বিশ্ব শুনল বাঘের গর্জন ॥ কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ

101

tiger_win_bg_663827040স্পোর্টস ডেস্ক :
আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে…। বাংলাদেশীমাত্রই কান পাতলে এ গান শুনতে পাচ্ছেন। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার আনন্দ বাতাসে অনুরণিত হচ্ছে। স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের স্মৃতিবিজড়িত অ্যাডিলেড শহরেও বসন্ত লেগেছে। সিডনি, মেলবোর্ন, পার্থের সব সড়ক গতকাল মিশেছিল অ্যাডিলেডে। ফেনিল জনস্রোতে ভেসে গেছে ইংলিশদের সমর্থন। টাকডুম টাকডুম বেজেছে বাংলাদেশের ঢোল। নিস্তরঙ্গ টরেন্স নদীর জলেও ঢেউয়ের দোলা দিচ্ছিল। মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকার যেভাবে বল গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেছেন, তা দেখে কোলের শিশুরও আনন্দ হয়েছে। রুবেল হোসেনের মরাত্মক বোলিং লালবাতি জ্বেলে দিয়েছে ইংল্যান্ড শিবিরে। খেলায় উত্তেজনা না থাকলে আনন্দের স্বাদ কম থাকে। গতকালের ম্যাচে ব্যাটিং-বোলিংয়ের পরতে পরতে ছিল উত্তেজনা। ইমরুল কায়েস, তামিম ইকবাল ৮ রানে উইকেট দিলে চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকুর রহিম ১৪১ রানের জুটি গড়ে সেটাকে প্রশমিত করেন। ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা ৪ বা ৬ হাঁকালেই ঝাপটা বাতাস এসে বাঙালির আশার প্রদীপ নেভাতে চেষ্টা করেছে। রুবেল দ্বিতীয় স্পেলে এক ওভারে ১৩ রান দেয়ায় কান গরম হয়েছে দর্শকদের। ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের তখন জেগে ওঠার গান শোনাচ্ছিলেন বার্মি আর্মিরা। মাশরাফি বিন মুর্তজা শেষ দিকে কারও ওপরই ঠিক ভরসা করতে পারছিলেন না। যাকেই বোলিং দেয়া হচ্ছে, তাকেই মেরেকেটে একাকার করছে। শেষ ১২ বলে ১৬ রান করতে হবে ইংল্যান্ডকে। বাংলাদেশের তখন দরকার ২ উইকেট। ১৬ কোটি মানুষের চাপ নিয়ে বোলিংয়ে আসেন রুবেল। ওভারের প্রথম বলেই স্টুয়ার্ট ব্রডের অফ-স্টাম্প উড়িয়ে দেন। অ্যান্ডারসন দ্বিতীয় বলটা ঠেকাতে পারলেও ঝলসে গেলেন পরের বলে।
খুনে বোলিং দিয়ে তামিম-ইমরুলের উইকেট শিকার করেছিলেন অ্যান্ডারসন। চোখ রাঙিয়েছেন ব্রড। প্রথম থেকেই ইংলিশ পেসারদের রক্তচক্ষু পিপাসার্ত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় তারা শান্ত হয়েছেন। সে বোলারদের রুবেলইবা ছাড় দেবেন কেন! ছাড়েননি তো; খুনে মেজাজ দেখিয়েছেন রুবেলও। তার দুটো স্পেলে ইংলিশ ব্যাটিং ধসে গেছে। মাশরাফির এক স্পেলে খোঁড়া হয়েছে ব্যাটিংদৈত্যরা। এক সময়ের কলোনি রাষ্ট্রের কাছেই হেরেছে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপ থেকে তাদের বিদায় নিশ্চিত করেছেন মাশরাফিরা। তারা আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা খেলবেন নিয়ম রক্ষায়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলবে পয়েন্ট নেয়ার জন্য।
অ্যাডিলেড ওভালের ড্রপ ইন পিচ রানের ডিপো। ইংলিশ বোলারদের মোকাবিলা করে ৭ উইকেটে ২৭৫ রান করে বাংলাদেশ। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করেন মাহমুদউল্লাহ। সাতটি ৪ ও দুইটি ৬ দিয়ে ১৩৮ বলে ১০৩ রান করেন ২৯ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান। সেঞ্চুরিটাকে ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন বলে দাবি করছেন মাহমুদউল্লাহ। তিনি স্ত্রী ও ছেলেকে উৎসর্গ করেছেন সেঞ্চুরিটা। তার সেঞ্চুরি ইনিংসে দুটো বড় জুটি রয়েছে। সৌম্য সরকারের সঙ্গে ৮৬, মুশফিককে নিয়ে ১৪১ রান। দুই ভায়রার জুটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা আর পঞ্চম উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মুশফিক-সাকিবের ১৪৪ রান প্রথম। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন মুশফিক। চারটি ম্যাচ খেলে তিনটিতেই হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি। গতকালেরটা সেঞ্চুরি হতে পারত। দুর্ভাগ্যক্রমে ৮৯ রানে আউট হয়ে গেছেন। সৌম্য উন্নতি ধরে রেখে ৫২ বলে ৪০ রান করেছেন। অ্যান্ডারসন এবং জর্ডান দুটি করে উইকেট শিকার করেন।
উইকেটে বোলারদের জন্যও কিছু সুবিধা ছিল। রুবেলরা তা কাজে লাগাতে ভুল করেননি। তীব্র বিতর্ক পেছনে ফেলে আসা বাগেরহাটের এ পেসার ৪ উইকেট ফেলেছেন। সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদউল্লাহ ম্যাচসেরা হলেও জয়ের নায়ক কিন্তু রুবেল। ৪৯তম ওভারে ৩ বলে তিনি ২ উইকেট না নিলে কী যে হতো, কে জানে- তা মাশরাফিও জানতেন না। তারপরও তামিম ক্রিস ওয়েকের ক্যাচ ফেলে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন। উত্তেজনার পারদ চড়ালেও শেষ হাসিটা বাংলাদেশের খেলোয়াড়রাই হেসেছেন। জয়ের আনন্দে তারা ছুটে গেছেন দর্শকের কাছে। বিশ্ব শুনেছে বাঘের গর্জন। ড্রেসিংরুমের সামনে খেলোয়াড় কোচ, কর্মকর্তা- সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়েছিলেন। সে আনন্দ অ্যাডিলেড ওভাল থেকে বিচ্ছুরিত হয়েছে ঢাকার রাজপথে-পথে।
টানা ২ বিশ্বকাপে ইংলিশদের হারাল বাংলাদেশ। সব মিলে তৃতীয়বার। ইংল্যান্ডকে দিয়েই বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে টানা তিন ম্যাচ জয়ের রেকর্ডও হলো। ৫ ম্যাচে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৭। টেবিলে নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার পরেই এখন বাংলাদেশের স্থান। স্বপ্নের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের সঙ্গে টাইগারদের খেলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।