কাজিরবাজার ডেস্ক :
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করলেই দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, সংকট সমাধানের চাবিকাঠি ক্ষমতাসীনদের হাতে। তারাই এটা খুলে দিতে পারেন। আমি আশা করি তাদের শুভবুদ্ধি উদয় হবে। তারা বিদ্যমান সংকট উত্তরণে এগিয়ে আসবেন।
গতকাল শুক্রবার বিকালে গুলশানে রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।
বিএনপি জোটের চলমান আন্দোলন যৌক্তিক পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে তিনি নিষ্ক্রিয় নেতাদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সংসদের চলতি অধিবেশনে সংবিধান সংশোধন করে দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে খালেদা জিয়া আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী ৪৫তম স্বাধীনতা দিবস জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে পালন করবে।
চলমান আন্দোলনে নাশকতার দায় ক্ষমতাসীনদের ওপর চাপিয়ে এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
চলমান আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ রয়েছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, সরকার এই আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তিনি সরকারকে ক্ষুদে হিটলার হিসেবে অভিহিত করে মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
প্রায় ৪১ মিনিটের লিখিত বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, “চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কোনো নাগরিক সমঝোতার কথা বললেই ক্ষমতাসীনরা তাদের অসম্মান করছে, লাঞ্ছিত করছে। আমরা সমঝোতার্ জন্য সাত দফা দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা তা সঙ্গে সঙ্গে নাকচ করে দেয়। এজন্য আন্দোলন ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না। আমরা বাধ্য হয়ে আন্দোলন কর্মসূচি দিয়েছি।”
তিনি বলেন, “আপনারা জানেন, আমরা ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনের কর্মসূচি দিয়েছিলাম। ঢাকায় আমাদের সমাবেশ ছিল। ক্ষমতাসীনরা দুই দিন আগেই সারা দেশ কার্যত অচল করে দেয়। কর্মসূচির আগের রাতেই আমাকে এই কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে। পুলিশ কার্যালয়ের গেইটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। আমি সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশ্যে বের হতে চাইলে বাধা দেয়া হয়। শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করা হয়। এতে আমিসহ দলের নেতাকর্মী এবং সাংবাদিকরা আহত হন।”
দেশের বর্তমান সংকটকে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, “আওয়ামী লীগ একতরফা সিদ্ধান্তে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাদ করে দেয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সুযোগই তারা রাখেনি। মূলত দেশের সংকট এখানেই। ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে ঘৃণ্য কারসাজির মাধ্যেমে তারা ক্ষমতায় বসেছে। এ সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। মানুষে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে জনগণের পক্ষে কথা বলার তাদের কোনো অধিকার নেই।”
বিএনপি নেত্রী বলেন, “৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা বলেছিলেন এই নির্বাচন একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। নির্বাচনের পর পরবর্তী সময়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা হবে। তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্বাচন পরবর্তী এক বছরে আমরা কোনো কর্মসূচি দিইনি। কিন্তু তিনি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। আসলে প্রতিশ্রুতি রক্ষার ইতিহাস তাদের নেই।”
খালেদা বলেন, “বিরোধী মতকে দমন করে কার্যত একদলীয় শাসন কায়েম করেছে সরকার। সংবাদ মাধ্যম আজ নিয়ন্ত্রিত। আমাদের সংবাদ যেন প্রচার না করা হয় সেজন্য মিডিয়ার ওপর চাপ দেয়া হচ্ছে।”
বর্তমানে জনগণের আন্দোলন চলছে দাবি করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কোনো উদ্যোগ তারা নেয়নি। যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
তিনি বলেন, সাহসিকতার সঙ্গে সবাই অংশ নিলে এই আন্দোলন অচিরেই সফল হবে। বৃহত্তর স্বার্থে একটু কষ্ট স্বীকার করার অনুরোধ জানান খালেদা জিয়া।
খালেদা বলেন, “অবৈধ শাসকেরা আজ অনেক মায়ের বুক খালি করেছে। কে কখন গুম হয় তা নিয়ে সবাই আতঙ্কিত। আমাদের শত শত নেতাকর্মীকে তারা পঙ্গু করে দিয়েছে। এত কিছুর পরও যারা আন্দোলন করেছেন তাদের আমি সাধুবাদ জানাই। চলমান এই আন্দোলনে যে যেভাবে দুঃখ-কষ্ট সহ্য করছেন সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের প্রতি রইল আমার সমবেদনা। আল্লাহর রহমতে দিন বদল হলে আমরা অবশ্যই তাদের পাশে দাঁড়াবো।”
তিনি বলেন, “ক্ষমতা আমার কাছে বড় কিছু নয়। জনগণের ভালোবাসায় বারবার সিক্ত হয়েছি। এখন গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে লড়াই করছি। এই আন্দোলন কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তির নয়, কোনো দলের বিরুদ্ধে দলের নয়। এই আন্দোলন আদর্শের। এই আন্দোলন গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষের। তাই সবাইকে এই আন্দোলনে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাই।”
২০ দলীয় নেত্রী বলেন, “জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ খুলে রাখা হয়নি। তাই আমরা আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছি।”
অনতিবিলম্বে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধান দিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় এর পরিণতি শুভ হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
খালেদা জিয়া বলেন, “গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে তারা জঙ্গিবাদ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অথচ তাদের আমলেই জঙ্গিবাদের উৎপত্তি। আমরা জঙ্গিবাদ নির্মূল করেছিলাম। আমরা নিরপরাধ মানুষ হত্যার রাজনীতি করি না। আমরা এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।”
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, “দলীয় বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। ফলে তারা বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে দমন পীড়ন অব্যাহত রেখেছে।”
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, সাবেক আইজিপি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল কাইয়ুম, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার এবং শাইরুল কবীর খান উপস্থিত ছিলেন।