয়া হয়েছে আলোচ্য বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবনের সুবিধার্থে। অতঃপর ইসলামী আইন ও ফিক্হশাস্ত্রে প্রাচ্যবিদদের উল্লেখযোগ্য রচনা ও গবেষণাকর্মের সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং ফিক্হশাস্ত্রের ভিত্তি নিয়ে তাদের আপত্তিকর মন্তব্যের পর্যালোচনা করা হয়েছে। ইসলামী শরীয়া ও ফিক্হ বিষয়ে প্রাচ্যবিদদের আরোপিত কয়েকটি অপবাদের জবাব এবং সেক্ষেত্রে মুসলিম গবেষকদের মূল্যায়ন দেয়া হয়েছে। সবশেষে বর্তমান প্রেক্ষিতে আমাদের করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
ইসলাম ও মুসলিম বিষয়ে প্রাচ্যবিদদের রচনা ও গবেষণা বহুমাত্রিক। ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় রয়েছে তাদের অবাধ বিচরণ। বিশেষ করে, ইসলামের আইন ও বিচার, ইসলামী শরীয়ত ও ফিক্শাস্ত্রে প্রাচ্যবিদদের রচনা, লেখালেখি ও গবেষণা আধুনিক বিশ্বের শিক্ষিত মহলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত। কারণ মুসলমানদের জীবন সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে হলে ইসলামী ফিক্হশাস্ত্রের বিকল্প নেই। ফিক্হ গোটা মুসলিম জীবনকে পরিচালিত করে। ইবাদাত ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য, মামলা-মোকাদ্দমা, লেন-দেন, আচার-আচরণ, ন্যায়-নীতি, সামাজিক আদান-প্রদান, বিয়ে শাদি, মানবাধিকার, শিক্ষা-দীক্ষা, শিল্প-সংস্কৃতি ইত্যাদি সবক্ষেত্রে ইসলামী আইন বা শরীয়া কি বলে তার পূর্ণাঙ্গ ও স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে এই শাস্ত্রে। এককথায় ইসলামী জীবনপদ্ধতির সবিস্তারে নির্দেশনা পাওয়া যায় এই ফিক্হশাস্ত্রেই। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, জন্ম থেকে; বরং জন্মের পূর্ব থেকেই মৃত্যু অবধি এবং মৃত্যুর পরেও ফিক্হশাস্ত্রের ব্যবহার রয়েছে। ফলে একদল প্রাচ্যবিদ ইসলামী শরীয়ত, আইন ও ফিক্হশাস্ত্রকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন তাদের রচনা ও গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবে।
প্রাচ্যবিদের সংজ্ঞা : প্রাচ্য বিষয়ে যিনি জ্ঞানচর্চা ও গবেষণা করেন সাধারণ অর্থে তিনি প্রাচ্যবিদ (ঙৎরবহঃধষরংঃ) তবে আধুনিক পরিভাষায় প্রাচ্যবাদ (ঙৎরবহঃধষরংস) বলতে মুসলিম প্রাচ্যের ভাষা, ধর্ম, সমাজ, শিল্প-সংস্কৃতি, সভ্যতা, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ে পশ্চিমাদের জ্ঞানচর্চা ও গবেষণা কেন্দ্রিক চিন্তাধারাকে বোঝানো হয়। “ঊফধিৎফ ঝধরফ, ঙৎরবহঃধষরংস, ঘবি ুড়ৎশ, ১৯৭৯ এর ভূমিকা দ্রষ্টব্য। মাওসূআতুল মুয়াসসারাহ ফিল আদয়ান ওয়াল মাযাহিবিল মুআসিরাহ, রিয়াদ: ওয়ামি ১৯৮৯ইং, পৃ. ৩৩”)। এই চিন্তাধারাকে লালন করে যারা জ্ঞানচর্চা ও গবেষণাকর্ম করেন তারাই প্রাচ্যবিদ হিসেবে পরিচিত। এ ক্ষেত্রে ইসলামী বিষয়াদি নিয়ে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণাকারী প্রাচ্যবিদদের মধ্যে ধর্মের কোনো শর্ত না থাকলেও সাধারণত ইহুদি, খ্রিস্টান ও নাস্তিকদের সংখ্যাই বেশি। মোদ্দাকথা, প্রাচ্য বিশেষত আরব ও মুসলিম প্রাচ্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় নিয়োজিত পশ্চিমা পন্ডিতকেই প্রাচ্যবিদ বলা হয়। “ড. ইসমাঈল আলী মুহাম্মদ, আল ইস্তিশরাক বাইনাল হাকীকাতি ওয়াত তাদলীল, মিসর-আল মানসূরা: আল কালিমা লিন নাশর ওয়াত তাউযী, ২০০০ইং, পৃ. ১৩”।
