হবিগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাকে বিভক্তকারী এক সময়ের প্রমত্তা সোনাই নদী এখন মরে যাওয়ার পথে। টলটলে জলে সাতার কাটা আর নৌকা দিয়ে বাজারে যাওয়া বয়স্ক লোকজন এখন পায়ে হেঁটেই পার হচ্ছেন নদী। যে নদীকে কেন্দ্র করে উভয় পার্শ্বের জমিগুলো ছিল সুজলা-সুফলা এবং শস্য শ্যামলা এখন সেগুলো রয়েছে হুমকির মুখে। আর এই হুমকি কোন প্রাকৃতিক সৃষ্ট নয়। নদীর বুকে স্থাপনা নির্মাণ করার ফলেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রায় ৫ বছর পূর্বে মাধবপুর উপজেলার সায়হাম গ্র“প সোনাই নদীর ব্রীজের পার্শ্বে নদীর ভিতরেই শুরু করে সায়হাম ফিউচার কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ। এ নিয়ে বাপাসহ বিভিন্ন সংগঠন শুরু করে আন্দোলন। বাপা নির্মাণাধীন কমপ্লেক্সের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করে।
ব্যাপক আন্দোলনের মুখে সায়হাম ফিউচার কমপ্লেক্সের কাজে স্থবিরতা দেখা দেয়। সম্প্রতি কাজের গতি আবারও বাড়লে বিষয়টি নিয়ে নদী কমিশনে অভিযোগ উত্থাপন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা।
বাপা’র অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নদী কমিশনের একটি উচ্চপদস্থ দল বুধবার দুপুরে সোনাই নদী ও নির্মাণাধীন স্থাপনা পরিদর্শন করে। বাংলাদেশ নদী কমিশনের চেয়ারম্যান আতাহারুল ইসলাম এর নেতৃত্বে কমিটিতে ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব রফিউল আলম, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ড. আফজাল হোসেন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব নুর-উর রহমান, বিআইডব্লিউটি এর উপ-পরিচালক সাদেকুল ইসলাম এবং তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদীন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব শফিউল আলম, সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, বাপা কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল ও সদস্য হাবিবুর রহমান।
তদন্ত দল নদীর দু’পাশের লোকজনের সাথে কথা বলেন। এ সময় স্থানীয়রা জানান, এক সময় নদীতে ছিল টলমলে জল। লোকজন নদী দিয়ে নৌকায় করে মালামাল নিয়ে আসত। সাঁতার কাটা এবং মাছ শিকারের পাশাপাশি নদীর পানি দিয়ে চলত কৃষির কাজ। এখন নদীর বিভিন্ন জায়গায় দখল ও পলি পড়ে নাব্যতা হারানোতে পায়ে হেঁটেই নদী পার হওয়া যায়। লোকজন আবারও নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
তদন্ত কমিটি নদীর বিভিন্ন স্থানে মাপ জোক করে। তারা সায়হাম ফিউচার কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষকে তদন্ত কমিটির কাছে দলিলাদি উপস্থাপনের জন্য বলেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও বাংলাদেশ নদী কমিশনের চেয়ারম্যান আতাহারুল ইসলাম জানান, আমার সরজমিনে তদন্ত করছি। যারা এখানে নির্মাণ কাজ করছেন তাদেরকে কাগজপত্র উপস্থাপনের জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি সবগুলো বিষয় পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। ২৫ জানুয়ারির মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে তিনি জানান।
তদন্তকালে সায়হাম ফিউচার কমপ্লেক্সের পরিচালক ও মাধবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, যেখানে সায়হাম ফিউচার কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে তা আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। কাগজপত্রও সঠিক আছে। এর আগেও জেলা প্রশাসন ৪/৫ বার মাপ-ঝোক করে দেখেছে আমাদের জায়গায়ই নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। এখন পরিবেশ রক্ষার ধোঁয়া তুলে কাজ বন্ধের পাঁয়তারা করা হচ্ছে।
বাপা হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল জানান, আমার চাই সোনাই নদীর বুকে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করা হোক। পাশাপাশি সোনাই নদীকে বাঁচাতে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা জরুরি। তিনি জানান, তদন্ত কমিটির কাজ আমরা দেখেছি। কিন্তু সায়হাম ফিউচার কমপ্লেক্স নির্মাণকারীরা হলেন রাঘব বোয়াল। তারা এই কমপ্লেক্স নির্মাণের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিবকে। ফলে তার মাধ্যমে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আমরা মনে করি।