গোলাপগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
গোলাপগঞ্জে কথিত ধর্মস্থ বোন আয়শা ও কামরুলের অ-সামাজিক-অনৈতিক কর্মকান্ডের দৃশ্য দেখে ফেলায় পুলিশের চোখের সামনেই প্রাণ দিতে হলো দুবাই প্রবাসী রুবেল আহমদ ও ফানু মিয়া নামের দুই ভাইকে। নিহতরা হলেন লামা মেহেরপুর গ্রামের মুহিবুর রহমানের ছেলে। অবশ্য গ্রামবাসীর সহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত ঘাতকদের গ্রেফতার করে গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ। এ ঘটনায় গোলাপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে গোলাপগঞ্জ থানার মামলা নং ০৯ (১৪-০২-২০১৫) ইং। তবে নিহতদের পরিবারের অভিযোগ খুনিদের রক্ষায় একটি চক্র তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে শংঙ্কায় রয়েছে নিহতের স্বজনরা। থানায় দায়ের করা মামলা এবং গ্রামবাসীসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, গোলাপগঞ্জ উপজেলার লামা মেহেরপুর গ্রামের মৃত ফারুক মিয়ার বখাটে ছেলে কামরুল ইসলাম (২২) দীর্ঘ দিন থেকে এলাকায় একের পর এক কুকর্ম করে আসছিল, তার অত্যাচারে শান্তিতে ছিলনা গ্রামের যুবতি মেয়ে থেকে শুরু করে আশপাশ গ্রামের স্কুল-কলেজ পড়–য়া মেয়েরা। প্রায়ই স্কুলে আসা মেয়েদের উত্যক্ত করার পাশাপাশি কু-প্রস্তাব দিয়ে নাজেহাল করতো সে এক সময় তার নিকট আত্মীয় রানু মিয়ার স্ত্রী আয়শা বেগমের সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে উঠে কামরুলের। লোক সমাজে সে আয়শাকে ধর্মস্থ বোন পরিচয় দিলেও প্রায়ই লিপ্ত হতো কু-কর্মে। এক পর্যায়ে আয়শা আর কামরুলকে অসামাজিক কার্য-কলাপরত অবস্থায় দেখে ফেলেন কামরুলের প্রতিবেশী মুহিবুর রহমানের পুত্রবধূ নাছিমা বেগম ও তার দেবর রুবেল আহমদ। আয়শা নিহত রুবেল ও ফানু মিয়ার সৎ ভাইয়ের স্ত্রী হওয়ায় বিষয়টি অবগত করা হয় বখাটে রুবেলের মা মনোয়ারা বেগমকে। তিনি কোন ন্যায় বিচার না করে ছেলের অনৈতিক কাজে সায় দেন। এর আগেও গ্রামবাসী বখাটে কামরুলে বখাটেপনায় অতিষ্ঠ হয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠকে বসে শুধরাতে পারেননি কামরুলকে। শেষ অবধি গত ১২ ফেব্র“য়ারী বিকেল অনুমান ৩টার দিকে কামরুল ও আয়শা নিহত রুবেলের বসত ঘরের সামনে এসে অকথ্য ভাষায় বকাঝকা করতে থাকে। অসহায় প্রবাসী রুবেলের পরিবার নিরীহ হওয়ায় কোন প্রতিবাদ করেন নি। কামরুলের মায়ের কাছে আবারও বিচারপ্রার্থী হলে কামরুল ও আয়শা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে রুবেলের পরিবারের সদস্যদের উপর। পরিকল্পিত ভাবে দেশীয় অস্ত্র সুলপি, দা সহ হামলা করে রুবেলও ফানুর বসত ঘরে। ঘরের ভিতর প্রবেশ করতে না পেরে দরজা-জানালা ভাংচুর করে তারা। সে সময় প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসলে তাদের উপর চড়াও হয় কামরুল। বাধ্য হয়ে বিষয়টি ফানু মিয়া স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে জানালে রাত অনুমান পৌনে ১১টায় ঘটনাস্থলে আসেন স্থানীয় ফাঁড়ির এএসআই মোত্তালেব ও এক কনষ্টেবল। পুলিশ আসার খবরে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বখাটে কামরুল ও তার সহযোগীরা। তারা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজও করে। এক পর্যায়ে কামরুল ঘর থেকে বের হয়ে আসলে তদন্তের জন্য রুবেলকে ঘর থেকে ডেকে বের করেন তারা। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই দেশীয় অস্ত্র ছুলপি দিয়ে রুবেলকে উপর্যপুরি আঘাত করে কামরুলসহ তার সহযোগীরা। ফলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় রুবেল। ভাইয়ের উপর হামলার দৃশ্য দেখে তাকে রক্ষার জন্য বড়ভাই ফানু মিয়া এগিয়ে আসলে তাকেও দা-ছুলফি দিয়ে একইভাবে আক্রমণ করে ঘাতকরা। এ দৃশ্য দেখে পালিয়ে যায় পুলিশ, খবর পেয়ে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রুবেলকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায় এবং ফানুকে মারাত্মক আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এক পর্যায়ে ফানুর অবস্থা খারাপ হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৮ টায় মারা যান ফানু মিয়া। এবং সোমবার জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক ভাবে দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের কলেজ পড়–য়া বোন নাজিরা বেগম বাদী হয়ে ফারুক মিয়ার ছেলে ঘাতক বখাটে কামরুল ইসলাম, মুহিবুর রহমানের ছেলে রানু মিয়া, ঘাতক কামরুলের মা হত্যায় সহযোগী ফারুক মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ও রানু মিয়ার স্ত্রী কামরুলের পরকিয়ার নায়িকা আয়শা বেগম, ঘাতক কামরুলের ভাই রুহুল আমিনসহ আরো অজ্ঞাত নামা ২/৩জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ঘাতক ৫জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে। অপর দিকে ফানু মিয়া মারা যাওয়ায় পিতা মুহিবুর রহমান বাদী হয়ে থানায় আরেকটি এজাহার দায়ের করেন। এ দিকে স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা তাদের স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনরা আর বোন নাজিরা ভাইদের হারিয়ে এখন বেহুশ অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এঘটনায় গোলাপগঞ্জ সার্কেল অফিসার মোঃ সুমন মিয়া জানান, ঘাতকদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ তবে কেউ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কোন ফায়দা লুটার চেষ্টা করতে পারবে না, পুলিশ এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। থানার ওসি শিবলী জানান, ঘাতকদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং পুলিশ একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আসামীদের কোন অবস্থায় ছাড় দেওয়া হবে না। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা মিজান জানান, মামলাটি তদন্তাধিন রয়েছে ঘাতকদের গ্রেফতার করা হয়েছে, আরো কেউ জড়িত থাকলে তাকে ও গ্রেফতার করা হবে।