স্টাফ রিপোর্টার :
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করুন জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন করবেন না। জনগণ ক্ষেপলে অবস্থা কিন্তু খুব খারাপ হবে। শেখ হাসিনা বলেন, উনি (খালেদা) অবরোধ ডাকেন, কে মানে তার অবরোধ? অবরোধ দিয়ে অফিসে বসে থেকে আন্দোলন করেন বিএনপি নেত্রী। তার অবরোধে জনগণ সম্পৃক্ত হয় না। এটাই হলো বাস্তবতা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ নন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উনি ঘরে যেতে চান যাবেন, বাধা দেয়া হবে না। উনি উনার অফিসে কেন? ঘর থেকে অফিসে কেন? অবশ্য এটা উনার পুরনো অভ্যাস। মাঝেমধ্যেই উনি ঘর থেকে ছেড়ে পালিয়ে যান। আগেও তিনি এটা করেছেন। উনি বলেন, অবরুদ্ধ। তাকে কে অবরুদ্ধ করে রেখেছে? উনি বাড়িতে চলে যাক না, কে ওনাকে বাধা দিয়েছে। উনি তো নিজেই ওখান থেকে যাচ্ছেন না। ওনাদের সমর্থিত একটি পত্রিকায় আমি পড়েছি। এর মধ্যে গদি পছন্দ হয়নি বলেও দুবার পরিববর্তনও করেছেন। উনি বড়িতে যাবেন কেন, মাগনা মাগনা খাবার পাচ্ছেন ওখানেই তো থাকবেন। খালেদা জিয়াকে সন্ত্রাসীর রানী, জঙ্গিবাদের রানী, দুর্নীতির রানী আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি হাওয়া ভবন খুলে দুর্নীতি করে সে টাকা বিদেশে পাচার করেছে। খুন করা হয়েছে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের। তিনি ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। হাওয়া ভবন প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, হাওয়া ভবন শুধু দুর্নীতির আখড়া নয়, মানুষকে ধরে নিয়ে এসে হত্যা, নির্যাতন, গুম সবই চলেছে সেখানে। হাওয়া ভবনের আতঙ্কে মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য পর্যন্ত বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তিনি বলেন, যেমন মা তেমন বেটা। দুজনই জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছেন। নির্বাচন করেননি এটা বিএনপি নেত্রীর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। বাংলার মানুষকে কেন তার ফল ভোগ করতে হবে। মানুষের নিরাপত্তার জন্য যা যা করার দরকার সবই করবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হজের পর মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা। সেই ইজতেমার সময়ও তিনি আন্দোলন করছেন। তাদের ইসলামের প্রতি এতো দরদ তবু অবরোধ চালিয়েছেন। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই যাদের সহযোগিতায় অবরোধ ইজতেমায় কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী এখন জামায়াতকে সাথে নিয়ে দেশে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন। মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছেন। চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জানেন তিনি দুর্নীতির রানী, জঙ্গিবাদের রানী, তার কথায় কেউ মাঠে নামবে না। হরতালে যারা নাশকতা করে, জ্বালাও-পোড়াও করে তাদের রুখে দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি কোথাও নাশকতা করতে চায় তাহলে তাদের পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিন। নাশকতা রুখতে যা করা লাগে আমরা তাই করবো। কি স্বপ্নে বিভোর, কোন স্বপ্নে বিভোর? সেটা উনিই জানেন। জামায়াতকে সাথে নিয়ে উনি মানুষ খুন করবেন, এটা হতে দেয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধারপরাধী দল হিসেবে জামায়াত নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে না পারায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না এসে বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে নারকীয় হত্যাকা- চালিয়েছে। বিএনপি নেত্রী তার দোসর যুদ্ধাপরাধীদের ছাড়া চলতে পারেন না। জামায়াতকে ছাড়া তিনি (খালেদা জিয়া) নির্বাচনে আসবেন না, তিনি জানতেন নির্বাচনে এলে ভরাডুবি হবে। এরপর নির্বাচন বানচাল করতে মানুষ খুন করা শুরু করলেন। কোরআন পুড়িয়েছেন, শত শত মানুষ হত্যা করেছেন। পরাজিত শত্তির পদলেহন না করলে বিএনপি নেত্রী শক্তি পান না। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে হাওয়া ভবনে ভাগ না দিয়ে এ দেশে কেউ ব্যবসা করতে পারেনি। তাদের দুর্নীতি সব দেশকে বিপদে ফেলে দেয়।
এ সুযোগ নিয়ে ইমার্জেন্সি সরকার আসে। ২০০৮-এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারেন, চাকরিজীবীরা চাকরি করতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেখ হাসিনার সোমবার বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে তার বক্তব্য শুরু করেন। সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় তিনি মঞ্চে উঠেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ শুরু হয়। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মতিয়া চৌধুরী, শেখ সেলিম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাউসার, কৃষক লীগের সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন মোল্লা, শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুন্নেছা মোশাররফ, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার বক্তব্য রাখেন। তারা বিএনপির প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, তাদের সহিংস আন্দোলন প্রতিহত করা হবে। রাজপথে থেকে তাদের মোকাবিলা করা হবে।
দেশের মাটিতে বিএনপি-জামায়াতের কোনো সহিংস কার্যক্রম চলতে দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা। সমাবেশ শুরুর আগে সোহরাওয়ার্দীর প্রবেশপথ সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান অনুষদের সামনে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক দেখা যায়। সমাবেশে যোগ দিতে দুপুর থেকেই যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন। তাদের মিছিলের কারণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা যায়। হরতাল আর অবরোধের মধ্যে গাড়ির স্বল্পতায় দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। এর আগে, সোমবার সকালে সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। দলটির দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এমন দাবি করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক আদেশে সোমবার সকালে ঢাকায় সভা-সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। ডিএমপির ওয়েবসাইটে এমন তথ্য দেয়া হয়েছে।