প্রাচ্যবিদদের গবেষণা : প্রকৃতি ও পরিধি ঃ ইতিহাসে দেখা যায়, আরব উপদ্বীপ থেকে বের হয়ে মুসলমানরা যখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং জ্ঞান, বিজ্ঞান, রচনা ও গবেষণায়য় গোটা পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে থাকে, বিশেষ করে স্পেনে মুসলমানদের উন্নতি ও অগ্রযাত্রায় তৎকালীন বিশ্বসমাজ চমকে যায়, তখন ইসলাম ও মুসলমানদের বিপক্ষ শক্তি নড়ে চড়ে বসে। “লেখক ও ইতিহাসবিদ সার্টন এই ঐতিহাসিক সত্যকে স্বীকার করেছেন তার ওহঃৎড়ফঁপঃরড়হ ঃড় ঃযব ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঝপরবহপব’ শীর্ষক গ্রন্থে। এক জায়গায় তিনি লিখেন, নবম ও দশম শতাব্দীতে জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিম আরবদের জয়জয়কার ছিল। নতুন নতুন সকল বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এবং আধুনিক চিন্তাধারা আরবী ভাষাতেই প্রচারিত ও প্রকাশিত হত। তখন আরবীই ছিল বৈজ্ঞানিক উন্নতির আন্তর্জাতিক মাধ্যম। দ্রষ্টব্য: ওহঃৎড়ফঁপঃরড়হ ঃড় ঃযব ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ঝপরবহপব’ চ.৫৪৩” সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তারা কৌশল পরিবর্তন করে। বিশেষ করে বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে মনযোগ দেয়। তারা বুঝতে পারে, প্রাত্যহিক জীবনে মূলত ইসলামী শরীয়াকে আঁকড়ে ধরার কারণেই মুসলমানদের এই উন্নতি ও অগ্রযাত্রা। তাই ইউরোপ ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশের একদল ইসলামবিদ্বিষ্ট পন্ডিত মুসলমানদের এই বিষয়টাকে বেছে নেয় তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার মানসে। তারা ইউরোপিয়ান হয়েও প্রাচ্যের ভাষা, ধর্ম, সমাজ, শিল্প-সংস্কৃতি, সভ্যতা, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে সবিশেষ দক্ষতা হাসিল করে। তারা মুসলমানদের ভাষায় বই-পুস্তক লিখে, গবেষণা চালায় মুসলিম উম্মাহর ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখার মানসে। কারণ, প্রথম থেকেই ইসলামকে ইউরোপের পথে প্রধান বাধা ও সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অক্সফোর্ডের অধ্যাপক অলবোর্ড হোরানি তার “ওংষধস রহ ঊঁৎড়ঢ়বধহ ঞযড়ঁমযঃ” শীর্ষক গবেষণায় লিখেন: ঋৎড়স ঃযব ভরৎংঃ ঃরসব রঃ ধঢ়ঢ়বধৎবফ ঃযব ৎবষরমরড়হ ড়ভ রংষধস ধ ঢ়ৎড়নষবস ভড়ৎ পযৎরংঃরধহ ঊঁৎড়ঢ়ব. প্রথম থেকেই খ্রিস্টান ধর্মালম্বী ইউরোপের জন্য ইসলাম ধর্ম একটি সমস্যা রূপে দেখা দেয়। “উৎ. অষনবৎঃ ঐড়ঁৎধহর, ওংষধস রহ ঊঁৎড়ঢ়বধহ ঞযড়ঁমযঃ, ঈধসনৎরফমব টহরাবৎংরঃু ঢ়ৎবংং. ১৯৯১, ঢ়. ৩”
