নানা সমস্যায় জর্জরিত জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

123

potoমোঃ শাহজাহান মিয়া, জগন্নাথপুর থেকে :
লোকবল সংকট ও যান্ত্রিক ত্র“টিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এতো সব সমস্যার মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশের মানোন্নয়ন হয়েছে। প্রতিদিন জগন্নাথপুর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শতশত রোগী জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসকরা এসব রোগীদের ব্যবস্থাপত্র প্রদানসহ প্রয়োজনীয় সরকারি ওষুধ দিয়ে থাকেন। যে সব ওষুধ তাদের কাছে থাকে না, সে সব ওষুধ বাহিরের ফার্মেসি থেকে কিনে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। এর মধ্যে জটিল রোগীদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তিসহ সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩২ জন রোগীকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাদেরকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবাসহ উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। রোগীদের মানষিক অবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে কমপ্লেক্স বাউন্ডারির ভেতরে ফুলের বাগানসহ বিভিন্নভাবে পরিবেশের উন্নয়ন করা হয়েছে। সরকারি কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ পর্যন্ত মাতৃ স্বাস্থ্য ভাউচার স্কীমের আওয়তায় মোট ৬১০ জন দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী মহিলাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানসহ আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। উপজেলায় মোট ২১৬ টি টিকাদান কেন্দ্র চালু আছে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় এসব কেন্দ্র থেকে শিশুদের ৮ টি রোগ প্রতিরোধের জন্য টিকা প্রদান করা হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশের মানোন্নয়ন হলেও সমস্যা যেন পিছু ছাড়ছে না।
জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলার প্রায় ৪ লক্ষ জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রতিনিয়িত জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে ৫টি সাব-সেন্টার ও ২৪ টি কমিউনিটি ক্লিনিক কাজ করছে। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ২১ জন চিকিৎক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১৪ জন। নাসিং ষ্টাফ ১৬ জন থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৫ জন। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ১০৫ জন থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৭৩ জন। চতুর্থ শ্রেণীর ষ্টাফ ২৯ জন থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১০ জন। বিগত প্রায় এক বছর ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র এ্যাম্বুলেন্সটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। এ্যাম্বুলেন্সটি বিকল থাকার কারণে সিলেটে রেফার্ড করা রোগীদের ভোগান্তি চরমে পৌছেছে। রেফার্ডকৃত জটিল রোগীদের দ্রুত সার্ভিস প্রদানের লক্ষ্যে একটি নতুন এ্যাম্বুলেন্স জরুরী হয়ে পড়েছে। বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে এক্সরে মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। একটি এক্সরে মেশিনের অভাবে রোগীরা বিপাকে পড়েছেন। তাদেরকে বাধ্য হয়ে অন্যত্র গিয়ে এক্সরে পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। এতে রোগীরা নানাভাবে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এছাড়া জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধীনে উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের কামারখাল, মিরপুর ইউনিয়নের হাসান-ফাতেমাপুর, সৈয়দপুর-শাহারপাড়া ইউনিয়নের বুধরাইল, আশারকান্দি ইউনিয়নের জহিরপুর ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের বাংলাবাজারে অবস্থিত মোট ৫ টি সাব-সেন্টার কাজ করছে। এই ৫ টি সাব-সেন্টারে মোট ৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৪ জন। তবে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর অবস্থা খুবই ভাল। জনগণের দুরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দিতে পৌরসভা ব্যতীত উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ৩ টি করে ৮ টি ইউনিয়নে মোট ২৪ টি কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। ক্লিনিকগুলোতে ২৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও ২৩ জন রয়েছেন। এসব ক্লিনিকগুলোতে চিৎিসকরা রোগীদের মোট ৩০ ধরনের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। জটিল রোগী হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেফার্ড করা হয়। এভাবেই চলছে জগন্নাথপুর উপজেলার প্রায় ৪ লক্ষ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা।
জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এসএম আব্দুল হাকিম জানান, জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত সরকারের এমবিজি ফোর এন্ড ফাইভ বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। লোকবল সংকট ও যান্ত্রিকত্র“টি সংক্রান্ত সমস্যার বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি এসব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। এসব সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে আমরা শতভাগ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারবো।