তারেক রহমানের কারণেই ডুবছে বিএনপি

20

taraq_sayim_SM_banglanews24_654596721কাজিরবাজার ডেস্ক :
সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারণে বেহাল হয়ে পড়েছে বিএনপি। চিকিৎসার নামে টানা সাত বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করলেও বিএনপির রাজনীতিতে তিনিই নাটের গুরু। কিন্তু দলের সিনিয়র নেতাদের প্রতি অসম্মান, অন্য দল ও প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য এবং কর্মীদের ওপর প্রভূত্বের মানসিকতা তাকে পরিণত করেছে স্বেচ্ছাচারী ভিলেনে।
হাওয়া ভবনে তারই গড়ে তোলা ‘ছায়া সরকার’ এর ভূত যেমন এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বিএনপিকে, তেমনি তারেকের অনেক অপকর্মের দায়ও বর্তাচ্ছে খালেদা জিয়ার ওপর।
দলীয় সূত্র বলছে, তারেক রহমানের কারণেই প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নিজের ত্রাণ তহবিল থেকে টাকা সরিয়ে খালেদা জিয়া এখন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আসামি। তারেকের কারণেই যতো দুর্নাম হাওয়া ভবনের।
ছেলের এমন উদ্ধত আচরণ আর স্বেচ্ছাচারী মানসিকতাকে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন মা খালেদা জিয়াও। তারেকের কারণেই বার বার হোঁচট খাচ্ছে খালেদা জিয়ার আন্দোলন পরিচালনার চলমান সব পরিকল্পনা।
কোকোরে মৃত্যুর পর তারেকের ইশারাতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খালেদা জিয়ার দুয়ার থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিলো বলেও আলোচনা চালু আছে দলীয় পরিমণ্ডলে।
দলের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের নেতারা তাই ভীষণ ক্ষুব্ধ তারেক রহমানের ওপর। দলের অনেক সিনিয়র নেতা তারেক রহমানের কারণে এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠছে দলের ভেতর। চলমান আন্দোলনে নেতাকর্মীদের মাঠে নামতে অনীহার পেছনেও তারেক রহমানের স্বেচ্ছাচারকে দায়ী করছেন অনেক নিবেদিতপ্রাণ কর্মী।
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নাকি তার ‘গুণধর’ পুত্র তারেকই দল চালাচ্ছেন এ প্রশ্নটি হরহামেশাই উঠছে দলীয় পরিমণ্ডলের আলোচনাতেও।
সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার অনেক সিদ্ধান্তই আঙুলের ইশারায় উল্টে দিচ্ছেন তারেক রহমান। মূল দল বা অঙ্গ সংগঠনগুলোর কোনো নতুন কমিটির অনুমোদন মূলত তিনিই দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে তার আস্থাভাজন কেউ বা তার ঘনিষ্ঠজনদের পরিচিতদেরই বিভিন্ন দায়িত্ব ও পদ দখলের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। দল চলে যাচ্ছে অযোগ্যদের হাতে।
দলীয় সূত্র বলছে, সিনিয়রদের প্রতি অশ্রদ্ধা আর অসম্মানের লাগাতার নজির গড়ে দলের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করেছেন তারেক রহমানই। তার কারণেই ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় ঐক্যজোট ক্ষমতায় আসে বলে ধরে নিয়ে চরম অহমিকা দেখিয়ে ছেড়েছেন তিনি।
ওই দিনগুলোতে সিনিয়র নেতাদের ডেকে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখতেন হাওয়া ভবনে। স্রেফ নিজের ক্ষমতা জাহিরের জন্য ধমকেছেন আমলা, পুলিশ আর সেনা কর্মকর্তাদের। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতিও তার আচরণ ছিলো তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যে ভরা।
দলীয় সূত্র বলছে, ২০০৬ সালে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দু’তিন ঘণ্টা বসে থেকে ফিরে যাওয়ার পর অভিমানে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক সতীর্থ লে. জেনারেল (অব.) মীর শওকত আলী।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও হাওয়াভবনে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকেও ঘণ্টা দুই বসিয়ে রেখেছিলেন তারেক। এরপর বিদায় দিয়েছিলেন দায়সারা কথা বলে। আর হাওয়া ভবন থেকে বেরিয়ে গিয়ে অভিমানী এরশাদ বিএনপির সঙ্গে জোট গড়ার সব সম্ভাবনা জলাঞ্জলি দিয়ে গাঁটছড়া বাঁধেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে।
পরবর্তী সময়ে টালমাটাল তারেকের কর্মকাণ্ডে মড়ার ওপরে খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দেয় তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিভিন্ন সময়ের স্বার্থবাদী তৎপরতা।  তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে, সচিবালয়ে ফোন করে বড় বড় টেন্ডার আর চাকরির তদবির করতেন মামুন। কোনো মন্ত্রী  তার কথামতো কাজ না করলে বন্ধুর হয়ে ওই মন্ত্রীকে ধমক দিতেন তারেক। আমলাদের গণ্য করতেন ‘হাওয়া ভবন’ এর কর্মচারী হিসেবে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বিএনপির গড়ে তোলা সুসম্পর্ক নষ্ট করার জন্যও তারেককে দায়ী করেন দলেরই অনেক সিনিয়র নেতা।
তাদের মতে, দতারেকের পরিকল্পনায়’ আনা ১০ ট্রাক অস্ত্র চট্টগ্রামে ধরা পড়লেও তাতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ ছিলো বলে মনে করে ভারত। তাই পরবর্তী সময়ে তারা বিএনপিকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। তাছাড়া তারেকের পরামর্শে ঢাকায় তাইওয়ানের কনস্যুলার অফিস খোলার জের ধরে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় চীনের সঙ্গে।
সব মিলিয়ে তাই বিএনপির মূল সমস্যা এখন এই তারেক রহমানই। খালেদার ডাকে রাজপথে নামতে নেতাকর্মীরা প্রস্তুত থাকলেও তারেকের কারণেই সরে থাকেন রাজনীতির ময়দান থেকে।
সর্বশেষ চলমান আন্দোলন শুরুর আগেও সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু আন্দোলনের রূপরেখা তাদের কাছে ছিলো অজানা। কার্যত পরবর্তী সময়ে তারেকের ইশারাতেই সিনিয়র নেতাদের না জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষিত হতে থাকে।
ঘোষণাসর্বস্ব চলমান অবরোধ আর হরতাল কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের মাঠে না নামার পেছনেও তাই তারেকের স্বেচ্ছাচারকেই দায়ী করা হচ্ছে।