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও গবেষকদের দৃষ্টিতে প্রাচ্যবাদের প্রতি অতিমাত্রায় গুরুত্বারোপের পিছনে পশ্চিমাদের দুইটি মৌলিক লক্ষ্য রয়েছে। এক. পাশ্চাত্যে ইসলামের প্রচার-প্রসার রোধ এবং পশ্চিমাদেরকে ইসলাম থেকে দূরে রাখা। দুই. মুসলমানদের দেশ ও রাষ্ট্র, তাদের সংস্কৃতি, আক্বীদা-বিশ্বাস, তাদের সাহিত্য, গল্প-কাহিনী ইত্যাদি বিষয়ে পরিচয় লাভ করা। যাতে সেসব দেশ এবং সেখানকার অধিবাসীদের উপর প্রভাব বিস্তার করা যায়। “আলী ইবন ইবরাহীম আন-নামলা, মাসা’দিরুল মালুমাত আনিল ইস্তিশরাক ওয়াল মুস্তাশরিকীন, রিয়াদ: মাকতাবাতুল মালিক ফাহাদ আল-ওয়াতনিয়্যাহ, ১৯৯৩ইং, পৃ. ৭”। স্মর্তব্য, ইসলাম যে পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান এবং ইসলামী শরীয়া ও আইন যে তাবৎ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আইন ও বিধান তা তুলনামলূক ধর্মতত্ত্বের ইতিহাসে এক অমোঘ ও অকাট্য সত্য। এ সত্যটা বিলক্ষণ জানেন ও বোঝেন প্রাচ্যবিদ নামে খ্যাত ওসব ইউরোপিয়ান পন্ডিতপ্রবর। ফলে নিঃস্বার্থ গবেষণা করতে গিয়ে প্রাচ্যবিদদের অনেকেই সত্যের অনুসারী হয়েছেন এবং পূর্বের ভ্রান্ত বিশ্বাস ত্যাগ করে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু যাদের ভাগ্যে হিদায়াত নেই তারা তো আর বসে নেই। তারা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তাদের বাছাই করা একদল লোককে বুদ্ধিবৃত্তিক মাঠে নিয়োজিত করে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে তাদেরকে প্রস্তুত করা হয়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গোপনীয়তার সাথে মুসলমানদের পদ্ধতিতে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে ঐসব নির্বাচিত লোককে আরবী ভাষা ও সাহিত্যে পারদর্শী করে তোলা হয়। ইসলাম ও মুসলমানদের বিভিন্ন বিষয় যথা পবিত্র কুরআন, হাদীস, ফিক্হ, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ে একেকজনকে দক্ষ পন্ডিত হিসেবে গড়ে তোলা হয়। তারাই পরবর্তীতে ইউরোপ-আমেরিকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ, আরবী ভাষা ও সাহিত্য, ওরিয়েন্টাল স্টাডিজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বা বিভাগীয় চেয়ারম্যানের পদে অধিষ্ঠিত হন।
ইসলামী শিক্ষা বিভিন্ন মৌলিক গ্রন্থ আরবী থেকে ইংরেজিসহ ইউরোপের বিভিন্ন ভাষায় তাদের ইচ্ছামত অনুবাদ করে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেন। এছাড়া ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে প্রচুর মৌলিক গ্রন্থ রচনা করে তাতে তারা বিভিন্ন ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ঢুকিয়ে দেন। প্রাচ্যবিদদের লেখা ঐসব গ্রন্থই পরবর্তীতে অনেক আরব ও মুসলিম দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যভুক্ত সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় অথবা শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে রেফারেন্স বুক হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। আবার মুসলিম বিশ্বের কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ দেশে নিজেরাই বিভিন্ন কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে সেখানে মুসলিম সন্তানদের কাগজে-কলমে শিক্ষা দিয়ে তাদের মত করে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা হয়। এসব কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম হচ্ছে কায়রোর আমেরিকান ইউনিভার্সিটি, বৈরূতের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি, যা পরবর্তীতে সিরিয়ান ইংলিশ কলেজ নামে পরিচিত লাভ করে, ইস্তাম্বুলস্থ আমেরিকান ইউনিভার্সিটি, পাকিস্তানের লাহোরস্থ ফ্রান্স কলেজ, সুদানের খার্তুমস্থ গরডন কলেজ ইত্যাদি। “ড. আব্দুল মুনইম ফুয়াদ, মিন ইফতিরা’তিল মুস্তাশরিক্বীন আলাল উসূলিল আক্বদিয়্যাহ ফিল ইসলাম, রিয়াদ: মাকতাবাতুল আবীকান, পৃ. ৩২- ৩৬”। ফলশ্র“তিতে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ এসব আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া মুসলিম ছাত্রদের মাঝে ইসলামী আইন ও শরীয়া সম্পর্কে প্রাচ্যবিদদের ধ্যান-ধারণার স্পষ্ট প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
উল্লেখযোগ্য প্রাচ্যবিদ-এর কর্ম ও পরিচয় : ইসলামের আইন ও বিচার, ইসলামী ফিক্হশাস্ত্র সর্বোপরি শরীয়ত বিষয়ে প্রাচ্যবিদদের রচনা ও গবেষণাকর্ম এবং এ বিষয়ে যেসব প্রাচ্যবিদ জ্ঞানচর্চা, লেখালেখি ও গবেষণাকর্ম চালিয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়া হল: ইসলামী আইন ও ফিক্শাস্ত্র বিষয়ে প্রাচ্যবিদদের রচনা ও গবেষণাকর্মের এক বিশাল ভান্ডার রয়েছে তাদের লেখা ‘ইসলামী বিশ্বকোষ’ (ঊহপুষড়ঢ়ধবফরধ ড়ভ ওংষধস) এর বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধে। এর বেশ কয়েকটি সংস্করণ ইতোমধ্যে বের হয়ে গেছে। প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ইংরেজি, ফরাসি ও জার্মান ভাষায় ১৯১৩ইং থেকে ১৯৩৮ইং সালের মাঝামাঝি সময়ে। সেটাকেই এখন আধুনিক বিশ্বে ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় উৎস ও জ্ঞান-ভান্ডার হিসেবে গণ্য করা হয়। আজকাল কোনো কোনো মুসলিম দেশতো প্রাচ্যবিদদের লেখা ওই ‘বিশ্বকোষ’ কে ইসলামী জ্ঞানের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করে। “সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী, আল-ইসলামিয়াত : বাইনা কিতাবাতিল মুস্তাশরিকীন ওয়াল বাহিসীন আল-মুসলিমীন, বৈরূত : মুআসসাসাতু আর-রিসালাহ, ১৯৮৬, পৃ. ১৯”। বিভিন্ন ভাষায় গ্রন্থটির হুবহু অনুবাদের ব্যবস্থাও করেছে তারা। “প্রসঙ্গক্রমে স্বীকার করতে হয়, পাকিস্তানের লাহোরস্থ পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আলোচ্য বিশ্বকোষাটির যে সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে তা অনেকাংশে নিখুঁত, পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত। জ্ঞানগত মূল্য বিচারে তা স্বতন্ত্র গ্রন্থের রূপ পরিগ্রহ করেছে’’। আরবী ভাষায় রূপান্তর করার সময় মিসরীয় অনুবাদ কমিটি ইসলামী বিষয়ে প্রাচ্যবিদদের বিভিন্ন ভুলক্রটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। একদল মুসলিম স্কলারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় টিকা-টিপ্পনী সংযোজন করা হয়। ১৯৯৭ইং আলোচ্য ইসলামী বিশ্বকোষের অনূদিত সংস্করণ সর্বমোট ৩২ খন্ডে প্রকাশিত হয়। “ড. মাহমূদ হামদী জকজুক, আল-ইস্তিশরাক ওয়াল খালাফিয়াতুল ফিকরিয়্যাহ লিস সিরা’ইল হাদারী, কায়রো : দারুল মা’আরিফ, পৃ. ৭০-৭২”।
ইগ্নায গোল্ডযিহার : ইসলামী আইন ও শরীয়াবিষয়ক গবেষণার জগতে প্রাচ্যবিদদের অন্যতম গুরু হচ্ছেন হাঙ্গেরিয়ান ইহুদি বংশোদ্ভূত প্রাচ্যবিদ ইগ্নায গোল্ডযিহার (ওমহধু এড়ষফরুযবৎ)। ইসলামী আইন ও শরীয়া বিষয়ে তার মন্তব্য ও উক্তিগুলো বুদ্ধিবৃত্তিক মহলে বহুল আলোচিত ও সমালোচিত। তার লেখা অন্যতম গ্রন্থ হচ্ছে ‘আল-আক্বীদা ওয়াশ-শরীআ ফিল ইসলাম (ওহঃৎড়ফঁপঃরড়হ ঃড় ওংষধসরপ ঞযবড়ষড়মু ধহফ খধ)ি। গ্রন্থটি জার্মান ভাষা থেকে আরবীতে অনুবাদ করেন মিসরীয় লেখক ড. আব্দুল হালীম আন-নাজ্জার। এই গোল্ডযিহারই প্রথম প্রাচ্যবিদ, যিনি ইসলামী আইনের অন্যতম প্রধান উৎস হাদীসে নববী সম্পর্কে সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তার রচনা ও গবেষণায়। এ কারণে পশ্চিমা বিশ্বে তার কদরও বেশি। আধুনিক ইসলামিক স্টাডিজ প্রতিষ্ঠায় তার নাম তালিকার শীর্ষে। বিশেষ করে হাদীসে নববী বিষয়ক গভীর পান্ডিত্যে প্রাচ্যবিদদের মাঝে তিনি গুরু হিসেবে বিবেচিত। পরবর্তীতে তিনি গোটা ইউরোপে ইসলামবিষয়ক জ্ঞান-গবেষণার পথপ্রদর্শক হিসেবে আবির্ভূত হন।
জোসেফ শাখ্ত : প্রাচ্যবিদ জোসেফ শাখ্ত (ঔ.ঝপযধপযঃ) (১৯০২-১৯৭০) আধুনিক আইন ও ফিক্হশাস্ত্রে এক অতি পরিচিত নাম। তার ক্ষেত্রে একথা প্রসিদ্ধ, তিনি ইসলামী ফিকহের ভিত্তি সম্পর্কে নতুন একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এ ধারণা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন ইংরেজি, ফরাসি ও জার্মান ভাষায়। এ লক্ষ্যে ‘ইসলামী ফিকহের প্রাথমিক কথা’ (ওহঃৎড়ফঁপঃরড়হ ঃড় ওংষধসরপ খধ)ি শিরোনামে একটি গ্রন্থও প্রণয়ন করেন তিনি, যা আরবিতে ‘আল মাদখাল ইলাল ফিকহিল ইসলামী’ নামে অনূদিত। তবে শাখত রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে (ঞযব ঙৎরমরহম ড়ভ গঁযধসসধফধহ ঔঁৎরংঢ়ৎঁফবহপব) (যা আরবীতে উসূলুশ শরীয়াতিল মুহাম্মাদিয়াহ’ শীর্ষক গ্রন্থটি সু-প্রসিদ্ধ। পরবর্তী প্রায় সকল প্রাচ্যবিদদের লেখায় শাখতে ধারণা ও মতবাদের প্রচন্ড প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এসব প্রাচ্যবিদদের অন্যতম হচ্ছেন: অ্যান্ডারসন, রোবসন, ফিতজ গ্রাল্ড, কোলসন বোসর্থ প্রমুখ। এইভাবে এ সব ধারণা ও মতবাদের গভীর প্রভাব দেখা যায় পাশ্চাত্য শিক্ষা সংস্কৃতিতে গড়ে ওঠা মুসলমানদের মধ্যে।
নোয়েল জে. কোলসন : পরবর্তীতে উল্লেখযোগ্য যে কয়েকজন প্রাচ্যবিদ ইসলামী আইন ও ফিকহশাস্ত্রে প্রচুর লেখালেখি করেছেন তাদের অন্যতম হচ্ছেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অরিয়েন্টাল ল বিষয়ের অধ্যাপক নোয়েল জে. কোলসন (ঘ.ঔ.ঈড়ঁষংড়হ)। আলোচ্য বিষয়ে কোলসন বিরচিত তিনটি গ্রন্থের শিরোনাম হচ্ছে: ১. অ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ ওংষধসরপ খধ,ি ১৯৬৪ ২. ঈড়হভষরপঃং ধহফ ঞবহংরড়হং রহ ওংষধসরপ ঔঁৎরংঢ়ৎঁফবহপব, ১৯৬৯ ৩. ঝঁপপবংংরড়হ রহ ঃযব গঁংষরস ঋধসরষু, ১৯৭১
এছাড়া আমেরিকা, ব্রিটেন ইত্যাদি দেশ থেকে প্রকাশিত আইনবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা পত্রিকায় তার অনেক প্রবন্ধ ও গবেষণাকর্ম রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ব্যক্তি ও রাষ্ট্র বিষয়ে তার একটি গবেষণার শিরোনাম হচ্ছে: ঞযব ঝঃধঃব ধহফ ঃযব ওহফরারফঁধষ রহ ওংষধসরপ খধি (ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ধহফ ঈড়সঢ়ধৎধঃরাব খধি ছঁধৎঃবৎষু, ঔধহ ১৯৫৭) ইসলামী আইনে মতবাদ ও প্রয়োগ বিষয়ে তার অন্য একটি গবেষণাকর্ম হচ্ছে: উড়পঃৎরহব ধহফ চৎধপঃরপব রহ ওংষধসরপ খধ,ি ইঝঙঅঝ ১৮/২ (১৯৫৬) উল্লেখ্য, প্রফেসর কোলসন পঁচিশ বছরের অধিক সময় ধরে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।
ড্যাভিড স্যন্টিলানা : ইতালিয়ান প্রাচ্যবিদ ড্যাভিড স্যান্টিলানা (উধারফ ঝধহঃরষষধহধ) (১৮৫৫-১৯৩১) ইসলামী ফিকহ ও আইনের একজন গবেষক। তিউনিসিয়ায় জন্মগ্রহণকারী এ প্রাচ্যবিদ রোমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের উপর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তার বিশেষত্ব হচ্ছে ইসলামী আইন ও ইসলামী দর্শন। ইসলামী শরীয়ার উপর ভিত্তি করে সিভিল অ্যান্ড কমার্সিয়াল ল’ প্রণয়নে তার বিরাট ভূমিকা রয়েছে। পরবর্তী রোমান বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ইসলামী আইনের অধ্যাপক নিযুক্ত হন। তুলনামূলক আইন ও ফিক্হশাস্ত্রে প্রাচ্যবিদ ড্যাভিডের প্রচুর রচনা রয়েছে।
সেকোডা লুসেনা প্যারিডিস : ফরাসি প্রাচ্যবিদ সেকোডা লুসেনা প্যারিডিস (ঝবপড়ফব খঁপবহধ চধৎবফবং) আরবী ও ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ের প্রসিদ্ধ একজন লেখক ও গবেষক। ১৯৪২ সালে তিনি গ্রানাডা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবী ভাষার অধ্যাপক নিযুক্ত হন। তার একটা বিশেষত্ব হচ্ছে, তিনি অনেক পান্ডুলিপি সম্পাদনা করেছেন। বিশেষ করে ইসলামী শরীয়া বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম রয়েছে প্রচুর।
নিকুলাস এগনিডেস : আরেকজন প্রাচ্যবিদ হলেন নিকুলাস এগনিডেস (ঘরপযড়ষধং চ. অমহরফবং) তার লেখা অহ ওহঃৎড়ফঁপঃরড়হ ঃড় গঁযধসসধফধহ খধি ধহফ ইরনষরড়মৎধঢ়যু’ যা ১৯৮১ ইং সালে লাহোর থেকে প্রকাশিত হয়।
