কাজিরবাজার ডেস্ক :
৫ জানুয়ারি রাজধানীতে শক্তি প্রদর্শন করবে বিএনপি। নগরীতে ১৬টি পয়েন্টে আওয়ামী লীগের সমাবেশ প- করে ঢাকা দখলের মাধ্যমে শক্তি প্রদর্শন করাই এখন বিএনপির মূল টার্গেট বলে জানা গেছে।
দলটির শীর্ষনেতৃবৃন্দ বলছেন, যেকোন মূল্যে ঢাকায় সমাবেশ করা হবে। সেদিন শেষ খেলার মাধ্যমে একটি পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে বিএনপির আন্দোলন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির নেতারা বলেন, ঢাকায় সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন এবং রাজপথ দখলই এখন বিএনপির আন্দোলনের অন্যতম মূল টার্গেট। এজন্য প্রস্তুতি নিতে ঢাকা মহানগর এবং তৃণমূল নেতাকর্মীদের গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে। এরমাধ্যমে সূচিত হবে সরকারের পতন বলে মনে করছেন নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির ২ জন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ঢাকার আন্দোলনে নেতৃত্বে পরিবর্তন ঘটবে। এখানে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে জামায়াত।
অন্যদিকে ছাত্রলীগকে মোকাবিলায় ছাত্রদল, যুবলীগকে মোকাবিলায় যুবদল এবং জোটের অন্যান্য দলগুলোও যার যার অবস্থান থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী নেমে আসবে রাজপথে। এর সাথে বিকল্প হিসেবে থাকছে সমাবেশে সরকারের বাধার প্রতিবাদে ৪৮ ঘন্টার হরতাল।
এদিকে সমাবেশ সফল করতে এসব পন্থার পাশাপাশি গ্রহণ করা হয়েছে নানা ধরণের উদ্যোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, ৫ জানুয়ারি সমাবেশ সফল করতে গত ২৩ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা মহানগরসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সাথে বৈঠক করেছেন। আর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে- যেকোন মূল্যে বিএনপি ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করবে। যদি সরকার সমাবেশে বাধা দেয় তাহলে ৪৮ ঘন্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এই বিষয়ে ২০ দলীয় জোট নেতাদের সঙ্গে বেগম জিয়া আলোচনা করেছেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ সফল করার বিষয়ে মূলত বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। একই সাথে সমাবেশের অনুমতি না দেয়া হলে ৭ ও ৮ তারিখ হরতালসহ বৃহত্তর কর্মসূচির ইঙ্গিত দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর এর জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
৫ জানুয়ারি সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্যে রাখার কথা রয়েছে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। একই সাথে সমাবেশ থেকে বেগম জিয়া জনসম্পৃক্ত বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন বলে বিএনপির হাইকমান্ড সূত্রে জানা গেছে।
এই বিষয়ে বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ৫ জানুয়ারি সমাবেশের জন্য আমরা ডিএমপিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখঅনে কাউকে পাইনি।
তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া না হলেও বিএনপি ঢাকায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে এবং রাজপথে থাকবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, আগামী ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিন’ উপলক্ষে বিএনপি ঢাকায় সমাবেশ করবে। ওই সমাবেশে বেগম খালেদা জিয়া জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি ঘোষণা করবে। আর ওই কর্মসূচি হবে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন। আর সেই জন্য বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে আগামী ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে মাঠে নামতে দেবে না সরকার। কারণ, বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে বলে সরকার আশঙ্কা করছে। এ কারণেই বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না বলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দিনটিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি পালন করতে মাঠে থাকবে।
এদিকে, সরকার অনুমতি না দিলেও সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’-এর কর্মসূচি পালনে সরকার বাধা দিলে ৬ ও ৭ জানুয়ারি হরতাল, অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে বলে বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন। এই কর্মসূচি লাগাতার করার চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারি বিএনপিকে কোনো কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেবে না সরকার। বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিলে সুযোগ নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। আর এ কারণেই প্রশাসনিকভাবে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। এ পরিস্থিতিতে মাঠে নামার চেষ্টা করলে বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ ব্যাপক আটক অভিযান চালানো হতে পারে বলে আরো জানিয়েছে সূত্রটি।
অপরদিকে, এদিন প্রশাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও মাঠে থাকছেন। ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ওই দিন ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালন করবে আওয়ামী লীগ। ওই দিন ঢাকার ১৬টি স্থানসহ সারাদেশে জেলা, উপজেলা পর্যায়ে মিছিল ও সমাবেশে করবে দলটি। বিএনপি যাতে মাঠে নামতে না পারে, সে জন্য রাজপথ দখলে রাখতে ১৬টি স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
এ কর্মসূচিকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং ঢাকার দলীয় এমপিদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এসব বৈঠক থেকে নেতাদের মাঠ দখলে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএনপি যাতে কোনোভাবেই মাঠে নামতে না পারে, সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ডিএমপি (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ) দেখছে। তারা যদি কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতি হতে পারে মনে করে, তাহলে সে বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। ওই দিন তো আওয়ামী লীগও ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালন করবে। একই দিনে দুটি দল কর্মসূচি পালন করতে চাইলে একটা সমস্যা তৈরি হতে পারে। কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হোক আমরা চাই না।
সমাবেশের অনুমতি না পেলেও বিএনপি সমাবেশ করবে বলে দলটির নেতাদের ঘোষণা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে স্বরাষ্ট্রপতিমন্ত্রী বলেন, কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করলে প্রশাসন তো অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, আমরা ১৫ দিন আগে কর্মসূচি দিয়েছি। আমরা সারা দেশে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন করবো। এখন যদি বিএনপি কোনো কর্মসূচি দিয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করে তবে ফল শুভ হবে না। সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইলে সরকার আছে। অবশ্যই সরকার এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক হয়েছে। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাদের হুমকীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সতর্ক হয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমেছে। জনতাকে সংগঠিত করে আমরা মাঠে থাকবো।
আমরা মাঠে থাকবো। কেউ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দেওয়া হবে।
৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি সরকার না দিলে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করা করা হবে বলে দলটি নেতারা জানিয়েছেন। যেভাবেই হোক সমাবেশ করা হবে বলে বিএনপির নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারি রাস্তায় নামলে দলের নেতাকর্মীদের রাস্তায় নামার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আহ্বাস।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাকর্মীদের কাছে এ নির্দেশ পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রটি জানায়।
এছাড়া শনিবার দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ৫ জানুয়ারি সরকার বাধা দিলে সারাদেশের নেতাকর্মীদের মাঠে নেমে ৬ ও ৭ জানুয়ারি রাজপথ দখলে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই দুই দিন হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এই কর্মসূচি অব্যাহত রাখারও চিন্তা-ভাবনা আছে বলে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শনিবার রাতে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে চেয়ারপার্সন অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে কৌশল নির্ধারণ ও দিকনির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে।
৫ জানুয়ারির কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলেন, অনুমতি না দিলেও আমরা সমাবেশ করবো। এটা আমাদের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা আশা করি, সরকার সমাবেশ করার অনুমতি দেবে। তবে তারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না। সমাবেশ ঠেকাতে ইতোমধ্যেই যুবলীগ, ছাত্রলীগকে নামিয়ে দিয়েছে। আমরাও প্রস্তুত, আমরা সমাবেশ করবো।