শাহ আলম শামীম, কুলাউড়া থেকে :
কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। গত ৫ জানুয়ারি থেকে দেশের শান্তিপ্রিয় এলাকা হিসেবে পরিচিত কুলাউড়া যেন আতঙ্কের নগরী। একটি পুলিশ এসল্ট ও দুটি নাশকতার মামলায় আড়াই শতাধিক বিএনপি জামায়াত নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়। এখন কুলাউড়ায় রাত নামে যৌথবাহিনীর অভিযান আর গ্রেফতার আতঙ্কে।
দেশের শান্তিপ্রিয় ও রাজনৈতিক সহিষ্ণু উপজেলা হিসেবে কুলাউড়ার একটি আলাদা পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতে হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে কুলাউড়া। গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি’র কালো পতাকা মিছিল থেকে পুলিশের উপর হামলা চালানোর অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় ২৯ জনের নামোল্লেখ করে এবং দেড়শ অজ্ঞাতনামা নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এরপর ৮ জানুয়ারি ভোর রাত সাড়ে তিনটায় কুলাউড়ার মনু-টিলাগাঁও রেল ষ্টেশনের মধ্যবর্তীস্থানে আন্ত:নগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জন নেতাকর্মীকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়। সর্বশেষ গত ১০ জানুয়ারি কুলাউড়া-মৌলভীবাজার সড়কের ডুলিপাড়া নামকস্থানে একটি বাস পুড়ানোর ঘটনায় ১৫ জনের নামোল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়।
পুলিশ জানায়, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা এক যোগে শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে উপজেলার বিভিন্নস্থানে বিরোধীদলের নেতাকর্মীর বাড়ীতে গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান চালায়। সন্ধ্যার পর সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি এমএম শাহীনের বাসায় দু’দফা, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবেদ রাজার বাড়িতে, উপজেলা বিএনপির সাবেক সম্পাদক ও কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি বদরুজ্জামান সজল, জামায়াত নেতা আব্দুল বারি মাস্টারের বাড়ীতে অভিযান চালায়। সাবকে এমপি এমএ শাহীন, এডভোকেট আবেদ রাজা ও বদরুজ্জামান সজল বাসায় না থাকার আটক করতে পারেনি যৌথবাহিনী। যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা বাড়ি ছাড়া। শীর্ষ নেতারা গা ঢাকা দিয়েছেন। মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বেশিরভাগ নেতার। ফলে ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধের প্রভাব কোথায়ও নেই। শুধু বাস ছাড়া সিএনজি অটোরিক্সা ও পিকআপ চলাচল করছে। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে হলেও মানুষ তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে পৌছতে পারছে। সন্ধ্যা হলেই শহর থেকে শুরু করে গ্রামীণ হাটবাজারগুলো ফাঁকা হয়ে যায়।
যৌথ বাহিনীর অভিযানে কুলাউড়া উপজেলা জামায়াতের আমীর মাস্টার আব্দুল বারী (৫৮), বিএনপি নেতা ও সাবেক মেম্বার জয়নাল জয়নাল আবেদিন খান (৫৫), জামায়াত নেতা ডা: মবশ্বির আলী (৫০), ছাত্রশিবিরের নেতা তাজুল ইসলাম তুহিন (২৩) ও নজরুল ইসলাম (২৫) এবং বিএনপি কর্মী মোখলেছুর রহমান (৩২)। এনিয়ে মোট ১১ জন বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
কুলাউড়া থানা অফিসার ইনচার্জ অমল কুমার ধর আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, যেকোন নাশকতা মোকাবেলায় ও সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তৎপর রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি যৌথবাহিনীও অভিযানে অংশ নিচ্ছে।