শেলডন অ্যামস : লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের প্রফেসর শেলডন অ্যামস (ঝযবষফড়হ অসড়ং) আইন ও বিচার বিষয়ে তার প্রচুর গবেষণাকর্ম রয়েছে। এসব গবেষণায় বিশ্বের বিভিন্ন বিচার ব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা স্থান পেলেও ইসলামী আইন সম্পর্কে তার ধারণা পক্ষপাতদুষ্ট। বিশেষ করে তার রোমান নাগরিক আইন (জড়সধহ ঈরারষ খধ)ি শীর্ষক গ্রন্থের তিনি ইসলামী আইন রোমান আইন দ্বারা মদদপুষ্ট-এই ধারণাটি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন।
উপযুক্ত গবেষকগণ ছাড়াও ইসলামী আইন বিষয়ে প্রাচ্যবিদদের কলম থেমে নেই। ফিক্হশাস্ত্রের নানা বিষয়ে রচনা ও গবেষণাকর্ম নিয়ে তাঁরা হাজির হতে থাকেন একের পর এক। যেমনঃ- ঘড়ৎসধহ ঈধষফবৎ এর, ওংষধসরপ ঔঁৎরংঢ়ৎঁফবহব রহ ঃযব ঈষধংংরপধষ ঊৎধ, ঝঁংধহ অ. ঝঢ়বপঃড়ৎংশ এর, ডড়সবহ রহ ঈষধংংরপধষ ওংষধসরপ খধ:ি অ ঝঁৎাবু ড়ভ ঃযব ঝড়ঁৎপবং, ডধবষ ই. ঐধষষধয় এর, অহ ওহঃৎড়ফঁপঃরড়হ ঃড় ওংষধসরপ খধ,ি ঞরসঁৎ শঁৎধহ এর, ঞযব খড়হম উরাবৎমবহপব: ঐড়ি ওংষধসরপ খধি ঐবষফ ইধপশ ঃযব গরফফষব ঊধংঃ, চধংপধষব ঋড়ঁৎহরবৎ এর গঁংষরস গধৎৎরমব রহ ডবংঃবৎহ ঈড়ঁৎঃং ইত্যাদি’’। একাডেমিক গবেষণার ক্ষেত্রে নতুনরা প্রাচীনদের স্থলাভিষিক্ত হন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রাচ্যবিদগণ তাদের পূর্বসূরীদের সাথে দ্বিমতও পোষণ করেন।
ইসলামী আইন বিষয়ে প্রাচ্যবিদদের দৃষ্টিভঙ্গির যথার্থতা পর্যালোচনা : আধুনিক ইসলামী আইন ও ফিকহশাস্ত্রে প্রাচ্যবিদ শাখ্ত (ঔ.ঝপযধপযঃ)- এর ধারণা ও মতবাদ খুব বেশি আলোচিত। তার এসব ধারণা ও মতবাদ সম্পর্কে মুসলিম ফিক্হবিদ ও স্কলারদের অনেকেই আলোচনা-পর্যালোচনা করেছেন। অনেকে বৃদ্ধিবৃত্তিক তর্ক-বিতর্কও করেছেন। তাদের মধ্যে রিয়াদস্থ কিং সঊদ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মুস্তফা আল-আজমীর ভূমিকা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তিনি শাখতের ইসলামী শরীয়া আইনবিষয়ক গ্রন্থ সম্পর্কে বলেন, শাখতের (ঞযব ঙৎরমরহং ড়ভ গঁযধসসধফধহ ঔঁৎরংঢ়ৎঁফবহপব) শীর্ষক গ্রন্থটি ইসলামী শরীয়ার মূলোৎপাটন করার অপচেষ্টা করেছে। ইসলামী আইনের ইতিহাসকে পুরোদমে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছে। “ড. মুস্তফা আল-আজমী, মানাহিজুল মুস্তাশরিকীন ফিদ দিরাসাতিল আরবিয়্যাহ আল-ইসলামিয়্যাহ, তিউনিসিয়া: ইদারাতুস সাকাফা, ১৯৮৫ইং, খ. ১, পৃ. ৬৮”। শাখ্ত বলেছেন, উঁৎরহম ঃযব মৎবধঃবৎ ঢ়ধৎঃ ড়ভ ঃযব ভরৎংঃ পবহঃঁৎু- ওংষধসরপ খধি রহ ঃযব ঃবপযহরপধষ সবধহরহম ড়ভ ঃযব ঃবৎস-ফরফ হড়ঃ ধং ুবঃ বীরংঃ ধং যধফ নববহ ঃযব পধংব রহ ঃযব ঃরসব ড়ভ ঃযব ঢ়ৎড়ঢ়যবঃ. খধি ধং ংঁপয ভবষষ ড়ঁঃংরফব ঃযব ংঢ়যবৎব ড়ভ ৎবষরমরড়হ ধহফ ধং ভধৎ ধং ঃযবৎব বিৎব হড় ৎবষরমরড়ঁং ড়ৎ সড়ৎধষ ড়নলবপঃরড়হং ঃড় ংঢ়বপরভরপ ঃৎধহংধপঃরড়হ ড়ভ সড়ফবং ড়ভ নবযধারড়ঁৎ. ঞযব ঃবপযহরপধষ ধংঢ়বপঃং ড়ভ খধি বিৎব ধ সধঃঃবৎ ড়ভ রহফরভভবৎধহপব ঃড় ঃযব গঁংষরসং.
