স্টাফ রিপোর্টার :
জৈন্তাপুরে সৎমাকে ‘দা’ দিয়ে কুপিয়ে হত্যার দায়ে এক ছেলেকে মৃত্যুদন্ডের (ফাঁসি) আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার সকালে সিলেটের বিশেষ দায়রা জজ (জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল) আদালতের বিচারক মোঃ মঈদুল ইসলাম এ চাঞ্চল্যকর রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি আদালত দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে আরো ১০ হাজার টাকা জরিমানারও আদেশ দেন। দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর নাম- ফয়জুর রহমান (২২)। সে জৈন্তাপুর থানার পানিছড়া গ্রামের ভ্যান চালক মোঃ আব্দুল খালিকের পুত্র। রায় ঘোষণার সময় দন্ডপ্রাপ্ত আসামী আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন না। ফয়জুর মূল থেকে পলাতক রয়েছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, জৈন্তাপুর থানার পানিছড়া গ্রামের তাহির আলীর পুত্র ভ্যান চালক মোঃ আব্দুল খালিক প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর শ্যালিকা মোচ্ছাঃ ছিদ্দিকা বেগম (৪০)কে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে ৪ ছেলে ও ২ মেয়ের সংসার ছিল। ফয়জুর রহমান ছিল বখাটে প্রকৃতির ও তাদের সংসারে দ্বিতীয় ছেলে। সে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ায় ছিদ্দিকা বেগম তাকে বার বার বাধা নিষেধ করলে সে বাধা নিষেধ না শুনে পারিবারের মাঝে অশান্তি সৃষ্টি করে আসছিল। গত ২০০৯ সালের ১২ মার্চ দিবাগত রাতে ফয়জুরের সাথে তার মা ছিদ্দিকা বেগমের ঝগড়াঝাটি হলে সে মাকে হত্যার হুমকি দেয়। পরদিন ১৩ মার্চ সকাল ৭ টার দিকে ছিদ্দিকা বেগম পার্শ্ববর্তী কান্দিগ্রাম হতে ছাগল বিক্রির ৫শ’ টাকা নিয়ে নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। তিনি পানিছড়া গ্রামের বাবুর সড়কের কাচা রাস্তার মাঝামাঝি স্থানে পৌছামাত্র পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা ফয়জুর রহমান পারিবারিক শক্রতার জের ধরে ‘দা’ দিয়ে মা ছিদ্দিকাকে এলোপাথাড়ি কুপাতে থাকে। এক পর্যায়ে ফয়জুর ছিদ্দিকাকে মাথায় আঘাত করলে তার মগজ বেরিয়ে আসলে ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান। অবস্থা বেগতি দেখে ফয়জুর এ সময় পালিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে জৈন্তাপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহত ছিদ্দিকার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় নিহত ছিদ্দিকার স্বামী মোঃ আব্দুল খালিক বাদি হয়ে একমাত্র সন্তান ফয়জুর রহমানকে আসামী করে জৈন্তাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। নং- ৬ (১৩-০৩-০৯)। দীর্ঘ তদন্ত শেষে একই বছরের ২৮ জুন জৈন্তাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ বাদশাহ আলম একমাত্র ফয়জুরকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। এবং আদালত ২০১১ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে এ মামলার বিচারকার্য শুরু করেন। দীর্ঘ শুনানী ও ১১ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত আসামী ফয়জুর রহমানকে ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাকে উল্লেখিত ফাঁসির দন্ডাদেশ প্রদান করেন।
রাষ্ট্র পক্ষে স্পেশাল পিপি এডভোকেট নওশাদ আহমদ চৌধুরী ও আসামী পক্ষে স্ট্রেট ডিফেন্স এডভোকেট মোঃ ফরিদ আহমদ মামলাটি পরিচালনা করেন।