টানা অবরোধে গোয়াইনঘাটের পাথর রাজ্যে হাহাকার, জনজীবন স্থবির

28

গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতা :
ভাই নির্দলীয় আর দলীয় বুঝিনা। কিভাবে নির্বাচন হবে এটা নিয়েও মাথা ব্যথা নেই আমাদের। আমরা হরতাল চাই না চাইনা অবরোধও। আমরা সাধারণ মানুষ খেটে খাওয়া শ্রমিক। কোন রকম কাজ কর্ম করে দু-বেলা দু-মুঠো খেতে পারলে আমাদের আর কিছুর দরকার নেই। হতাশাগ্রস্ত মন নিয়ে এমনটাই বলছিলেন সিলেটের জাফলং পাথর কোয়ারীতে কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসা শ্রমিক শুকুর আলী, ইসমাইল হোসেন ও আফিয়া বেগম। ৫ই জানুয়ারী গণতন্ত্র হত্যাদিবস উল্যেখ করে ২০ দলীয় জোট কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি ও সমাবেশের ডাক দেয়। কিন্তু বর্তমান সরকারের ১৪ দলীয় মহজোট গণতন্ত্র রক্ষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির ডাক দিলে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় ডাকা শহরে সকল প্রকার সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করে আইনসৃঙ্খলা বাহিনী। ঐ দিন বিকেলে গুলশানের কার্যালয়ে নিজেকে অবরুদ্ধ দাবীকরে বেগম খালেদা জিয়া বলেন বর্তমান সরকার আমাকে অবরুদ্ধকরে সমাবেশে যেতে বাধা প্রধান করছেন, সাধারণ জনগণ নয় আমার জীবনের জন্য সরকারই বড় হুমকি। বেগম জিয়া আরও বলেন আজ আমাদের শান্তিপূর্ণ কালো পতাকা কর্মসূচি ও সমাবেশ ছিল। সমাবেশ করতে দেওয়া হয় নাই। এ জন্য পরবর্তী কর্মসূচি না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে। এই ঘোষণার পর (সোমবার বিকেল) থেকে টানা দিন রাতের অবরোধ কর্মসূচি চলছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা ৪দিনের অবরোধের কারণে স্থবির হয়ে  পড়েছে জনজীবন।
অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ শ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষ। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম ও ব্যাহত হচ্ছে অবরোধের  কারণে। সীমান্ত জনপদ গোয়াইনঘাটের পাথর রাজ্য বিছনাকান্দি ও জাফলং পাথর কোয়ারীতে হাহাকার বিরাজ করছে। পাশাপাশি তামাবিল শুল্ক ষ্টেশনের আমদানী রপ্তানী কার্যক্রমেও ক্রমশই ভাটা পড়ছে। পাশাপাশি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ডাকা লাগাতর রাত-দিনের অবরোধের কারণে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েই চলছে। আর এই টানা ৪ দিনের টানা অবরোধের কারণে গোয়াইনঘাটের বৃহত বিছনাকান্দি ও জাফলং পাথর কোয়ারীতে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থার। কোয়ারী থেকে উত্তোলিত পাথরের দাম নেমে এসেছে অর্ধেকে। কোয়ারী এলাকায় অবরোধের প্রভাব পড়ায় কোটি কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষয়তির সম্মুখীন কোয়ারী সংশ্লি¬ষ্ট ব্যবসায়ী ও তামাবিল শুল্ক ষ্টেশনের আমদানী কারকরা। পাশাপাশি বৃহৎ এ দুটি পাথর কোয়ারী ও তামাবিল শুল্ক ষ্টেশনের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিকের কোয়ারী ও শুল্ক ষ্টেশন এলাকায় কাজ না থাকায় অনেকটা অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাবন করতে হচ্ছে। অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের উৎস পাথর রাজ্য দুটিতে চলছে হাহাকার। বিপাকে রয়েছেন কোয়ারী সংশ্লি¬ষ্ট প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক, পাথর ব্যবসায়ী, মিল মালিক এবং ট্রাক শ্রমিক। কোয়ারী এলাকায় এখন প্রায় সুনসান নীরবতা। এর প্রভাব পুরো উপজেলাতেই বিরাজ করছে। অপর দিকে অবরোধের অজুহাতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রব্যর দাম দ্বিগুন হারে বাড়িয়ে দিয়েছেন সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা। সাধারণ শ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রব্যের মূল্য। এদিকে টানা অবরোধের কারনে উপজেলার জাফলং, বিছনাকান্দি, পান্তুমাই ও রাতারগুল সোয়াম ফরেষ্ট একেবারেই পর্যটক শূন্য। পর্যটন কেন্দ্রগুলো পর্যটক শূন্য হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও ব্যাবসায়ী শাহজাহান সিরাজ বলেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটসহ বিভিন্ন রানৈতিক দলের আহূত লাগাতর অবরোধের কারণে ব্যবসায়ীরা কোয়ারী থেকে উত্তোলিত পাথর বিক্রয় বা সরবরাহ করতে পারছেনা। ফলে পাথর উত্তোলনের সাথে সংশ্লি¬ষ্ট শ্রমিকদের মজুরী প্রদান করতে পারছেন না। যার ফলে কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন প্রায় বন্ধ রয়েছে। আর পাথর কোয়ারী বন্ধ থাকার কারণে কোয়ারী সংশি¬ষ্ট শ্রমিক, পাথর ব্যবসায়ী, মিল মালিক, ট্রাক মালিক এবং ট্রাক শ্রমিকসহ সকলেই দিশেহারা।