প্রথম শতাব্দীর বিরাট অংশে ইসলামী ফিকহের-পারিভাষিক অর্থে-কোনো অস্তিত্বই ছিল না। যেমনটি ছিল নবীর যুগে- আইন তথা শরীয়ত সেই অর্থে বলতে গেলে ধর্মের গন্ডির বাইরে ছিল। আচার-আচরণের ক্ষেত্রে সেখানে কোনো বিশেষ মামলায় ধর্মীয় কিংবা নৈতিক দিক দিয়ে কোনো আপত্তি ছিল না। সুতরাং আইনের বিষয়টা মুসলমানদের নিকট গুরুত্বহীন একটি বিষয় হিসেবে পরিগণিত ছিল।
এক প্রসঙ্গে শাখ্ত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আরো বলেন তার (ওহঃৎড়ফঁপঃরড়হ ঃড় ওংষধসরপ খধ)ি শীর্ষক গ্রন্থে (আরবী সংস্করণের ৩৪ তম পৃষ্ঠায়), ফিক্হ বিষয় কোনো একটি হাদীসকেও রাসূলুল্লাহ সা. এর নিকট থেকে বিশুদ্ধ উপায়ে বর্ণিত মেনে নেয়া কঠিন। “প্রাগুক্ত, পৃ. ৬৯”।
এভাবে প্রাচ্যবিদ শাখ্ত রাসূল (সা.)-এর ইসলামী আইন ও ফিকহবিষয়ক সকল হাদীস এবং তদসঙ্গে সাহাবায়ে কিরামের ইসলামী আইনবিষয়ক আমলগুলোকে অস্বীকার করে বসেন তার লেখা গ্রন্থে। “ঋড়ৎ ঃযব ষবমধষ ংঁনলবপঃ- সধঃঃবৎ রহ বধৎষু ওংষধস ফরফ হড়ঃ ঢ়ৎরসধৎরষু ফবৎরাব ভৎড়স ঃযব কড়ৎধহ ড়ৎ ভৎড়স ড়ঃযবৎ ঢ়ঁৎবষু ওংষধসরপ ংড়ঁৎপবং. খধি ষধু ঃড় ধ মৎবধঃ বীঃবহঃ ড়ঁঃংরফব ঃযব ংঢ়যবৎব ড়ভ ৎবষরমরড়হ, (ঙৎরমরহং, ঢ়ৎবভধপব)”
অথচ সেই গ্রন্থটি পশ্চিমা শিক্ষিত সমাজে অত্যন্ত সমাদৃত। “প্রাগুক্ত”। অন্যান্য প্রাচ্যবিদও শাখতের সেই ইসলামী আইনের মূলে কুঠারাঘাতকারী সত্যবিবর্জিত গ্রন্থের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। প্রফেসর ‘গিব’ (এরনন) বলেন, এ গ্রন্থটি ভবিষ্যতে ইসলামের সভ্যতা ও শরীয়া সম্পর্কে যে কোনো গবেষণার জন্য একটি ভিত্তি হিসেবে গণ্য হবে; অন্তত পশ্চিমা বিশ্বে তো বটেই। “ঐ.অ.জ. এরনন, ঔড়ঁৎহধষ ড়ভ ঈড়সঢ়ধৎধঃরাব খবমরংঃধঃরড়হ ধহফ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ খধ,ি ঠড়ষ. ৩৩, ঢ়. ১১৪. সূত্র মতে ড. মুস্তাফা আল-আজমী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৬৮”।
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়স্থ ইসলামী ফিকহের অধ্যাপক প্রাচ্যবিদ কোলসন তার স্তুতি গাইতে গিয়ে বলেন, নিশ্চয় শাখ্ত ইসলামী শরীয়ার মূলনীতি সম্পর্কে এমন এক ধারণা দিয়েছেন, যা ব্যাপক অর্থে অনস্বীকার্য। “ড. আব্দুল কাহার দাউদ আব্দুল্লাহ আল-আফী, আল-ইস্তিশরাক্ব ওয়াদ-দিরাসাতুল ইসলামিয়া, আম্মান-জর্দান : দারুল ফুরকান, ২০০১ইং, পৃ. ১৪৫”। (চলবে)